Type to search

অর্থ ও বাণিজ্য

১৬ ভুয়া প্রতিষ্ঠানকে ১৬ চেকে ১১৬ কোটি টাকা

অস্তিত্বহীন ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে ১১৬ কোটি টাকা দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস। আলোচিত পি কে হালদারের দুর্নীতির অভিযোগগুলোর প্রধান ক্ষেত্র এই প্রতিষ্ঠানটি। এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ আবেদ হাসান আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে দুর্নীতির অনেক তথ্য প্রকাশ করেছেন।

গত ২৪ আগস্ট ঢাকা মহানগর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সৈয়দ আবেদ হাসান। এতে তিনি জানান, পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই ১৬টি চেকের মাধ্যমে ওই বিপুল অঙ্কের টাকা প্রদান করা হয়। পি কে হালদারের নির্দেশে নাহিদা রুনাই,  সৈয়দ আবেদ হাসান, রাশেদুল হক, অভীক সিনহা জালিয়াতির মাধ্যমে ১১৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেন।

এর আগে সৈয়দ আবেদ হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তিনি জবানবন্দি দেন।

আদালত সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, সাবেক সৈয়দ আবেদ হাসান তার জবানবন্দিতে প্রতিষ্ঠানের তহবিল সংগ্রহের কমিশনের নামে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্যও দিয়েছেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিন বছরে বিভিন্ন প্রকার ডিপোজিট সংগ্রহ করার কমিশন হিসেবে প্রায় ৬৪ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। মূলত সাবেক এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান ও রাশেদুল হকের স্বাক্ষরেই কমিশনের চেকগুলো প্রদান করা হয়। ওই সময় ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ত নূর মোহাম্মদ, মো. রাসেল, মো. রাজ্জাকসহ অন্যরা কমিশন এজেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠানের ওই অর্থ নিয়েছেন।

জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সর্বমোট ঋণের পোর্টফোলিও প্রায় চার হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান সম্পদ প্রায় ৭০০ কোটি টাকার। লোকসানের পরিমাণ প্রায় তিন হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এই অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো নিশ্চয়তা নেই।
১৬টি ভুয়া কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- আনান কেমিক্যাল, দ্রিনান অ্যাপারেলস লিমিটেড, নিউট্রিক্যাল লিমিটেড, ওকায়ামা লিমিট, মুন ইন্টারন্যাশনাল, সুখাদা প্রপার্টিজ, ন্যাচার এন্টারপ্রাইজ, আরবি এন্টারপ্রাইজ, দিয়া শিপিং, নিউটেক এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স বর্ন, কণিকা এন্টারপ্রাইজ, হাল ইন্টারন্যাশনাল, জিঅ্যান্ডজি এন্টারপ্রাইজ, এমটিবি মেরিন। দুদক সূত্র জানায়, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে পি কে হালদার একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তাই তার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করতেন। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ সাজিয়েছিলেন তার লোকজন দিয়েই। পি কে হালদার প্রতিটি পর্ষদ সভায় উপস্থিত থাকতেন। তার কথায় ঋণের অনুমোদন দেওয়া হতো।

পি কে হালদারের নির্দেশে মূলত বিভিন্ন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের ভিজিট প্রতিবেদন ছাড়াই এবং অনেক ক্ষেত্রে কোনো জামানত না নিয়ে ব্যাংকিং রীতি-নীতির বাইরে সাবেক এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান, রাশেদুল হক, এভিপি আল মামুন সোহাগ, সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী, কোম্পানি সচিব রফিকুল ইসলাম খান ঋণ প্রস্তাব তৈরির পর ইন্টারন্যাল মেমোতে স্বাক্ষর প্রদান করেন। পরবর্তী সময়ে বোর্ডে ঋণ অনুমোদন হওয়ার পর সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ওই অর্থ না পাঠিয়ে পি কে হালদারের মৌখিক নির্দেশে বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের হিসাবে পাঠানো হতো। এই প্রক্রিয়ায় আনান কেমিক্যাল লিমিটেড নামীয় প্রতিষ্ঠানে ৭০ কোটি ৮২ লাখ টাকা ঋণ প্রদানের ইন্টারন্যাল মেমোতে সাবেক এমডি আবেদ হাসান, রাশেদুল হক, আল মামুন সোহাগ, রাফসান রিয়াদ চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম খান স্বাক্ষর করেন। এরপর ঋণের অর্থ পি কে হালদারসহ তার বিভিন্ন কোম্পানি ও দুর্নীতি সহযোগী সতীর্থদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়।

ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান ও সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ বর্তমানে কারাগারে আছেন। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কারাগার থেকে এনে গত ২২-২৪ আগস্ট পর্যন্ত তাদের রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

গত ১৬ মার্চ তাদের গ্রেপ্তার করে দুদক। গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছিল। আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের তিন দিনেই তারা ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হন।-সমকাল

এবিসিবি/এমআই

Translate »