Type to search

Lead Story আন্তর্জাতিক

ভয়াবহ ক্ষুধার মুখে গাজার জনগোষ্ঠী

গাজার ২০ লাখ মানুষ ‘মারাত্মক পর্যায়ের ভয়াবহ খাদ্য অনিরাপত্তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে’ বলে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ব্লিনকেন ফিলিপিন্স সফরকালে ঐ সতর্কবার্তা দেন। এছাড়া জাতিসংঘ সংস্থাগুলোও বলছে, যুদ্ধ যদি না থামে এবং ত্রাণ সরবরাহ না বাড়ে তাহলে উত্তর গাজা আগামী মে মাসের মধ্যেই দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে পারে। এদিকে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা।

গাজা পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্লিনকেন বলেন, এই প্রথম গোটা জনগোষ্ঠী এমন গুরুতর পরিস্থিতিতে পড়েছে। যারা খাবারের জন্য মরিয়া হয়ে আছে তাদের তা সরবরাহ করাকে অগ্রাধিকার দিতে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানান ব্লিনকেন।

গাজার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহতা তুলে ধরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন এবারই সবচেয়ে জোরাল বার্তা দিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গাজার শতভাগ মানুষ মারাত্মক পর্যায়ের ভয়াবহ খাদ্য সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এও দেখছি যে, জাতিসংঘের হিসাবমতে, গাজার শতভাগ মানুষের মানবিক ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। যেখানে সুদানে প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের মানবিক ত্রাণসহায়তা প্রয়োজন এবং আফগানিস্তানে প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষের সহায়তা প্রয়োজন। সুতরাং, এ থেকেই গাজায় ত্রাণ সরবরাহ কতটা জরুরি এবং একে অগ্রাধিকার দেওয়া কতটা অপরিহার্য তা বোঝা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্লিনকেন মধ্যপ্রাচ্য সফর করবেন। ঐ অঞ্চলে অক্টোবরের পর থেকে এটি তার ষষ্ঠ সফর। গাজায় একটি যুদ্ধবিরতির চেষ্টা চলার মধ্যে ব্লিনকেন এই সফরে যাবেন। ইসরায়েলের আলোচকদের মঙ্গলবারেই গাজায় লড়াই বন্ধে হামাসের সঙ্গে নতুন করে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হতে আলোচনা শুরু করার কথা। গত পাঁচ মাস ধরে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন গাজার বাসিন্দারা। বাস্তবিক অর্থে এখনো সেখানকার সব মানুষ খাদ্যসহায়তার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে।

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় সেখানকার কৃষিজমি ও খাদ্য অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। খাদ্য সরবরাহ ট্রাক ঘিরে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত তদারকির কারণে ত্রাণসাহায্য মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে না বলে জানিয়েছে সাহায্য সংস্থাগুলো। জাতিসংঘ সংস্থাগুলো বলছে, যুদ্ধ যদি না থামে এবং ত্রাণ সরবরাহ না বাড়ে তাহলে উত্তর গাজা আগামী মে মাসের মধ্যেই দুর্ভিক্ষের মুখে পড়তে পারে।

বিশ্বে দুর্ভিক্ষের ঘোষণা দানকারী সংস্থা ‘দ্য ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন’ (আইপিসি) বলছে, গাজার জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক ইতিমধ্যেই অনাহারে আছে। বাকি যারা আছে, তারাও জুলাই মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে। খাবারের সংকট সবচেয়ে বেশি গাজার উত্তরাঞ্চলে। তিনটি জাতিসংঘ সংস্থা এবং কয়েকটি ত্রাণ সংগঠন নিয়ে গঠিত আইপিসি গত সোমবার পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে বলেছে, আশু ব্যবস্থা নেওয়া না হলে উত্তর গাজায় এখন থেকে আগামী মে মাসের মধ্যেই দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। ঐ অঞ্চলে লড়াইয়ের মধ্যে আটকা পড়ে আছে ৩ লাখ মানুষ।

দাতব্য সংস্থা পভার্টি চ্যারিটি কেয়ারের তথ্যমতে, সম্প্রতি কয়েক সপ্তাহে উত্তর গাজায় অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় অন্তত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের ২৩ জনই শিশু। গাজার হাসপাতালগুলো অনাহারে, অপুষ্টিতে থাকা শিশু দিয়ে ভরে উঠছে। গাজার রাফাহ নগরীর আল-আওদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গত সপ্তাহে রয়টার্সের সাংবাদিকরা মারাত্মকভাবে অপুষ্টির শিকার ১০ শিশুকে দেখতে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। পবিত্র রামজান মাসের শুরু থেকেই গাজার বাসিন্দারা মুখোমুখি হয়েছে নিষ্ঠুর বাস্তবতার। যে রমজান মাসে মুসলমানরা সারা দিন খাবার না খেয়ে রোজা রাখে, সেটিই এখন গাজাবাসীর সামনে দুর্ভিক্ষ হয়ে এসেছে।

এদিকে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে কানাডা। মঙ্গলবার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। একটি সরকারি সূত্রের বরাতে বুধবার এই খবর জানা যায়। অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কানাডাই শুধু ইসরায়েলকে যোগাযোগ সরঞ্জামের মতো ‘প্রাণঘাতী নয়’ এমন অস্ত্রের চালান রপ্তানি করেছে। তবে জানুয়ারি থেকে দেশটিতে কোনো রপ্তানি করা হয়নি বলে জানিয়েছে সূত্রটি। রেডিও কানাডার মতে, কানাডিয়ান অস্ত্র রপ্তানির শীর্ষ দেশ ছিল ইসরায়েল। দেশটি ২০২২ সালে ইসরায়েলে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার মূল্যের সামরিক সামগ্রী রপ্তানি করেছিল।

এর আগে, ২০২১ সালে দেশটি ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার মূল্যের রপ্তানি করে। মার্চে কানাডা সরকারের বিরুদ্ধে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি স্থগিত করার জন্য একটি অভিযোগ দায়ের করেছিল আইনজীবীদের একটি জোট এবং ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত কানাডিয়ানরা। তারা বলেছিল, কানাডা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় আইন লঙ্ঘন করছে। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে দ্বি-রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়ে সোমবার একটি প্রস্তাব পাশ করেছে কানাডার পার্লামেন্ট। এ বিষয়ে দ্য টরন্টো স্টার পত্রিকাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি বলেন, এটি একটি বাস্তব পদক্ষেপ।

এবিসিবি/এমআই

Translate »