দেনমোহরে নারীর মর্যাদা

দেনমোহর বিয়ের অন্যতম শর্ত। স্বামীর জন্য বাধ্যতামূলক কর্তব্য এবং ফরজ বিষয়। বিয়ের বন্ধন উপলক্ষে স্বামী তার স্ত্রীকে বাধ্যতামূলক যে অর্থ, সোনা-রূপা কিংবা স্থাবর সম্পদ দিয়ে থাকেন, তাই দেনমোহর। মোহর নিয়ে শৈথিল্য গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজে এমন অনেকে আছেন, যারা নামাজ-রোজা-হজ-জাকাত সম্পর্কে ধারণা রাখলেও মোহরের বিষয়টি নিয়ে সচেতন নন। সে কারণে দেখা যায়, মোহরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে চরম বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি পরিলক্ষিত হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নারীদের মোহর আদায় করো।’ (সুরা নিসা : ৪)
বিয়েকে স্মরণীয় রাখতে কিংবা উদারতা দেখাতে গিয়ে অনেকে ১ টাকা দেনমোহর বা নামমাত্র অঙ্কে দেনমোহর নির্ধারণ করে বিয়ে করার কৃতিত্ব দেখিয়ে থাকেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কেননা আল্লাহ তায়ালা পুরুষদের সম্পদ ব্যয়ের মাধ্যমে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়েছেন। বিয়েতে অনেক মোটা অঙ্কের মোহর ধার্য করা যেমন কাম্য নয়, তেমনি তা একেবারে তুচ্ছ ও সামান্য হওয়াও উচিত নয়। মোহরের পরিমাণ এমন হওয়া চাই, যা সাধারণত আগ্রহের বিষয় হয় এবং নারীর জন্য অর্থনৈতিক শক্তি ও সম্মানের বিষয় হয়। নবীজির (সা.) সুন্নত ও সাহাবায়ে কেরামের সাধারণ রীতি এ ক্ষেত্রে উত্তম আদর্শ। হজরত আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান বলেন, আমি উম্মুল মুমিমিন আয়েশাকে (রা.) জিজ্ঞাসা করলাম, নবীজি (সা.) কী পরিমাণ মোহর দিয়েছেন? তিনি বলেন, ‘নবীজি (সা.) তার স্ত্রীদের সাড়ে বারো উকিয়া অর্থাৎ পাঁচশ দিরহাম মোহর দিয়েছেন।’ (মুসলিম : ১৪২৬; আবু দাউদ : ২১০৫)
মোহর আসলে একটি সম্মানি, যা স্বামী তার স্ত্রীকে দিয়ে থাকেন। যার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে নারীকে সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া। এটা নারীর মূল্য নয় যে, তা পরিশোধ করলেই মনে করা যাবে যে, নারী নিজেকে স্বামীর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে। শরীয়তের উদ্দেশ্য হচ্ছে- যখন কোনো পুরুষ স্ত্রীকে ঘরে আনবে তখন তাকে মর্যাদার সঙ্গে আনবে এবং এমন কিছু উপহার দেবে, যা তাকে সম্মানিত করে এবং অনাকাক্সিক্ষত কারণে স্বামী বিয়োগ হলে যেন জীবিকার ব্যবস্থা হয়। তবে ইসলামের নির্দেশনা হচ্ছে- মোহর এত অল্প নির্ধারণ না করা, যাতে মর্যাদার কোনো ইঙ্গিত না থাকে। আবার এত অধিকও নির্ধারণ না করা, যা পরিশোধ করা স্বামীর পক্ষে সম্ভব না হয়।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের সময় প্রত্যেক নারীর প্রকৃতিগত অধিকার হচ্ছে ‘মোহরে মিসল’। অর্থাৎ ওই নারীর বংশে তার মতো অন্যান্য নারীদের সাধারণত যে মোহর নির্ধারণ করা হয়েছে সেটা তার জন্য মোহরে মিসল। যদি তার নিজের বংশে তার মতো আর কোনো নারী না থাকে, তাহলে নিকটবর্তী বংশে তার সমপর্যায়ের নারীদের যে মোহর সাধারণত নির্ধারণ করা হয় সেটাই তার মোহরে মিসল। এ কারণেই যদি মোহরের আলোচনা ছাড়া বিয়ে হয়ে যায় কিংবা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে মোহর নির্ধারিত না হয় তা হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্বামীর ওপর স্ত্রীকে মোহরে মিসল প্রদান করা অবধারিত হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে হাদিসের নির্দেশনা লক্ষণীয়, আল্লাহর রসুল (সা.) বলেছেন, ‘দশ দিরহামের কম কোনো মোহর নেই।’ (বায়হাকি : ৭/২৪০)। তবে স্ত্রী যদি স্বেচ্ছায় মোহর মাফ করেন সেটা ভিন্ন বিষয়। কিন্তু মোহর নির্ধারণ করা স্বামীর জন্য অবশ্য কর্তব্য। শরীয়তের সীমারেখা কর্তন বা কাটছাঁট করা মূলত ইসলামকে হালকা করারই নামান্তর। আল্লাহ তায়ালা বোঝার ও আমল করার তাওফিক দিন।