জার্মানিতে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নির্বাসিত কবি দাউদ হায়দার
চার দশক ধরে বিদেশে নির্বাসনে থাকা কবি দাউদ হায়দার জার্মানির বার্লিনের একটি হাসপাতালে জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন। গত ১২ই ডিসেম্বর বার্লিন শহরের বাসার সিঁড়িতে পড়ে যান তিনি। সেখান থেকে উদ্ধার করে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালের আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। দেশে থাকা কবির পরিবারের একজন সদস্য, জার্মানিতে থাকা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু-স্বজন এবং বার্লিনের বাংলাদেশ দূতাবাস মধ্যরাতে মানবজমিনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
কবির ছোট ভাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফ হায়দার ওই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপে বলেন, যেটুকু জানা গেছে, বাসার সিঁড়িতে অচেতন অবস্থায় পড়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে কে বা কারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়েছে। চারদিনেও তার জ্ঞান ফিরেনি। কবির ঘনিষ্ঠ বন্ধু জার্মান প্রবাসী মাইন চৌধুরী পিটু জানান, গত ১২ই ডিসেম্বর থেকে দাউদ হায়দারের সেলফোনে কল করছিলেন তিনি। রিং হয় কিন্তু কেউ রিসিভ করেনি। এটা তাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে। উদ্বিগ্ন অবস্থায় তিনি কবির বার্লিন শহরের Reinickendorf এলাকার বাসায় যান। পৌঁছে দেখেন বাসা তালাবদ্ধ। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক পুলিশের নোটিশে আনেন। পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের নির্দেশে রেসকিউ টিম দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি ‘নিখোঁজ’ মর্মে পুলিশকে ছবি এবং শনাক্তকরণে সহায়ক তথ্যাদি সরবরাহ করে গত ১৫ই ডিসেম্বর থানায় রুটিন মামলা হয়। সেই মামলার সূত্র ধরে আজ জার্মান পুলিশের অনুসন্ধানে বাসস্থান থেকে বহুদূরের একটি হাসপাতালে নাম-পরিচয়হীন অবস্থায় ভর্তি থাকা দাউদ হায়দারের সন্ধান মিলে। তার সঙ্গে ৩৩ বছরের ঘনিষ্ঠতার কথা জানিয়ে মিস্টার চৌধুরী বলেন, আমি অল্প আগে তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়ে ছিলাম। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ম্যাসিভ স্ট্রোক করেছেন তিনি। মাথায় রক্তক্ষরণ হয়েছে অনেক, পাঁজরেও আঘাত পেয়েছেন। আমরা এখন জেনেছি তিনি বাসার বাইরের সিঁড়িতে পড়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী (অজ্ঞাত) হৃদয়বানরা তাকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নেন। সেখান থেকে তাকে পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বর্তমান হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কবি দাউদ হায়দার এখন আর্টিফিশিয়াল কোমায় রয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, মেশিনের সাহায্যে তাকে কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। চিকিৎসকরা তার বেঁচে থাকার আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন। আইসিইউতে আমি যেটা দেখলেন তিনি জাস্ট পড়ে আছেন। জার্মান প্রবাসী কবির স্বজন দুলাল উলফাত ( জসিম )
বলেন, চিরকুমার দাউদ হায়দারের আগে থেকেই একাকিত্বসহ বয়সজনিত নানা জটিলতা রয়েছে। জীবনের এই কঠিন সময়ে কবির জন্য দোয়া চেয়েছেন তিনি।১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পাবনায় জন্ম নেয়া দাউদ হায়দারের বহু পরিচয় রয়েছে। একাধারে তিনি কবি, লেখক এবং সাংবাদিক। তীব্র গণআন্দোলনের মুখে ১৯৭৪ সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। প্রথম ১৩ বছর ভারতে এবং ১৯৮৭ সাল থেকে তিনি জার্মানিতে নির্বাসিত জীবন যাপন করছেন। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ‘৭৪ এর ২৪ শে ফেব্রুয়ারি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় তার কবিতা “কালো সূর্যের কালো জ্যোৎস্নায় কালো বন্যায়” প্রকাশিত হয়। এরপর তার বিরূদ্ধে আদালতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের জন্য মামলা হয়। দেশব্যাপী শুরু হয় আন্দোলন। ১১ই মার্চ ১৯৭৪ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। দু’মাসে মাথায় (২১শে মে ৭৪ই) তৎকালিন সরকার তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করে।
মানবজমিন