চট্টগ্রামে যুবক খুন: তিন নেতাকে বহিষ্কার করল বিএনপি
চট্টগ্রাম নগরে আধিপত্য বিস্তারের জেরে খুনের ঘটনায় বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠনের তিন নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত নেতারা হলেন নগরের পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সবুজ, তার ভাই নগর ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এবং কৃষক দল নগর শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম।
রোববার (১৩ অক্টোবর) তিনটি অঙ্গসংগঠন আলাদা আলাদা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তাদের বহিষ্কার করেছে।
এবিষয়ে নগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ইদ্রিস আলী বলেন, দলীয় শৃঙ্খলাপরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাইফুল ইসলাম ওরফে বার্মাইয়া সাইফুলকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে দলের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের তার সঙ্গে কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কৃষক দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলমকে বহিষ্কার করা হয়।
মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহদপ্তর সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে পাঁচলাইশ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. সবুজকে বহিষ্কার করা হয়।
এর আগে শুক্রবার রাতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামের বায়েজিদ বোস্তামী থানার বার্মা কলোনির মো. সবুজ ও শান্তিনগর কলোনির মো. শাহ আলমের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে শান্তিনগর এলাকায় যুবক মো. ইমন গুরুতর আহত হন। রাতে তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে বায়েজীদ বোস্তামী থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের গাড়ির ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে আরেকটি মামলা করেছে।
জানতে চাইলে বায়েজীদ বোস্তামী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান বলেন, পুলিশের গাড়ির ওপর হামলার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। খুনের ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর মোবারক আলী ও তার অনুসারীরা গা ঢাকা দেন। এই সুযোগে নগরের বায়েজীদ বোস্তামী থানার অপরাধপ্রবণ এলাকা বার্মা কলোনি, শান্তিনগর কলোনিসহ আশপাশের এলাকায় জায়গা দখল এবং মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন স্থানীয় কিছু নেতা-কর্মী। এরই জেরে গত শুক্রবার স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা মো. সবুজ ও তার ভাই ছাত্রদল নেতা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কৃষক দল নেতা শাহ আলমের অনুসারীদের সংঘর্ষ বাধে। সেখানে মারা যান সবুজের অনুসারী মো. ইমন।
কৃষক দল নেতা শাহ আলম নগর বিএনপির সদস্য আর ইউ চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে আর ইউ চৌধুরী নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর অনুসারী। অপর দিকে সাইফুল ও তার ভাই সবুজ নগর ছাত্রদলের সাবেক নেতা আহমদুল আলমের অনুসারী বলে জানান দলের সংশ্লিষ্টরা। আহমদুল আলম নগর বিএনপির সদস্যসচিব নাজিমুর রহমানের অনুসারী। তবে বহিষ্কৃত তিন নেতার কেউ তাদের অনুসারী নন বলে দাবি করেন তারা।
পুলিশ জানায়, বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা সাইফুল এলাকায় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে চাঁদা না পেয়ে খুলশী থানার কর্ণফুলী কাঁচাবাজারে সামনের রেললাইনে বসা দুই দোকানি আলাউদ্দিন ও রাশেদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে তার দলের লোকজন। ছাত্রদল নেতা সাইফুলের বিরুদ্ধে ২৩ টি এবং তার ভাই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সবুজের বিরুদ্ধে ৩০ টি মামলা রয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
-ইত্তেফাক