দেশ ও জাতি ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কিছুই ভালো নেই। দেশ ও জাতি ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি। আজকে সমাজকে সম্পূর্ণভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। রাষ্ট্রকে ব্যর্থ বানাতে ধাক্কা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, যেই গণতন্ত্রের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, সেসব গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে আওয়ামী লীগ সরকার ধ্বংস করে ফেলেছে। আজকে এই ভয়াবহ দানবকে রুখতে না পারলে রাষ্ট্র কাঠামো ভেঙে যাবে। জাতি ও স্বাধীনতা তছনছ হয়ে যাবে।
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে (একাংশ) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের (একাংশ) এক ইফতার অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, আজকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নেই। এই গণবিচ্ছিন্ন সরকার সংবাদ মাধ্যমের যে অবস্থা তৈরি করেছে ইতিপূর্বে আর কখনো সেটা হয়নি। এখন আর সেন্সরশিপ লাগে না, সবাইকে সেলফ সেন্সরশিপ করতে হয়। সবাই ভাবেন যে, এটা লেখা যাবে কি যাবে না, আবার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে যেতে হবে কি না।
তিনি বলেন, অনেক সাংবাদিক আছেন যারা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে এখন পর্যন্ত ঝুলছেন। এবার জেলে গিয়ে দেখলাম, অনেক তরুণ এমনকি অপরিণত বয়স্ক ছেলেরাও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে আটক হয়েছে, জেলের মধ্যে আছে।
দেশের গণমাধ্যম ফ্যাসিবাদের ভয়াল গ্রাসে আক্রান্ত বলে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, যখন পত্র-পত্রিকার দিকে তাকাই, চ্যানেলগুলোর কথা শুনি, তখন মনে হয় এখানেও সেই ফ্যাসিবাদের ভয়াল গ্রাস থাবা দিয়েছে। একটি রাষ্ট্রে যখন ফ্যাসিবাদ সফল, তখনই সমগ্র সমাজের মধ্যে একটা ভীতি, একটা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়।
তিনি বলেন, এখন এমন একটা অবস্থা হয়েছে যে, এক হয়ে লড়াই করবেন তার সুযোগ রাখা হচ্ছে না। প্রেসক্লাবে বিভাজন হয়েছে, সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে। মৌলিক যে বিষয়টা- একটা গণতান্ত্রিক সমাজ বা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য একটা মুক্ত গণমাধ্যম দরকার, সেই বিষয়টাকে এরা বেমালুম চেপে দিয়েছে। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে এই গণবিচ্ছিন্ন সরকারের প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেন, সেই ভাষা কল্পনাও করতে পারি না। একটা সভ্য দেশের প্রধানমন্ত্রী এভাবে কথা বলতে পারেন না।
দেশের অবস্থাকে ‘ভয়াবহ’ অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজসহ পেশাজীবীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান জাতিকে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। এই সরকার আলেমদেরও রেহাই দিচ্ছে না। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর তাদের জেলে ভরে রাখা হয়েছে। এমনকি হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমসহ ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। ৩৫ লাখের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। এসব থেকে মুক্তির জন্য আমাদের একটাই পথ- সেটা হলো, এই সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করে জনগণের সরকার ও নতুন পার্লামেন্ট গঠন করতে হবে। আসুন ইস্পাত কঠিন ঐক্য নিয়ে আগামী দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে এগিয়ে যাই। যারা দেশের সবকিছুকে ধ্বংস করে ফেলেছে সেই সরকারকে হটাতে হবে।
বিএফইউজের সভাপতি এম আব্দুল্লাহর সভাপতিত্বে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলামের সঞ্চালনায় এতে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, বিএফইউজের মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
পরে বিএনপি মহাসচিব সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, আবদুল হাই শিকদার, এম এ আজিজ, কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ইলিয়াস খানসহ সাংবাদিক নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন।-সমকাল
এবিসিবি/এমআই