তারেক রহমানের প্রশংসা করে পোস্ট, তোপের মুখে চিত্রনায়ক জয়
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে হঠাৎ প্রশংসা ও দেশে ফেরার আহ্বান জানিয়ে চিত্রনায়ক জয় চৌধুরীর ফেসবুক পোস্টে তার সমসাময়িক অনেকেই বিভ্রান্ত। কারণ বিএনপি নিয়ে তিনি আগে কখনোই কোনো কথা বলেননি। জয় চৌধুরীর চলাফেরা ও ওঠাবসাও ছিল আওয়ামী ঘরানার সবার সঙ্গে।
তাই তো ফেসবুক অনুসারীদের কেউ কেউ জয় চৌধুরীর উদ্দেশে মন্তব্যে লিখেছেন, ‘হঠাৎ সুর বদলানো বন্ধ করেন।’ কেউ বলছেন, ‘নতুন করে সুবিধা নিতেই এমন ফেসবুক পোস্ট করেছেন তিনি’। শুধু তা–ই নয়, জয় চৌধুরীর দীর্ঘদিনের সহকর্মী আরেক অভিনেতা সাইফ খান পোস্টের মন্তব্যের ঘরে জয় চৌধুরীর আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার স্ক্রিনশট প্রকাশ করেছেন। এসব নিয়ে সোমবার রাত থেকে তোপের মুখে জয় চৌধুরী।
‘প্রেম প্রীতির বন্ধন’, ‘অমানুষ হলো মানুষ’, ‘আজব প্রেম’সহ বেশ কয়েকটি সিনেমায় অভিনয় করেছেন জয়। শেষবার চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসের সঙ্গে পর্দায় দেখা গেছে তাকে। কিন্তু সেই সিনেমাও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। ক্যারিয়ারে সিনেমা দিয়ে আলোচনায় না এলেও শিল্পী সমিতির নির্বাচন এবং পরবর্তী সময়ে সাংবাদিকের গায়ে হাত তোলার কারণে আলোচনায় আসেন জয় চৌধুরী।
চলচ্চিত্র অভিনেতাদের কেউ কেউ জানান, জয় আরেক সমালোচিত চিত্রনায়ক জায়েদ খানের সমর্থক। জায়েদ খানের একনিষ্ঠ ছোট ভাই হিসেবেও তিনি বিভিন্ন মহলে পরিচিত। জয় চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা–কর্মীর সঙ্গে এমনকি বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও দেখা গেছে। নির্বাচনি প্রচারণা থেকে শুরু করে, বিভিন্ন সময় মুজিব কোট পরিহিত অবস্থায় আওয়ামী লীগের র্যালিসহ নানা আয়োজনে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন।
সেই জয় চৌধুরী সোমবার রাতে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তারেক রহমান, আপনি স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সুযোগ্য সন্তান। আপনি সংস্কৃতিবান্ধব তারুণ্যের অহংকার, গণমানুষের নেতা। সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দ্রুত ফিরে আসুন আমাদের মাঝে, আপনার অপেক্ষায় প্রিয় বাংলাদেশ।
হঠাৎ করে তারেক রহমানকে নিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্টের কারণে অনেকেই জয় চৌধুরীকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। অবাক হয়েছেন এই অভিনেতার দীর্ঘদিনের সহকর্মীরাও।
সাইফ খান নামের একজন জানান, এই জয় চৌধুরীকে তিনি ক্যারিয়ারের শুরু থেকে চেনেন। বিভিন্ন সময় তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। তাকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যেত। সাইফ বলেন, ‘একজন শিল্পীর মতাদর্শ আলাদা থাকতেই পারে, তার সঙ্গে শ্রদ্ধা–ভালোবাসা জড়িত। কিন্তু হঠাৎ করে জয়ের রূপ বদলে হতবাক হয়েছি। এটা কীভাবে সম্ভব! সবাই জানে, সে মুজিব কোট পরে সুবিধা নিয়েছে। দলের বিপদের মুহূর্তে কীভাবে খোলস বদলাতে পারে! রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে একের পর এক সুবিধা নিয়ে এখন ভোল পাল্টানো, বিষয়টা মোটেও সুবিধার মনে হচ্ছে না।’
এ সময় সাইফ আরও জানান, তিনিও আওয়ামী লীগ সমর্থন করেন। কিন্তু কখনোই সুবিধা নেননি। কিন্তু জয় গোপনে নয়, প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ থেকে সুবিধা নিয়েছেন। বিভিন্ন র্যালি থেকে শুরু করে দলীয় বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নিয়ে আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন। সরকারি অনুদানের সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন। সাইফ বলেন, ‘তার উচিত নুন খেয়ে গুণ গাওয়া, না পারলে চুপ থাকতে পারেন। তাই বলে ভোল পাল্টাতে পারেন না। এই সব সুবিধাবাদীর জন্য আমাদের ইন্ডাস্ট্রির ভোগান্তি।’
সাইফ জানান, জয়ের আচরণ দেখে আগেই তার ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে রেখেছিলেন। সেগুলো তিনি মন্তব্যের ঘরে পোস্ট করেছেন। এসবের কারণে সাইফকে ফেসবুকে ব্লক করেছেন জয় চৌধুরী। ‘আমার মন্তব্য দেখে ফেসবুকে ব্লক করে দিয়েছে আমাকে। তার কাছে হিসাব আরও বাকি রয়েছে। গেল পরিচালক সমিতির পিকনিকে আমরা ক্রিকেট খেলে আর্থিক পুরস্কার পাই, সেটা নিয়ে সবার খাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই টাকাও সে নিজের পকেটে রেখে দিয়েছে,’ বলেন সাইফ খান।
একটা দল দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে বিভিন্ন পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। মন চাইলেও অনেক কিছু করার ক্ষমতা থাকে না। যে কারণে আগে সরাসরি দলীয় পরিচয় নিয়ে মুখ খুলতে না পারলেও এখন কথা বলতে পারছেন বলে জানান জয় চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘আমি কাদের সঙ্গে নির্বাচন করেছি, সেটা অনেকেই জানেন। আমার প্যানেলের অনেকেই বিএনপি সমর্থক ছিলেন। আমাদের বিপরীতে ছিলেন নিপুণ আপু, তিনি নানা ভাবে আমাকে চাপ দিয়েছেন। এটা কিন্তু তখনই পরিষ্কার হয়েছে। তাহলে কী দাঁড়ায়?’
জয়ের দাবি, সংগঠনের দায়িত্ব পালনের সময় আলাদা মতাদর্শ বা দলীয় পরিচয়ের কারণে তিনি রোষানলে পড়েছিলেন।
জয় বলেন, ‘আমি কিন্তু সর্বপ্রথম ছাত্রদের আন্দোলনে প্রতিবাদ করেছি। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছি। এখন ফেসবুক পোস্ট দেওয়ায় কেউ কেউ আমার মুজিব কোট পরা ছবি পোস্ট করেছেন। ওটা তো পিকনিকের ড্রেস কোড ছিল, সমিতির সদস্যদের স্বার্থে পোশাক পরেছি। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বাইরে ফারুক ভাইয়ের নির্বাচনের সময় ভাই হিসেবে প্রচারণা করেছি। এটা কি অপরাধ? আর ১৫ বছর একটা দল ক্ষমতায় থাকলে কী করার থাকে? আমার প্যানেলে আমি একা কী করব? আমার কিছুই করার ছিল না, চুপ ছিলাম।’
-যুগান্তর