মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির :বর্হিবিশ্বে উগ্রবাদী হিন্দু মৌলবাদী জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেলো ভারত

উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদের জায়গায় তৈরি করা হচ্ছে রাম মন্দির
ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শেষে মি. মোদী এক ভাষণ শুরুই করেন রামায়ণের একটি পংক্তি উদ্ধৃত করে। তিনি বলেন, “ভগবান রামের কাজ না করলে আমার শান্তি কিসে হবে?”
ভাষণের আগে ভূমিপুজো করে তিনি প্রস্তাবিত মন্দিরটির গর্ভগৃহ যেখানে তৈরি হবে, সেখানে একটি রুপার ইট রাখেন।
এসময় ভারতের ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল বিজেপির পক্ষ থেকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন , “রামলালা [হিন্দুদের কাছে ভগবান রামের ছোট বয়সের রূপকে রামলালা বলা হয়] অনেকদিন ধরেই একটি অস্থায়ী তাঁবুতে থাকছেন। কয়েক শতাব্দী ধরে যা চলে আসছে – একবার ধ্বংস আরেকবার নির্মাণ – এই চক্র থেকে আজ রাম জন্মভূমি মুক্তি পেল। এই উপলক্ষ্যে ১৩০ কোটি ভারতবাসীকে আমার প্রণাম।”
রামচন্দ্রকে ভারতীয় সংস্কৃতির আধার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তার কথায়, “ভগবান শ্রীরামের মন্দির আমাদের সংস্কৃতির আধুনিক প্রতীক, শাশ্বত আস্থার প্রতীক হয়ে উঠবে। এই মন্দির কোটি কোটি মানুষের মিলিত শক্তির প্রতীক হয়ে উঠবে।”
বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার পর অযোধ্যার দাঙ্গায় প্রায় ২০০০ মানুষ নিহত হয়েছিল । ভারতের সংবিধানের তিনটি স্তম্ভ – আইনসভা, প্রশাসন আর বিচারব্যবস্থা – তিনটির মর্যাদাও সেদিন ভেঙ্গে গিয়েছিল। আইনের শাসনের বুনিয়াদী ধারণাটাই ভেঙ্গে পড়েছিল ৬ই ডিসেম্বর। আঘাত এসেছিল গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলে পরিচিত গণমাধ্যমের ওপরেও ।
যাহোক,সব কিছু ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাওয়ার পরেও গত ২৫ বছরে বাবরি মসজিদ- রাম-জন্মভূমি নিয়ে বিতর্ক কিন্তু যেখানে ছিল, সেখানেই রয়ে গেছে।
রামমন্দির নির্মান উপলক্ষে ভারতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির নেতাকর্মীরা উৎসব করেছেন। অন্যদিকে ভারতের মুসলমানদের অনেকেই দিনটিকে কালাদিবস হিসাবে পালন করছেন নিজেদের সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল কালো রঙ দিয়ে।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড এক টুইট করে জানিয়েছে, “বাবরি মসজিদ একটা মসজিদ ছিল আর থাকবে। আয়া সোফিয়া আমাদের কাছে একটা বড় উদাহরণ।”
“অনায্য, লজ্জাজনক এবং সংখ্যাগরিষ্ঠকে খুশি করার মতো একটি রায়ের সুযোগ নিয়ে জমির দখল নেওয়া হলেও তার অবস্থান বদলাতে পারবে না কেউ। ভেঙ্গে পড়বেন না। অবস্থা চিরকাল একরকম থাকবে না।”
বাবরি মসজিদ আর রামজন্মভূমির জমি নিয়ে যে মামলা সুপ্রীম কোর্ট অবধি গড়িয়েছিল, তাতে মুসলিম পক্ষের হয়ে প্রধান আইনী লড়াই চালিয়েছেন লখনৌয়ের প্রবীণ আইনজীবি জাফরইয়াব জিলানি।
তিনি বলেছেন, “সুপ্রীম কোর্ট তো মেনেই নিয়েছে যে ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা হয়েছিল। সেই ঘটনারও নিন্দা করেছিল সর্বোচ্চ আদালত। সেখানে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ কী করে বলছেন যে ওখানে কয়েক শতাব্দী ধরে রামলালা অবস্থান করছেন!”
“আর আজ সংবিধানকে অন্যভাবেও বুড়ো আঙ্গুল দেখানো হল – একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ধর্ম নিরপেক্ষ দেশের প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের গর্ভনর কীভাবে উপস্থিত থাকেন!! এটা যদি শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান হত, তাতে কিছু বলার ছিল না, কিন্তু এটা তো সরকারী অনুষ্ঠান ছিল,” বলছিলেন জাফরইয়াব জিলানি।
ঘটনা যে যেভাবেই দেখুক না কেন, বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে রাম মন্দির নির্মাণের মধ্য দিয়ে বর্হিবিশ্বে উগ্র হিন্দু মৌলবাদী দেশের স্বীকৃতি পেলো ভারত।