Type to search

অপরাধ অর্থ ও বাণিজ্য বাংলাদেশ মিডিয়া সম্পাদকীয় ও মতামত

রহস্যময়ী হেলেনা জাহাঙ্গীর !

র্যাবের হাতে আটক হেলেনা জাহাঙ্গীর

স্বপ্না গুলশান: 

হেলেনা জাহাঙ্গীর ! বিশাল আলোচিত সমালোচিত এক নাম এখন বাংলাদেশে। এই হেলেনা জাহাঙ্গীর ২০১৮ সালে সিডনীতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে । ‘ Global Summit of women in Sydney 2018’ তে অংশ নিতে শেখ হাসিনার সফর সঙ্গী হিসেবে বাংলাদেশ থেকে সেসময়ে বিভিন্ন পেশাজীবিদের আরো অনেকেই এসেছিলেন । তবে হেলেনা জাহাঙগীরের বিষয়টি ছিল অন্যরকম। এখানে এসেই তিনি সিডনীর বাংলাদেশী কমিউনিটিতে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হওয়া আওয়ামীলীগ ও সমমনা নেতা কর্মীদের সাথে নানা অনুষ্ঠান ও আলোচনায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফেরার পরে ও হেলেনা জাহাঙ্গীর বিভিন্ন কৌশল আর কারসাজিতে তার ব্যবসায়ের পরিসর বাড়ানোর ফন্দি আটেন । অতি অল্প সময়েই এখানকার বাংলাদেশ কমিউনিটির আওয়ামী নেতা কর্মীদের মধ্য মনি হয়ে উঠতে থাকেন । “শেখ হাসিনার সফর সঙ্গী “ মানেই আওয়ামীলীগের বিশাল ক্ষমতাধর কোন নেত্রী “ এমনটি ভেবেই এখানকার প্রবাসী আওয়ামীলীগের তথাকথিত নেতা কর্মীরা হেলেনা জাহাঙ্গীর কে মাথায় তুলে রাখেন । কমিউনিটির এসব নেতা কর্মীদের কাউকেই এখন কোনরকম কথা বলতে দেখছিনা হেলেনার সমর্থনে।

যাহোক, হেলেনা জাহাঙগীরের সাথে কখনো দেখা হয়নি আমার ।তবে উনি যখন ২০১৮ সালে সিডনী এলেন , তখন উনার এলাকা কুমিলার এক ব্যক্তি (যিনি নিজেকে মালয়শিয়াতে প্রবাসী আওয়ামীলাগের কর্মী হিসেবে পরিচয় দেন ) আমাকে অনুরোধ করলেন যেন আমি হেলেনা জাহাঙ্গীর কে বিশেষভাবে আপ্যায়ন করি। আমি তাকে বললাম “আপনার ম্যাডাম হেলেনা জাহাঙ্গীর প্রধানমন্ত্রীর সফর সংগী হয়ে আসছেন। এখানে বাংলাদেশ কমিউনিটির আওয়ামী নেতা কর্মীরাই উনাকে দেখে রাখবেন । আমার আপ্যায়ন উনার দরকার হবেনা। তবে আমার ফোন নম্বরটি উনাকে দিন ।দরকার হলে কল করতে বলবেন”। ফেসবুকের বদৌলতে দেখলাম সেসময়ে কমিউনিটির নানা লোকজনের সাথে বিশেষত আওয়ামী নেতা কর্মীদের সাথে হেলেনার বিশেষ ফটোসেশন আর নানা কার্যক্রম । সেসময়ে ঠিকই একদিন ফোনে কথা হলো উনার সাথে আমার । শুরুতেই নিজের আধিপত্য আর পরিচিতির কথা জানাতে আমাকে বললেন ,” আপনাদের সিডনি কমিউনিটিতে রহমতুল্লাহ নামে যিনি আছেন উনি আমার দেবর । “ আরো নানা কথা। আমি বললাম , “রহমতুল্লাহ ভাইরে তো চিনি তবে উনি আপনার দেবর তা জানিনা । আরো বললাম , “আমি তো অন্যদিকে থাকি । এদিকে আসলে ফোন দিবেন অবশ্যই । “। বলে রাখি- রহমতুল্লাহ ভাই হলো আমাদের সিডনীর বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত মুখ । আওয়ামী মনা , বিএনপি মনা, জামাত মনা এবং যারা কোন রাজনৈতিক দলের মনা নয়  সবার সাথে সম্পর্ক ভাল এই রহমতুল্লাহ ভাইয়ের ।

