ইউরোপে তীব্র গরমে ২০ হাজার মানুষের মৃত্যু
ইউরোপের দেশ ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন ও ব্রিটেনে এই গ্রীষ্মে তীব্র গরমে ২০ হাজার অতিরিক্ত মানুষ মারা গেছেন। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে প্যারিস থেকে লন্ডন পর্যন্ত তাপমাত্রা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি ছিল। ওয়ার্ল্ড ওয়েদার অ্যাট্রিবিউশন গ্রুপের জলবায়ু বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ছাড়া এ ধরনের উচ্চ তাপমাত্রা কার্যত অসম্ভব।
উচ্চ তাপমাত্রা মৃত্যুর একটি বড় কারণ বলে জানা গেছে। অতিরিক্ত গরমের ফলে মানুষের মধ্যে হিটস্ট্রোক হতে পারে, যার ফলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ক্ষতি হতে পারে। অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা বা হৃদরোগের মতো অবস্থাকে আরও জটিল করে তোলে।
ইউরোপে ২০০৩ সালে তাপপ্রবাহের ফলে মহাদেশ জুড়ে প্রায় ৭০ হাজার জন মারা গিয়েছিলেন। বিশেষ করে ফ্রান্সে এই সংখ্যা ছিল বেশি। ফলস্বরূপ, অনেক দেশ প্রাথমিক সতর্কতা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য স্ক্রীনিং ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্কুলের মতো ব্যবস্থা প্রয়োগ করেছে।
অস্ট্রিয়ার গ্রাজ ইউনিভার্সিটির হিটওয়েভ গবেষক ক্লোই ব্রিমিকম্ব জানান, এসব কর্ম পরিকল্পনা ২০২২ সালে তাপপ্রবাহের প্রভাব কিছুটা কমিয়ে দিতে পারে, তবে মৃতের সংখ্যা এখনও বেশি। এটি ২০০৩ সাল থেকে উষ্ণতম বছর ছিল।
অস্ট্রিয়ার গ্রাজ ইউনিভার্সিটির হিটওয়েভ গবেষক ক্লোই ব্রিমিকম্ব
মৃত্যু সনদে স্পষ্টভাবে তাপ উল্লেখ না করলে তা মৃত্যুর নির্দিষ্ট কারণ কিনা তা অবিলম্বে জানার খুব কম উপায় রয়েছে। কিন্তু পরিসংখ্যানবিদরা একটি অনুমান করতে অতিরিক্ত সূত্র ব্যবহার করেন।
সেই সূত্র হচ্ছে, ঘটে যাওয়া মৃত্যুর সংখ্যা ও ঐতিহাসিক প্রবণতার ওপর ভিত্তি করে প্রত্যাশিত সংখ্যার মধ্যে যে পার্থক্য তা বের করা। এটিকে ‘হার্ভেস্টিং ইফেক্ট’ বলা হয়।
ইউরোপ গত তিন দশকে বাকি বিশ্বের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি উষ্ণতা ছিল
এর মাধ্যমে মৃত্যুহার স্থানচ্যুতি এমন একটি ঘটনা যেখানে অতিরিক্ত মৃত্যুর সময়কাল (অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মৃত্যু) ও মৃত্যু কম হওয়ার সময়কাল (অর্থাৎ স্বাভাবিকের চেয়ে কম মৃত্যু) নির্দেশ করে। এটি মূলত পরিবেশগত ঘটনা যেমন তাপমাত্রা, ঠাণ্ডা আবহাওয়া, মহামারি, দুর্ভিক্ষ বা যুদ্ধের কারণে ঘটে থাকে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা চলতি মাসে জানায়, ইউরোপ গত তিন দশকে বাকি বিশ্বের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি উষ্ণতা ছিল। অপরদিকে, কোপার্নিকাস জলবায়ু পরিবর্তন সার্ভিস জানিয়েছে, ২০২২ সালে রেকর্ড পরিমাণে উষ্ণতা ছিল গ্রীষ্মকালে।
২০২২ সালে রেকর্ড পরিমাণে উষ্ণতা ছিল গ্রীষ্মকালে
পশ্চিম ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্সে এবার অতিরিক্ত মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় অর্ধেক, মোট ১০ হাজার ৪২০জন। ব্রিটেনের পরিসংখ্যান অফিস জানিয়েছে, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে গ্রীষ্মকালে এবার অতিরিক্ত ৩ হাজার ২৭১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্পেনে গত জুন ও আগস্টের মধ্যে অতিরিক্ত মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৬৫৫ জনের। জার্মানির স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, প্রচণ্ড গরমে দেশে আরও সাড়ে চার হাজার মৃত্যু হয়েছে।
এবিসিবি/এমআই