Type to search

সারাদেশ

ডিসিকে মঞ্চে রেখে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান ঘিরে কিশোরগঞ্জে তোলপাড়

মহান বিজয় দিবসে কিশোরগঞ্জে জেলা প্রশাসনের মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসককে মঞ্চে রেখেই শহীদ ‘আবু সাঈদকে কটূক্তি এবং জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়েছেন এক মুক্তিযোদ্ধা।

সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ প্রচার হওয়ার পর এ নিয়ে তোলপাড় চলছে। অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বে বক্তাদের সিংহভাগই ছিলেন আওয়ামী ঘরানার মুক্তিযোদ্ধা। ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীকেও মঞ্চে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের পাশে বসার অভিযোগও করেছেন অনেকে। এ রকম পরিস্থিতিতে বীর শহীদ আবু সাঈদকে নিয়ে ডিসি এবং এসপির সামনে কটূক্তি ও বিতর্কিত স্লোগান এবং ফ্যাসিবাদের দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বুধবার বেলা ১১টায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কিশোরগঞ্জ জেলার ব্যানারে ডিসি অফিস প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জেলা সমন্বয়ক ইকরাম হোসাইন। অভিযোগ ওঠেছে, আওয়ামী ঘরানার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাধান্য দিয়ে জেলা প্রশাসনের তরফে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়। সোমবার দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বীর মুক্তিযোদ্ধা, যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনা সভায় আওয়ামী ঘরানার একাধিক মুক্তিযোদ্ধা বক্তব্য রাখেন। তাদের মধ্যে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এবি ছিদ্দিক ও ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়াসহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী ঘরানার মুক্তিযোদ্ধা বক্তব্য রাখেন। ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া তার বক্তব্যে বিজয় দিবসের পোস্টারে শহীদ আবু সাঈদের ছবি ব্যবহারের কড়া সমালোচনা করেন। তিনি প্রশ্ন করে বলেন, আবু সাঈদ শহীদ হয়েছে, কার সাথে যুদ্ধ করে শহীদ হয়েছে? কোন দেশের সাথে তার যুদ্ধ হয়? ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া বলেন, তারা আন্দোলন করছে, সংগ্রাম করছে, দেশটাকে এক হাত থেকে আরেক হাতে পরিবর্তন করছে। আবু সাঈদের ছবি না দিয়ে যদি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি দিতো, তাহলে আমাদের কোন আপত্তি ছিলো না। এ ব্যাপারে তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে ব্যাখা দাবি করে ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খানের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী ঘরানার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক দুই কমান্ডার এবি ছিদ্দিক ও ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া ছাড়াও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী, সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট নাসির উদ্দিন ফারুকী, মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার মাহবুব আলম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মিজানুর রহমান খান, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান ভূঞা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া আওয়ামীপন্থী হিসেবে পরিচিত। তার ছেলে খালেদ সাইফুল্লাহ সাফাত জেলা ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। অন্যদিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এবি ছিদ্দিক একজন তুখোড় আওয়ামী লীগার। তিনি কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি’র একান্ত সহচর হিসেবে পরিচিত। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আওয়ামী লীগের সময়ে যাদের দাপটের সাথে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেখা যেতো, তাদের অনেককেই এখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দাপটের সাথেই অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। তাঁরা বক্তব্যও দেন। সোমবার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সরব উপস্থিতি এবং বক্তব্য দিতে দেখা যায়। এর মধ্যে সাবেক কমান্ডার ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া বক্তব্য শেষ করার সময় জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দেন। কিন্তু এ নিয়ে কেউ বাধ-প্রতিবাদ করেননি। বরং অনেকেই হাততালি দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন প্রোগ্রামে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে আমরা বিভিন্ন সময়ে সতর্ক করেছি। কিন্তু তিনি আমাদের কোনো কথা শুনছেন না। এরই ফলশ্রুতিতে আজকে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এমন একটি ঘটনা ঘটেছে, যা মেনে নেয়ার মতো নয়। আমি মনে করি, এটি জেলা প্রশাসনের ব্যর্থতা। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।
এ ব্যাপারে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বলেন, কিশোরগঞ্জে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ২৪ এর শহীদ ভাইদের সঙ্গে এটি প্রতারণা। আমরা মনে করি, প্রশাসনে আওয়ামী লীগের অনেক দোসর রয়েছে। আওয়ামী লীগের সময় তারা দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ এবং পদোন্নতি লাভ করেছে। প্রশাসনের অনেকে মনে করে যে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে। আশা করি, জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান সোমবার সাংবাদিকদের বিষয়টি শুনতে পারেননি জানালেও মঙ্গলবার তাকে কয়েকবার মোবাইল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
-মানবজমিন
Translate »