দেশে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ঘোষণা বিএনপির

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনাসহ খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ক্ষমতাসীন সরকারকে বাধ্য করার প্রত্যয় ঘোষণা করেছে বিএনপি।
রোববার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেলে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিজয় র্যালি শুরুর আগে এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
র্যালির উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকের এই র্যালি বাংলাদেশের জনগণের নতুন করে জেগে উঠার র্যালি। আজকের এই র্যালি বাংলাদেশের মানুষের নতুন করে সংগ্রাম শুরু করার র্যালি। আজকের এই র্যালি বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবার র্যালি। তাই আসুন, আজকে এই র্যালির মধ্যে দিয়ে আমরা সেই শুভ সূচনা করি। যে সূচনার মধ্যে দিয়ে আমরা খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারবো এবং তাকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারব। একইসাথে আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যিনি ১৯৭১ সালে একজন গিু মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাকে নির্বাসিত অবস্থা থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব।’
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা রয়েছে, সেগুলো প্রত্যাহার করিয়ে দেশের মানুষকে মুক্ত করে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা প্রতিষ্ঠা করতে পারব…. সত্যিকার অর্থে মানুষের অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে পারবো। আসুন সেই লক্ষ্যেই আমরা আমাদের র্যালির শুভ সূচনা করি।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘৫০ বছর আগে আমরা স্বাধীনতার যুদ্ধ করি একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, একটি মুক্ত স্বদেশ পাবো বলে, সেই যুদ্ধ করেছিলাম- আমাদের বাক-স্বাধীনতা থাকবে, আমাদের লেখার স্বাধীনতা থাকবে, সংগঠন করার স্বাধীনতা থাকবে এবং আমাদের সন্তানদের জন্য একটা বাসভূমি গড়ে তুলতে সক্ষম হব যেখানে কোন রকমের অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন ও দমননীতি থাকবে না। কিন্তু আজকে আমাদের কী দুর্ভাগ্য! আমরা কি অসহায় হয়ে পড়েছি?’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমালোচনায় তিনি বলেন, ‘আজকে এই ৫০ বছর পরে আমরা দেখছি, এমন একটি সরকার যারা জোর করে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তারা আজকে একাত্তরের সমস্ত চিন্তাভাবনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং চেতনাকে ধ্বংস করে দিয়ে তাদের গোটা জাতির ওপরে নির্যাতন-নিপীড়নের স্টিম রোলার চালিয়ে যাচ্ছে। তারা একে একে আমাদের অর্জিত সমস্ত অধিকারগুলো ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। আমাদের ভোটের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে এবং আমাদের লেখা ও বলার অধিকার কেড়ে নিয়েছে।’
বৃহত্তর আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজ বিজয় মিছিলের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয়ের যাত্রা শুরু হলো। স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে গণতšস্ল প্রতিষ্ঠা করে জনগণের সরকার গঠন করব। এই আমাদের অঙ্গীকার।’
র্যালিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, বিলকিস জাহান শিরিন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ মহানগর বিএনপির আমিনুল হক, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শ্যামা ওবায়েদ, রফিকুল আলম মজনু, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, যুবদলের সাইফুল আলম নীরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মোনায়েম মুন্না, জাকির হোসেন নান্নু, মাহবুবুল হাসান পিংকু, নুরুল ইসলাম নয়ন, মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্লাফিজুর রহমান, আব্দুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, সাত্তার পাটোয়ারী ছাড়াও অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে পূর্বঘোষিত বিজয় র্যালিকে সামনে রেখে সকাল ১০টা থেকেই নেতাকর্মীরা নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। বেলা ১২টায় নয়া পল্টনের নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে থেকে ফকিরাপুল বাজার পর্যন্ত সড়ক ভরে যায় হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থকের মিছিলে।
এই দীর্ঘ সড়কে ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মিছিল মিছিলে নয়া পল্টনে এলাকা জনসমুদ্রে রুপ নেয়। নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে ছিলো লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা এবং জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি সম্বলিত প্ল্যাকার্ড।
এসময়ে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। বিএনপিসহ ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা লাল-সবুজসহ বিভিন্ন ধরণের ক্যাপ, গেঞ্জি পরিধান করে, অনেকে মাথায় ব্যান্ড পরে, ঢাক-ঢোল ও বাশি বাজিয়ে বাদ্যের তালে তালে নেচে গেয়ে পরিবেশকে উৎসবমুখর করে রাখেন। অনেক নেতাকর্মীর গায়ে ছিল কালো কাপড় এবং গলায় ছিল প্রতীকী শিকল।
র্যালির সামনের দিকে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড়-বড় ছবি প্রদর্শন করা হয়। র্যালিতে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রতীকী অবস্থান নিয়ে রামপুরা থানা বিএনপির এক নারী নেত্রী অংশ নেন।
রোববার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ র্যালি শুরু হয়ে কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড় ঘুরে ফকিরাপুল মোড় দিয়ে আবার দলীয় কার্যালয়ে সামনে এসে শেষ হয়।
বিএনপির এ কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ছিল। দুপুর থেকে শোভাযাত্রা উপলক্ষে নয়া পল্টনের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে পুলিশ। ফলে কাকরাইল, মালিবাগ, বিজয়নগর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের।-সমকাল
এবিসিবি /এমআই