ইতোমধ্যে হেলেনা জাহাঙ্গীর বাংলাদেশে ফিরে গেলেন । কথা প্রসংগে একদিন রহমতুল্লাহ ভাইরে জিজ্ঞেস করলাম “ রহমতুল্লাহ ভাই হেলেনা জাহাঙ্গীর আপনার কেমন ভাবী ? উনি দাবী করলেন যে আপনি উনার দেবর । কথা বার্তা তো অন্যরকম মনে হলো। আমি কি হনুরে টাইপের । তাই দেখা আর করা হয়নি আপনার ভাবীর সাথে ।” রহমতুল্লাহ ভাই শুধু হাসলেন । আমি ও হাসতে থাকলাম । যাহোক, বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফেসবুকের বদৌলতে দেখলাম হেলেনা জাহাঙ্গীর আবার সিডনীতে এসেছেন । এবার এসেছেন তিনি উনার লাইসেন্সবিহীন জয়যাত্রা অনলাইন টিভির অফিস উদ্বোধন করতে। প্রতিনিধি ও নিয়োগ দিলেন কমিউনিটির একজনকে । উনার এনজিও জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে কিছু পুরস্কার ও দিলেন এখানকার কমিউনিটির প্রবাসী আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের মধ্যে- যাদের অনেকেই অনলাইন পোর্টাল, মাসিক নিউজপেপার সহ আরো অনেক কিছুর মালিক । এরই মধ্যে হেলেনা জাহাঙগীর ঘনিষ্ট একজনকে দিয়ে আমাকে প্রস্তাব দিলেন উনার জয়যাত্রা অনলাইন টেলিভিশনে কাজের জন্য । আমি হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছিলাম ,” বহু নামকরা প্রতিষ্ঠিত নিউজ মিডিয়াতে কাজের অফার আছে ভাই। তবে সময় করতে পারবনা বলে অফার ফিরিয়ে দিই ।।”

যাহোক আমার এত প্যাঁচালের কোন ইচ্ছা ছিলনা। বিতর্কিত কর্মকান্ড, দুর্নীতি , চাঁদাবাজীর অভিযোগে হেলেনা জাহাঙ্গীর গ্রেপ্তার হয়েছেন প্রায় একসপ্তাহ হলো। গতকাল ২য় দফায় আবার ১৪ দিনের রিমান্ডে আছেন আলোচিত সমালোচিত বিতর্কিত এই নারী । র্যাবের সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানলাম ঢাকাতে কমপক্ষে ১৫ টি ফ্লাট , ৫ টি গার্মেন্টস, গাজীপুরে একশ একর জমি , চট্টগ্রামে আরো একাধিক প্রকল্পের মালিক এই হেলেনা জাহাঙ্গীর । এসবের সবই করেছেন তিনি নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে । কখনো নাম লিখিয়েছ্ন বিএনপিতে, কখনো আওয়ামীলাগে , জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদ সাহেবের ও অতি ঘনিষ্ঠ ছিলেন তিনি । শেখ হাসিনার মেয়াদ কালে আরো বিশাল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন তিনি । লাইসেন্স বিহীন আইপি টিভি জয়যাত্রা তে চাকুরি দেয়ার নামে দেশে বিদেশে বসবাসরত অনেকের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ ও নিয়েছেন তিনি। শুনলাম প্রতি মাসে জেলা প্রতিনিধিদের কাছ থেকে চাঁদা নেন তিনি । টাকার বিনিময়ে টেলিভিশনে টকশো করিয়ে ভাইরাল করে দেবেন – এমন শর্তে বহু ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের ব্ল্যাকমেইল ও করেছেন এই হেলেনা জাহাঙ্গীর ।

এসবের সবই করেছেন তিনি নানা ছলচাতুরী করে আওয়ামীলীগের ক্ষমতাধর নেতা মন্ত্রীদের কে হাতের নিয়ন্ত্রনে এনে।এক মুক্তিযাদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সাহেব তাকে আওয়ামীলীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটিতে সদস্য করার সুযোগ করে দিয়ে দেশ জাতির নাকের ডগা গিয়ে হেলেনার বৈধ উপায়ে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন। ফেসবুকের বদৌলতে সবখানে দেখি এই মোজাম্মেল হকের সাথে হেলেনা জাহাঙগীরের নানা ধরনের ফটোসেশন ও অবৈধ কর্মকান্ডের প্রচার প্রচারনা। লাইসেন্স বিহীন জয় যাত্রা আইপি টেলিভিশনের চেয়ারম্যান ও শুনলাম সরকারের এই মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেন হক !

আমার কৌতুহল হচ্ছে বছরের পর বছর আওয়ামীলীগের ক্ষমতাধর মন্ত্রী , নেতাদের সুনজরে থেকেই হেলেনা নানা ছলতাতুরী করে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক , প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর সংগী হয়ে ঘুরেছেন ২০ টি দেশ , এমনকি জনসম্মূখে বলে থাকেন হেলেনা যে প্রধানমন্ত্রী ছাডা আর কাউকে গুনেন না তিনি । তবে সেই হেলেনা জাহাঙগীরের তো এভাবে গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে থাকার কথা ছিলনা । শুধুমাত্র আওয়ামী চাকুরীজীবি লীগ নামে আরো একটি ভুঁইফোড় ধান্দাবাজ সংগঠনের মাধ্যমে চান্দাবাজী ও ধান্দবাজী করার উদ্দেশ্যই কি কাল হলো হেলেনার নাকি এর পেছন আরো অনেক অজানা রহস্য রয়েছে?

 

( স্বপ্না গুলশান , প্রবাসী সাংবাদিক ও এডিটর , এবিসিবি নিউজ)

Translate »