Type to search

Lead Story সারাদেশ

কুরআন অবমাননার ঘটনায় কঠোর সতর্কতার মধ্যেও বিচ্ছিন্ন সহিংসতা

কুমিল্লার ঘটনার পর সরকারের কঠোর অবস্থানের মধ্যেও শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু সহিংস ঘটনা ঘটেছে। তবে দেশব্যাপীই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সতর্ক নজরদারি লক্ষ্য করা গেছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আটক অভিযানও শুরু হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর ঢাকায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারম থেকে একদল মুসল্লী বিক্ষোভ মিছিল করে। মিছিলটি কাকরাইল মোড়ে গেলে বাধা পেয়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ছাড়া সংঘর্ষে বিক্ষোভকারীদের ১০ জন আহত হন। তাদের মধ্যে চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে কয়েকটি মন্দিরে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। এর জেরে প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। উচ্ছৃংখল লোকজনকে বাধা দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

গত বুধবার কুমিল্লায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে নানুয়া দীঘির পাড়ে একটি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রশাসন ও পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত করতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এরপর দেশের আরও বিভিন্ন এলাকায় পূজামণ্ডপ ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় শনিবার কুমিল্লার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি বিজিবির টহল অব্যাহত রয়েছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাধারণ লোকজন নিয়ে সর্তক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। জুমা নামাজের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সহিংসতাবিরোধী মিছিল করা হয়েছে।

কুমিল্লার ঘটনার জেরে শুক্রবার দিনভর রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সর্তক অবস্থান ছিল। বিকেল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার পুজামণ্ডপ থেকে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতীমা বিসর্জন দিয়েছেন সনাতন ধর্মালম্বীরা। বিজয়নগর ও কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড়ে ‘মালিবাগ মুসলিম সমাজ’ ব্যানারে একদল বিক্ষোভকারীর সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার মো. আ. আহাদ বলেন, মিছিলটি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

নোয়াখালীতে শুক্রবার দুপুর ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীর বিভিন্ন মন্দিরে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব ঘটনাস্থল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বেগমগঞ্জের চৌমুহনী বাজারের কয়েক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, দুপুর ২টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ১৫-২০ হাজার লোক বাজারে ঢোকে। তারা চৌমুহনী-ফেনী রোড, চৌমুহনী সরকারী এস এ কলেজ রোড, ব্যাংক রোড, রাম ঠাকুর আশ্রম এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে খুঁজে খুঁজে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভাংচুর করে। এ সময় তারা বেশ কয়েকটি মন্দির, পূজা মন্ডপ ও বাড়িঘরে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। বিজয়া দূর্গামন্দিরে হামলায় যতন সাহা (৩৮) নামের এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান। যতন সাহা নরসিংদী থেকে চৌমুহনীতে তার বোনের বাড়িতে বেড়াতে গেছিলেন।

সনাতন ধর্মের নেতাসহ স্থানীয়রা দাবি করছেন, হামলার সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ ও বিজিবি ছিলো না। যদিও ঘটনার পর তারা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে।

বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অসীম কুমার পাল জানিয়েছেন, চৌমুহনীতে হামলার ঘটনায় আহত ১৮ জনকে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে যতন সাহাকে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মোহিউদ্দিন আবদুল আজিম জানান,চৌমুহনীর ঘটনায় ৪ পুলিশসহ ৬ জনকে হাসপাতালে জরুরী বিভাগে নেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে যতন সাহা নামের একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামছুন নাহার বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।

র‌্যাব-১১ এর একটি ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: শামীম বলেন, হামলার খবর পেয়ে দ্রুতই তারা ঘটনাস্থল পৌঁছেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

কুমিল্লায় গত বুধবারের ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত কুমিল্লায় ৬টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অন্তত ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পুলিশ ৪২ জনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে।

কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার ফারুক আহমেদ সমকালকে বলেন, পুলিশ ছাড়াও গোটা এলাকায় র‌্যাব ও বিজিবির টহল রয়েছে। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, গোটা জেলায় শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিমা বিসর্জন হয়েছে। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিজিবির টহল থাকবে।

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মন্দিরে হামলা ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করেছে। এসব মামলায় আড়াই হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

হাজীগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ জানান, তারা আসামিদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ভুক্তভোগী কেউ বাদি হয়ে মামলা করতে চাইলে পুলিশ সেই মামলাও নেবে।

চট্টগ্রামে শুক্রবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগরের যাত্রা মোহন সেন (জেএমসেন) হল পূজামণ্ডপে হামলার চেষ্টা করা হয়েছে। অবশ্য পূজামণ্ডপের স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশের বাধায় তারা ভেতরে ঢুকতে পারেনি। ওই সময় পুলিশের সঙ্গে হামলাকারিদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে।

হামলা চেষ্টার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিমা বিসর্জন না করার সিদ্ধান্ত নেয় পূজা উদযাপন পরিষদ। পরে সেই অবস্থান থেকে সরে আসেন তারা। ওই ঘটনার পর শনিবার আধাবেলা হরতাল কর্মসূচির ঘোষণাও দিয়েছিলেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ নেতা রানা দাশগুপ্ত। তবে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস পাওয়ার পর বিকেল পৌনে ৫টার দিকে প্রতিমা বিসর্জন কার্যক্রম শুরু হয় এবং হরতালের কর্মসূচিও প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।

সিলেটে শুক্রবার দুপুরে একটি মিছিল নিয়ে এসে ভাটিবাংলা অগ্রদূত যুব সংঘের মন্ডপে হামলা চালানো হয়। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পুলিশের বাঁধায় ফিরে যাওয়ার সময় তারা পূজামন্ডপের আশপাশের হিন্দুদের কয়েকটি বাসায় হামলা ও ভাংচুর চালায়।

মহানগর পুলিশের জালালাবাদ থানার ওসি নাজমুল হুদা খান বলেন, মসজিদ থেকে মিছিল নিয়ে এসে একদল লোক মণ্ডপকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার করগাও ইউনিয়নে বৃহস্পতিবার রাতে পূজামণ্ডপের সামনে পুলিশ ও স্থানীয়দের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। ওই ঘটনার পর শুক্রবার হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাম, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মফিজ উদ্দিনসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহিউদ্দিন জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।-সমকাল

এবিসিবি/এমআই

Translate »