Type to search

Lead Story মিডিয়া সম্পাদকীয় ও মতামত

আমি কেন সাংবাদিক রোজীনার নি:শর্ত মুক্তি চাই?

প্রথম আলোর অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজীনা ইসলাম প্রিজন ভ্যানের ভিতর থেকে বাইরে তাকিয়ে আছেন

 

স্বপ্না গুলশান:

ফেসবুকে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজীনা ইসলামের বিরুদ্ধে বানানো  কাটছাঁট করা একটি ভিডিও আমার নজরে এসেছে। যেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের মহিলা পিয়ন কাম অফিস সহকারী পলি বেগম রোজীনা ইসলামের মোবাইল কেড়ে নিল, গলা চেপে ধরলো, অপমান জনক কথা বলল , অতিরিক্ত সচীব কাজী জেবুন্্নেছা রোজীনার উপর নির্যাতন করলো, মহিলা পুলিশই প্রথম মুচলেকার কথা তুলেছিল তারপর রোজীনা বলেছিল আচ্ছা মুচলেকা দিব ইত্যাদি এ ভিডিও তে নাই । অথচ ফাঁস হওয়া আনকাট ভিডিওতে আমরা পুরা ঘটনা দেখেছি ইতোমধ্যে । এজন্য এ ভিডিও একশ ভাগ কাটছাঁট করে বানানো বোঝা গেছে । রোজীনা ইসলামের বিরুদ্ধে বানোয়াট কাটছাঁট ভিডিও দেখে আমি নিশ্চিত তাকে স্বাস্হ্য মন্ত্রনালয় ও কিছু দুর্নীতিবাজ আমলারা পরিকল্পিত ভাবে ফাসাচ্ছে।

শুধু তাই নয় ভিডিওটিতে কাট ছাঁট করে রোজীনার বিপক্ষের বিষয়গুলো প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে স্বাস্হ্য মন্ত্রনালয়ের ভাড়া করা দালাল দিয়ে। রোজীনা যদি কাগজ নিয়ে ও থাকে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় সেটা চোর বলে গন্য হবেনা । আপনি অনুসন্ধান নিউজ করছেন যে দুরনীতিবাজ বাটপারের বিরুদ্ধে সে কি আপনাকে তার খারাপ বিষয় গুলো তুলে দেবে আপনার হাতে ? না জেনে কাট ছাঁট উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভিডিও দেখে হুটহাট মন্তব্য রোজীনাকে আরো বিপদে ফেলবে।

আমি নিজেই অনেক অনুসন্ধানী নিউজ করেছি । তাই বিষয়গুলো জানি । ভুক্তভোগী সাংবাদিক ছাডা এটা বোঝা সম্ভব নয়। ঘরে আটকে রেখে যখন দশ জন মিলে মারধোর ও গলা চেপে ধরবে- এরকম পরিস্থিতিতে শুধু রোজীনা নঁয আমি ও জীবন বাঁচাতে পুলিশের কথা মতো মুচলেকা কেন পা ও ধরবো কারন তখন জীবন নিয়ে ফেরাটাই আমার কাছে সবচেয়ে মুখ্য হবে কারন বাডীতে রেখে আসা আমার বাচ্চার মুখটা বার বার আমার চোখে ভেসে উঠবে। রোজীনার ও সেরকম অবস্থা হয়েছিল ।

আসল আনকাট ভিডিওতে মহিলা পুলিশই প্রথম মুচলেকার কথা তুলে রোজীনা ইসলাম কে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দিতে বলছিলেন । সে প্রেক্ষিতেই রোজীনা ইসলাম মুচলেকার কথা বলেছেন । তবে ভুয়া এ কাটছাঁট ভিডিওতে উভয়পক্ষের পুরা কথাবার্তা না রেখে শুধু রোজীনাকে পচাতে বা ফাসাতে তার একপেশে কথা গুলো রাখা হয়েছে ।

চিন্তাই করতে পারছিনা স্বাস্হ্য মন্ত্রনালয়ের এক পিয়ন শ্রেনীর মহিলা দেশের সবচেয়ে নামকরা পত্রিকা প্রথম আলোর বিখ্যাত অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজীনা ইসলামের সাথে কেমন বাজে আচরন করেছে ? এত সাহস কোথায় পেলো এ পিয়ন মহিলা তদন্ত করুন আপনারা দেশে থাকা সাংবাদিক ভাইবোনেরা। নইলে ইজ্জত বলে কিছু থাকবেনা আমাদের সাংবাদিক সমাজের ।

রোজীনা ইসলামের জামিন ও মুক্তির বিষয়ে তদবীর করতে সাংবাদিক নেতারা বার বার তথ্য মন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে ধর্না দিচ্ছেন । আমার মনে হচ্ছে সাংবাদিক নেতাদের আশার আলো – তথ্য মন্ত্রীর চাইতে দুর্নীতিবাজ আমলাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক অনেক বেশী শক্তিশালী । বার বার তথ্য মন্ত্রীর কাছে ন্যায্য সুপারিশ করে ও আপনারা সাংবাদিক নেতারা সেদিন রোজীনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মিথ্যা মামলা করা আটকাতে পারেননি। এখনো জামিন করাতে পারেন নি । প্রশ্ন হলো কেমন প্রভাবশালী সাংবাদিক নেতা আপনারা? সেজন্য বলি সরকারি অনুদান নেয়া বন্ধ করুন। অনুদান নিয়ে চললে প্রতিবাদ কি জোরালো করা যায় কখনো?

যাদের রোজীনার নিঁযে মাথা ব্যথা তারা অবশ্যই কোন না কোন ভাবে দুর্নীতিতে জড়িত । দুর্নীতিবাজ শ্রেনীর পথের কাটা হয়েছে রোজীনা । রোজীনা ইসলামের মতো এমন সাহসী অনুসন্ধানী রিপোর্ট কজন করছে এই সময়ে ? রোজীনা ইসলাম কোন তেলবাজ হলুদ সাংবাদিক নয় । শুধু এ সরকার নয় বরং বিগত সরকারগুলো ও নিজেদের স্বার্থে তেলবাজ হলুদ সাংবাদিকদের ব্যবহার করে স্বার্থ হাসিল করেছে । এত কিছুর মধ্যে ও রোজীনা ইসলাম দেশ জাতির সামনে দুর্নীতির বিষয় গুলো অনুসন্ধান করে তুলে আনছে জীবনের ঝুঁকি জেনেও । এগুলো তো তিনি দেশ জাতির উন্নয়নের স্বার্থেই করেছেন তাইনা ? সেখানে রোজীনা ইসলাম কিভাবে দেশবিরোধী বলে বিবেচিত হয়?  এসব কারনে আমি রোজীনা ইসলামের নি:শর্ত মুক্তি  চাই ।

 

স্বপ্না গুলশান, অষ্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত এবিসিবি নিউজের সম্পাদক

Translate »