Type to search

অর্থ ও বাণিজ্য বাংলাদেশ

‘সরকার মামলা করেনি বলে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তা সত্য নয়’ বললেন ড. ইউনূস

সরকার অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা করেনি বলে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তা সত্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।

রোববার সকালে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় আপিল এবং জামিনের জন্য আদালতে যান অধ্যাপক ইউনূস। সেখানেই এ কথা বলেন তিনি।

তার আগে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল মামলার রায় চ্যালেঞ্জ করে অধ্যাপক ইউনূসসহ চার জনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে এবং শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত চার জনকে স্থায়ী জামিন দেয়।

একই সঙ্গে আগামী তেসরা মার্চ আপিল বিষয়ে পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করে আদালত। এর আগে পহেলা জানুয়ারি অধ্যাপক ইউনূসসহ চারজন আসামিকে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করে সাজা দেয় আদালত।

আরেক ধারায় ২৫ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়াও শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী করা, ছুটি সংক্রান্ত সব বিষয় পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে সমাধান করতে নির্দেশ দেয় শ্রম আদালত।

এর আগে ২৩শে জানুয়ারি অধ্যাপক ইউনূসকে ‘ক্রমাগত হয়রানি’ বন্ধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ১২জন সেনেটর।

দেশটির ইলিনয় রাজ্যের সেনেটর রিচার্ড জে. ডারবিন ও ইন্ডিয়ানার সেনেটর টড ইয়ংসহ সেনেটের ১২জন সদস্য স্বাক্ষরিত চিঠিতে আহ্বান জানানো হয়, “নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ক্রমাগত হেনস্তা এবং আরও বিস্তৃতভাবে আইন ও বিচার ব্যবস্থার অপব্যবহারের মাধ্যমে যেভাবে সরকারের সমালোচকদের টার্গেট করা হচ্ছে তা বন্ধ করার আহ্বান জানাতে আপনার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কাছে এই চিঠি লেখা হচ্ছে।”

‘সরকার মামলা করেনি বলে যে বক্তব্য দিচ্ছে, তা সত্য নয়’

রোববার ঢাকার শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলার রায় চ্যালেঞ্জ করে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে।

সাজা ঘোষণার সাথে সাথেই আসামিদের আইনজীবী জামিন আবেদন করলে তা মঞ্জুর করে আদালত।

পরবর্তী এক মাসের মধ্যে আপিল করার শর্তে পাঁচ হাজার টাকার বন্ডে জামিন আবেদন করা হয়। এক মাসের মধ্যে আসামিদের শ্রম আপিলেট ট্রাইব্যুনালে আপিল করার নির্দেশনা দেয় আদালত।

হিলারি ক্লিনটনের সাথে অধ্যাপক ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সাথে অধ্যাপক ইউনূস (ফাইল ছবি)

রায় ঘোষণার দিন অধ্যাপক ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন আদালতের বাইরে বলেছেন, ”আমরা এই ব্যাপারে ক্ষুব্ধ। লেবার কোর্টের ইতিহাসে এত তাড়াতাড়ি ড. ইউনূসের মামলার শুনানির জন্য ১০টি ডেট দেয়া হয়েছে। নিজেরা তড়িঘড়ি, ইতিহাস ব্রেক করে, সাড়ে আটটা পর্যন্ত ইতিহাস ব্রেক করে, শুনানি করে আজকের এই রায় ঘোষণা করা হয়েছে।”

অন্যদিকে, রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে কলকারখানা অধিদপ্তরের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ”আমরা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছি। প্রত্যাশিত রায় পেয়েছি। আমরা মনে করি, প্রতিষ্ঠান মালিকরা এখন সতর্ক হবে। কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। আইন লঙ্ঘন হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

মামলায় কী আছে

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের নয়ই সেপ্টেম্বর মামলাটি করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

এ মামলার অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ না দেয়া এবং ১০১ জন শ্রমিকের চাকরি স্থায়ী না করা।

এছাড়া গণছুটি না দেয়া, শ্রমিকদের কল্যাণ তহবিল এবং অংশগ্রহণ তহবিল গঠন না করাও এই মামলার অন্যতম অভিযোগ।

এর আগে ২০২৩ সালের জুন মাসে মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। পক্ষে বিপক্ষে শুনানির পর ২৪শে ডিসেম্বর রায়ের জন্য পহেলা জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করে আদালত।

এ মামলায় চারজন আসামির পক্ষে আদালতে লিখিত বক্তব্য দেয়া হয়।

এতে বলা হয়, গ্রামীণ টেলিকম যেসব ব্যবসা পরিচালনা করে, সেগুলো চুক্তিভিত্তিক। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে তা নবায়নের মাধ্যমে পরিচালনা করা হয়।

যেহেতু এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম চুক্তির ভিত্তিতে পরিচালিত হয় তাই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলেও জানানো হয়।

বক্তব্যে আরও বলা হয়, মিথ্যা অভিযোগে অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান মামলাটি করেছেন।

অধ্যাপক ইউনূস এই মামলায় সাফাই সাক্ষ্য দেন নি।-বিবিসি

এবিসিবি/এমআই

Translate »