ঢামেকের আউটডোর বন্ধ, জরুরি বিভাগে উপচেপড়া ভিড়
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় ঢাকা কর্মবিরতি স্থগিত হয়েছে। এতে হাসপাতালের সব বিভাগ চালু হলেও বন্ধ আছে আউটডোর (বহির্বিভাগ)। সেখানে নেই কোনো চিকিৎসক। ফলে জরুরি বিভাগে রোগীদের চাপ বেড়েছে কয়েক গুন। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ঢামেক হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায় এমন দৃশ্য।
সোমবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, জরুরি বিভাগের সামনে সকাল থেকে সেনাবাহিনী পাহারা দিচ্ছে। হাসপাতালের ভেতরে সেনা-বিজিবির পাহারায় চিকিৎসা চলছে। বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। রোগীরা এসে বাইরে অপেক্ষা করছেন কাউন্টার খোলার। অনেকে সেবা বন্ধ আছে জানতে পেরে চলে যাচ্ছেন। যাদের বেশি প্রয়োজন, তারা জরুরি বিভাগে দেখাচ্ছেন।
এদিকে আউটডোর বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগের টিকিট পেতে রোগীদের লম্বা লাইন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই আউটডোরে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তবে তা বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগে ভিড় করছেন।
ভোলা থেকে আজ হাসপালাতে সেবা নিতে এসেছিলেন কাউসার মিয়া। তিনি বলেন, ভোলা থেকে সকালে এসেছি ডাক্তার দেখাতে। এসে দেখি কাউন্টার বন্ধ। ডাক্তার নাকি রোগী দেখবে না। গরিব মানুষ, প্রাইভেটে ডাক্তার দেখানোর স্বামর্থ নাই। আবার ইমার্জেন্সিতে নাকি আমাদের মতো রোগীদের দেখবে না।
নাকের সমস্যা নিয়ে ভাগনি শিশু জান্নাতকে নিয়ে মুন্সিগঞ্জ থেকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসেছিলেন সাথী আক্তার। আউটডোর বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি জানান, গত কয়েক দিন ধরে নাকের ব্যথায় ভুগছে জান্নাত। সকালে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে এসে দেখেন আউটডোর বন্ধ। উপায়ান্ত না পেয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
বহির্বিভাগের তথ্যকেন্দ্রের কর্মচারী আহাদ হোসেন জানান, বহির্বিভাগে কোনও চিকিৎসক বসেননি। তাই বহির্বিভাগের টিকিট কাউন্টার বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে জরুরি বিভাগের টিকিট কাউন্টারের ইনচার্জ মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, সকাল ৮ থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ৫৫০ জন টিকিট নিয়েছে। এ পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে অর্ধশত, যা আগে কখনো হয়নি। আউটডোর বন্ধ থাকায় জরুরি বিভাগে রোগীর চাপ বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, রোগীদের চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। জরুরি বিভাগে সব সময় জরুরি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। পুরোনো রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয় আউটডোরে। আউটডোর বন্ধ থাকায় সবাই জরুরি বিভাগে ভিড় করছেন।
এর আগে শনিবার সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক শিক্ষার্থীর চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হট্টগোল হয়। ওই রাতে তিন দফায় চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও মারধরের প্রতিবাদে রাতেই কাজ বন্ধ করে দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তখন থেকেই সেখানে চিকিৎসা সেবার অচলাবস্থা শুরু।
এরপর রোববার ঢাকা মেডিকেলের অন্য চিকিৎসকরাও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের এই কর্মবিরতিতে সংহতি জানান। এ অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসার সব বিভাগে সেবা বন্ধ হয়ে যায়। তৈরি হয় চরম চিকিৎসা সংকট। সন্ধ্যায় সংকট নিরসনে হাসপাতালের ছয় চিকিৎসকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। বৈঠকে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন চিকিৎসকরা।
-ইত্তেফাক