তুরস্ক-সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশ্রয় শিবিরে ১৮ বাংলাদেশি
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে সিরিয়ার অংশে থাকা অনেক বাংলাদেশির এখনও খোঁজ মেলেনি। তবে তুরস্কের সীমান্তবর্তী অঞ্চল গাজিয়ান্তেপ বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন ১৮ বাংলাদেশি। তাঁরা নিরাপদে আছেন বলে জানিয়েছেন তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স রফিকুল ইসলাম।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে রফিকুল ইসলাম বলেন, ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজিয়ান্তেপ। এখানে এ পর্যন্ত দুটি পরিবারসহ মোট ১৮ বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা গেছে। তাঁরা গাজিয়ান্তেপ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন। দূতাবাসের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই অঞ্চলে আমাদের কনস্যুলেট রয়েছে। আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশিদের খাবার ও পানি সরবরাহসহ সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।
ভূমিকম্পে বাংলাদেশিদের সাহায্যের জন্য তুরস্কে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রস্তুতি নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি অনু বিভাগ থেকে জানানো হয়, ইস্তাম্বুলে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল তুরস্কে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জরুরি প্রয়োজনে কনস্যুলেটের হটলাইন চালু করেছে। +৯০৮০০২৬১০০২৬ নম্বরে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বসবাসরত বা অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স রফিকুল ইসলাম +৯০৫৪৬৯০৫০৬৪৭ এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবুল বাশার +৯০৫৩৮৯১০৯৬৩৫-কে ফোন করে যোগাযোগের অনুরোধ করা হয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষ থেকে।
এখন পর্যন্ত কত বাংলাদেশি দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন- জানতে চাইলে বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স বলেন, বাংলাদেশিরা তাঁদের অবস্থান জানাতে গ্রুপের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন রয়েছে বাংলাদেশ স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন ইন টার্কি (বিএএসএটি) নামে। তাঁদের নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে বাংলাদেশিরা যোগাযোগ করছেন।
মঙ্গলবার রাতে তুরস্কে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষক শর্মিলী আনোয়ার জানান, গোলাম সাঈদ রিংকু নামে নিখোঁজ এক বাংলাদেশিকে আহত অবস্থায় ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ খারামনমারাসে থাকতেন। তাঁর সঙ্গে থাকা নূরে আলমকে উদ্ধার করা হয় সোমবারই। এলাকাটিতে পাঁচ বাংলাদেশি ছিলেন। বাকি তিনজনের একজন বাংলাদেশে, একজন ইস্তাম্বুলে এবং আরেকজন অন্য এলাকায় আছেন।
৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অনেক বাংলাদেশি নাগরিকের হতাহতের শঙ্কা প্রকাশ করে বাংলাদেশ দূতাবাস। দূতাবাস জানায়, এ রুটটি ইউরোপে প্রবেশে ব্যবহার করে থাকেন বাংলাদেশিরা। ফলে এ অঞ্চলে কয়েকশ বাংলাদেশি ইউরোপে প্রবেশের জন্য অবস্থান করেন। তবে এখন পর্যন্ত অনিবন্ধিত কোনো বাংলাদেশির হতাহতের খবর পায়নি দূতাবাস।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বলেন, সিরিয়ার যে অংশে ভূমিকম্পটি সবচেয়ে বেশি আঘাত করেছে, সেখানে মূলত মানব পাচারকারীরা তাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। বছরের যে কোনো সময়ে এ স্থানে কমপক্ষে ১০০ বাংলাদেশি অবস্থান করেন। কোনো কোনো সময় এ সংখ্যা আরও বেশি হয়ে থাকে।
দূতাবাস জানায়, সিরিয়ার অঞ্চলে অবস্থান করা বাংলাদেশিরা যেহেতু অনিবন্ধিত, সেহেতু তাঁরা দেশে ফেরত যাওয়ার ভয়ে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। হয় তাঁরা লুকিয়ে থাকেন, নয়তো মানব পাচারকারীদের হাতে আটকা পড়েন। তাঁদের বেশিরভাগের সঙ্গেই পাসপোর্ট থাকে না। তাঁদের বাংলাদেশি হিসেবে চিহ্নত করা ও খোঁজ পাওয়া কষ্টসাধ্য বিষয়।
সিরিয়ার যে অঞ্চলটিতে ভূমিকম্প আঘাত করেছে, সে জায়গা একই সঙ্গে সরকার এবং বিদ্রোহী দলের দখল রয়েছে। বিদ্রোহী দলগুলো মূলত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে মাদক চোরাচালান, মানব পাচার, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। ফলে এখানে উদ্ধার অভিযান চালানো নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দূতাবাসের কর্মকর্তারা।
এবিসিবি/এমআই