Type to search

সারাদেশ

ভিক্ষা করে মসজিদে ৪০ হাজার টাকা দান

ভিক্ষা করে মসজিদে টাকা দান করেন শেফালি খাতুন

দিনের পর দিন ভিক্ষার টাকা জমিয়ে ৪০ হাজার টাকা মসজিদে দান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেফালি খাতুন। প্রতিদিনের খরচ চালানোর পর রাজশাহীর বাঘা উপজেলার এই ভিক্ষুক টাকা জমিয়ে দান করেছেন বাঘা পৌর এলাকার দক্ষিণ গাওপাড়া জামে মসজিদে। এবার তার ইচ্ছা ভিক্ষার টাকা জমিয়ে দান করবেন মাদ্রাসা ও এতিমখানায়।

শেফালি খাতুনের বাড়ি বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়নের ব্রাহ্মণডাঙ্গা গ্রামে। ৩৮ বছরের এই নারী স্বামীর সংসার থেকে বিছিন্ন হয়ে এখন সংসার চালান ভিক্ষা করে। শারীরিক সমস্যায় লাঠির ওপর ভর করে চলেন। স্পষ্ট করে কথা বলতে পারেন না। তোতলা কথার এই নারীকে গ্রামের লোক ডাকেন ‘শেফা পাগলি’ বলে।

বাঘা বাজারে বুলবুলের দোকানে ভিক্ষা করতে আসা শেফালি খাতুনকে দেখে দক্ষিণ গাওপাড়া গ্রামের রূপচান নামে একজন বলেন, তার গ্রামের গোরস্তান জামে মসজিদে মাইক ও ফ্যান কেনার জন্য অনেক টাকা দিয়েছেন এই ভিক্ষুক। ওই দোকানে তার ভিক্ষা চাওয়াটা ছিল এভাবে- ‘ভাই কয়েকটা টাকা দেন। নিজের খরচ করে যা বাঁচবে, সেই টাকা জমিয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দেব।’

শেফালি জানান, ‘এত টাকা কী হবি, আল্লাহর ঘরে দান করলে মাইনসের উপকার হবি। পরকালে শান্তি পাওয়া যাবি।’ সরেজমিন তার বাড়িতে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেল, বাবার মৃত্যুর পর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া প্রায় এক কাঠা জমিতে ঘর তুলে কোনো রকমে বসবাস করেন তিনি। তারপরও নিজের চিন্তা না করে ভিক্ষার জমানো টাকা দিয়েছেন মসজিদে।

তার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী রঞ্জনা জানান, ভিক্ষার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে সকালে বের হয় শেফালি। ফিরে সন্ধ্যার আগে। জমি থাকলেও পাননি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দের ঘর। তবে সরকারি সুবিধা বলতে প্রতিবন্ধী ভাতা পান তিনি।

গ্রামের রেজাউল ইসলাম জানান, শেফালির বাবা মসলেম প্রামাণিক ছিলেন দিনমজুর। বাবা বেঁচে থাকতে বিয়ে দিয়েছিলেন শেফালির। তবে বিয়ের পর তাকে স্বামীর বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। তখন সে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। এক সন্তানের জননী শেফালি সংসার চালান ভিক্ষা করে।

বাঘা পৌরসভার দক্ষিণ গাওপাড়া গোরস্তান জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সামসুজ্জোহা সরকার ও মসজিদের মোয়াজ্জিন রফিকুল ইসলাম জানান, দফায় দফায় সর্বমোট ৪০ হাজার টাকা দিয়েছেন শেফালি। সেই টাকা দিয়ে মসজিদের মাইক, ফ্যান ও টাইলস কেনা হয়েছে।

এবিসিবি/টিএস

Translate »