মধ্য প্রাচ্যসহ প্রায় অর্ধ পৃথিবীর মুসলমানদের পবিত্র ঈদুল ফিতর পালিত

আরব আমিরাতে ঈদের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানী আবুধাবির গ্র্যান্ড মসজিদ শেখ জায়েদ মসজিদে। এছাড়াও আবুধাবিতে সকাল ৬টা ২২ মিনিটে, শারজাহ ও আজমানে ৬টা ১৭ মিনিটে, রাস আল খাইমায় সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে, ফুজাইরাহ ও খোরফাক্কানে ৬টা ১৪ মিনিটে এবং উম্মুল কুওয়াইনে সকাল ৬টা ১৩ মিনিটে, আল আইনে ৬টা ১৫ মিনিটে ও জায়েদ সিটিতে ৬টা ২৬ মিনিটে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
আমিরাতের সকল প্রদেশে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় প্রায় কাছাকাছি সময়ে। সূর্য উঠার আগেই বিশাল ঈদগাহ ময়দান কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। আমিরাতীদের পাশাপাশি সেখানে বেশীর ভাগ ভীড় ছিল বাংলাদেশি, পাকিস্তানি, ভারতীয় সহ অন্যান্যদেশের মুসল্লীদের । জামাত শেষে দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করা হয়।
ঈদ আমেজের শুভ্রতা ছড়াতে শুরু করে বাঁকা চাঁদ পূব আকাশে উকি দিতে না দিতেই । রোজার মাস শেষে আসে সে কাঙ্ক্ষিত দিন আনন্দের ‘ঈদুল ফিতর’। ঈদ মানেই আনন্দ -আবেগ তবে পরিবার, পরিজন, বন্ধু-বান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষীদের নিয়ে ঈদ উদযাপন করলে ঈদের উল্লাস আরও গাড় হয়ে ওঠে। প্রবাসীদের জীবনে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া অনেক কষ্টের। প্রবাসীদের ঈদ উদযাপন অন্যদের চেয়ে আলাদা। প্রবাসে বাংলাদেশের মতো ঈদের আমেজ পুরোপুরি থাকে না- তবুও সবাই সাধ্যমত চেষ্টা করেন একে অন্যের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের, কোলাকুলি, খাওয়া দাওয়া এবং ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে ব্যস্ত থাকতে।
নামাজ শেষ হতে মোবাইল ফোনে দেশের প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়। বাসায় ফিরে আরব দেশের প্রধান খাদ্য খেজুর, পায়েস, বিরিয়ানি-পোলাও ও বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি জাতীয় খাবার খান সবাই।একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেল থেকে শুরু হয় বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে ঘুরে বেড়ানো। পরিবার পরিজন বিহীন প্রবাসী ব্যাচলরের ঈদ যেন বিষাদমাখা আনন্দ উপভোগ করা।
তবে যারা পরিবার নিয়ে এই পরবাসে ঈদ করে তারা অনেকে চেষ্টা করে পরিচিত ব্যাচলরদেরকে সাথে নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে, যাতে কিছুটা হলেও প্রিয়জনের অভাব লাগভ হয়। বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী বাংলাদেশ এসোসিয়েশন দুবাইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ইয়াকুব সৈনিক দৈনিক ইত্তেফাককে জানানঃ আমি যখনই প্রবাসে ঈদ করি তখনই চেষ্টা করি পরিবারহীন আপামর প্রবাসীদের বাসায় দাওয়াত করে ঈদ আনন্দ একসাথে উপভোগ করতে।
আরেক সুপরিচিত ব্যাবসায়ী ন্যাপ্লেক্স গ্রুপ এর চেয়ারম্যান এ কে আজাদ দৈনিক ইত্তেফাক কে জানান, আমরা যারা প্রবাসে পরিবার নিয়ে ঈদ করি তারপরও দেশের মাটিতে করা ঈদ অনেক বেশি মিস করি, কারন দেশে যে আমেজে আনন্দ ছড়িয়ে থাকে পরবাসে সে আমেজ অনুভব করা যায় না, তারপরও পরিবার ব্যাচেলর সবাই একত্র ঈদের স্বাদ নিতে চেষ্টা করি।
হাটহাজারীর চারিয়ার মুহাম্মদ সাওকাত নামের এক প্রবাসী জানান,প্রবাসীদের ঈদ মানে সকালে ঘুম থেকে উঠে ঈদগাহে নামাজ পড়া, নামাজ পড়ে বাসায় এসে কোলাকুলি করে ঘুমানো পরিবার-পরিজনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে সময় পার করা। দেশের মতো আনন্দটা তেমন নেই বললেই চলে।ঈদের নামাজ শেষে দেশে ফোন করার পর বুকের ভেতর কষ্টের তীব্রতা যেন আরও বেড়ে যায়। বুকফাটা যন্ত্রণাকে বুকে নিয়ে বিছানায় গিয়ে চোখের পানিতে বালিশ ভিজিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করি।
মিরসরাইয়ের প্রবাসী সরওয়ার উদ্দিন রনি জানান,আসলে প্রবাসীদের ঈদের দিনগুলোকে অন্যান্য দিনগুলোর সঙ্গে পার্থক্য করা কঠিন।কারণ অনেক প্রবাসীকেই ঈদের দিনও তাদের নির্ধারিত ডিউটি করতে হয়। প্রবাসে ঈদের দিনে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে দেশে প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানোর ঈদের দিনগুলোর কথা। তারপরও আমরা আমাদের মত করে ঈদের আনন্দকে নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নেয়ার চেষ্টা করি।
এবিসিবি/এমআই