আবার বৃষ্টি, উদ্বিগ্ন বন্যা দূর্গত মানুষ

জেলা প্রতিনিধিঃ সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার যেসব স্থান থেকে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে সেসব এলাকায় এখন চলছে আশ্রয়হীন মানুষের বিলাপ। অনেকেই বড় সড়কের পাশে ত্রিপল বা পলিথিন টানিয়ে বসবাস করছেন। আতঙ্কে তাদের রাত কাটে নির্ঘুম। ঘর গেছে। গেছে আসবাবপত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও। এদিকে শুরু হয়েছেআবার বৃষ্টি। এতে বানভাসি মানুষের উদ্বেগ বাড়ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২ জেলার অন্তত অর্ধকোটি মানুষ চোখে এখন আঁধার দেখছেন।
সোম-মঙ্গলবার কড়া রোদে বন্যা দূর্গত মানুষেরা একটু স্বস্তিতে ছিলেন। কিন্তু গত মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। হালকা ও মাঝারি আকারের বৃষ্টিতে নদনদীর পানিও বাড়তে থাকে। গতকাল বুধবার আবহাওয়া বার্তায় জানানো হয়, সিলেটে ৫০-৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে, গত রবিবার পর্যন্ত বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এতে চলমান বন্যা পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয় তা ভেবে বানভাসিরা অস্থির সময় কাটাচ্ছেন।
ভয়াবহ বন্যায় সিলেট বিভাগের ৪ জেলার ৬৩ লাখ লোক বিপন্ন হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সিলেট ও সুনামগঞ্জেই লক্ষাধিক লোক গৃহহারা। যারা বাড়িহারা হয়েছেন তারা আশ্রয়শিবির বা বড় সড়কের পাশে ঠাঁই নিয়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক ও সিলেট-জগন্নাথপুর আঞ্চলিক সড়কের পাশে পলিথিন টানিয়ে শত শত পরিবার বসবাস করছে। রাতে ঘুমাতে পারেন না তারা। কখন যে বেপরোয়া তাদের গাড়িগুলো পিষে দিয়ে যায়।
সিলেট সফরকালে বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট সিলেটের সাম্প্রতিক বন্যার জন্য দায়ী করেছেন জলবায়ু পরিবর্তনকে। এ কারণে আগামীতে এ অঞ্চলে আরো বেশি বন্যার ঝুঁকি রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বন্যা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে কাজ করেন শাবিপ্রবির সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল (সিইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. মুস্তাক আহমদ জানান, ‘সিলেটের সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও বন্যার সাথে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপার রয়েছে। তবে এটাকে পুরোপুরি জলবায়ু পরিবর্তন বলতে হলে, আগামী কয়েক বছরের তথ্য-উপাত্ত মিলাতে হবে।’ তিনি জানান, ‘সিলেটের নদনদী ও জলাধারগুলো পানি ধারণ করতে পারছে না। কোন কোন স্থানে প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে—এটা আইডেন্টিফাই করতে হবে।’ সিলেটে আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন, ‘সিলেটে ৬৫ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে এবারকার বৃষ্টি।’
বন্যায় প্রায় চার লাখ গবাদি পশুর মৃত্যু :সুনামগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তিন লাখ ৮৭ হাজার ৫২৮টি গবাদি পশুর। এর মধ্যে রয়েছে গরু, মহিষ, ছাগল, হাঁস ও মুরগি। যা এই হাওর জেলার মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হিসেবেই রয়ে যাবে।
এবিসিবি/এমআই