আইসিসির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে আমেরিকা
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি যদি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে, তবে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে বলে আভাস মিলেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের এক বক্তব্য থেকে এ আভাস পাওয়া যায়। এ পরিস্থিতিতে নরওয়ে বলেছে, আইসিসি পরোয়ানা জারি করলে তারা দেশে প্রবেশমাত্র নেতানিয়াহুকে গ্রেপ্তার করবে।
বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেন বলেছেন, ইসরায়েলের নেতাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাওয়া আইসিসির প্রসিকিউটরদের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা জারি নিয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তাতে তিনি মার্কিন আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে একত্রে কাজ করবেন। কংগ্রেসের এক শুনানিতে তিনি বলেন, ‘সম্পূর্ণ ভুল এ সিদ্ধান্তের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি ‘প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’।
তাঁর এ ঘোষণা এমন সময় এলো যখন আইসিসি কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য রিপাবলিকানদের চাপ বাড়ছে। খুব তাড়াতাড়ি, হয়তো এ সপ্তাহেই এ বিষয়ে ভোট হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র আইসিসির সদস্য দেশ নয়। কিন্তু ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সিদ্ধান্তের সময় আইসিসির কৌঁসুলিদের সমর্থন করেছে দেশটি।
মঙ্গলবার শীর্ষ রিপাবলিকানদের একজন জেমস রিশে সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটিতে ব্লিংকেনকে প্রশ্ন করেন, তিনি ইসরায়েল ইস্যুতে আইসিসির নাক গলানোকে পছন্দ করবেন কিনা। জবাবে ব্লিংকেন বলেন, ‘আমরা দলমত নির্বিশেষে আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। এটা করতে আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
গত সোমবার আইসিসির প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ারি জারির আবেদন করেছেন বলে জানান। হামাসের তিন নেতা– ইয়াহিয়া সিনওয়ার, মোহাম্মদ দাইফ ও ইসমাইল হানিয়ার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চেয়েছেন বলে জানান তিনি। এরই মধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, এ গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আবেদন ‘আপত্তিকর’।
ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ নিয়ে এ আদালতের তদন্তের পরিধি বাড়ায় কংগ্রেসে আইসিসির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের অন্তত দুটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এ মাসের শুরুতে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, আইসিসির যেসব কর্মকর্তা এ মামলার সঙ্গে জড়িত, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে তাদের যে কোনো ভিসা প্রত্যাহার ও দেশের ভেতরে তাদের যে কোনো সম্পত্তি লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে। এটা চলবে যতক্ষণ পর্যন্ত আইসিসি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না করে। রিপাবলিকান হাউসের অন্তত ৩৭ আইনপ্রণেতা এ প্রস্তাব সমর্থন করেন। তাদের মধ্যে রিপাবলিকান চেম্বারের তৃতীয় সর্বোচ্চ র্যা ঙ্কিংয়ের এলিস স্টেফানিকও রয়েছেন।
সম্প্রতি স্টেফানিক নতুন করে ইসরায়েল সফর করেন। সেখানে তিনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ও নেসেটে বক্তব্য দেন। তিনি কড়া ভাষায় আইসিসির সমালোচনা করেছেন। প্রস্তাবটির সমর্থনকারী আরেক রিপাবলিকান কেন্টাকির অ্যান্ডি বার বলেন, আইসিসিকে নিষেধাজ্ঞা দিতে পরিপূর্ণভাবে কাজ করতে হবে। তবে ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতারা এ প্রচেষ্টার পেছনে থাকবেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।
দ্য ফিলিস্তিন ক্রনিকল অনলাইন জানায়, আইসিসি যদি নেতানিয়াহু ও গ্যালান্টের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন, তবে নরওয়েতে প্রবেশমাত্র তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে নরওয়েই হলো প্রথম কোনো ইউরোপীয় দেশ যারা এ গ্রেপ্তারের ঘোষণা দিল।
রাফার আরও ভেতরে ইসরায়েলের ট্যাঙ্ক
দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, বুধবার গাজার রাফার আরও অনেক ভেতরে প্রবেশ করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর ট্যাঙ্ক। সেই সঙ্গে তারা সেখানে বোমা ও গোলা দিয়ে হামলা অব্যাহত রেখেছে। রাফার বাসিন্দারা জানান, মঙ্গলবার রাতভর ট্যাঙ্ক, ড্রোন, হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমান ও বন্দুক হামলা হয়েছে।
এক দিনে আরও ৬২ জন নিহত
আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েলের হামলায় এক দিনে আরও ৬২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৩৮ জন। ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত মারা যান ৩৫ হাজার ৭০৯ জন। আহত হয়েছেন ৭৯ হাজার ৯৯০ জন। গাজায় হতাহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।
এবিসিবি/এমআই