কমিশন বাতিল চায় হেফাজত, প্রতিবেদনে বিস্মিত জামায়াত

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশমালা দ্রুত বাতিলের দাবি জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি বলেছে এসব সুপারিশ কোরআনের বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ইসলাম ও মুসলিম পরিচয়ের অস্তিত্বের ওপর পরিকল্পিত আঘাত। এদিকে নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন ও কমিশন বাতিল চেয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল দলটির ফেসবুক পেজে বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন দেখে বিস্মিত। যখন নৈতিকতার অভাবে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং পারিবারিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক শৃঙ্খলা ও সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনার পরিবর্তে সুপারিশমালায় এমন কিছু গর্হিত বিষয় নিয়ে আসা হয়েছে, যা সমাজকে অনিশ্চয়তা ও চরম অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দেবে। কতিপয় সুপারিশ কোরআন এবং হাদিসের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। পাশাপাশি সব ধর্মের মূল্যবোধকে তছনছ করে দেবে। দেশের জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করবে।
এদিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে কমিশনের সুপারিশমালা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। বিবৃতিতে বলা হয়, এই প্রস্তাবনার মাধ্যমে দেশে ধর্মীয় ভারসাম্য, পারিবারিক কাঠামো ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টার কাছে যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, তা ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কমিশনের সুপারিশমালায় মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিল করে নারী-পুরুষকে সমান সম্পত্তি দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাতিল করার অর্থ সরাসরি কোরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া।
সুপারিশমালায় জিনাকে উৎসাহিত ও বিবাহকে নিরুৎসাহিত করে সরাসরি কোরআনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া হয়েছে। গোলাম পরওয়ার বলেন, সুপারিশমালায় সব ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা হলে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ সবাইকে ধর্মীয় পারিবারিক বিধান থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি ধর্মহীন কাঠামোয় আসতে বাধ্য করা হবে। এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম লঙ্ঘন। প্রতিবেদনে নারী-পুরুষের পারিবারিক ভূমিকাকে অভিন্নভাবে দেখার প্রস্তাব করা হয়েছে। দেশের ইসলামিক স্কলাররা মনে করেন, ইসলাম নারী-পুরুষের মর্যাদা সমান মনে করলেও তাদের ভূমিকায় প্রাকৃতিক পার্থক্যকে স্বীকার করে। তাই ‘নারী-পুরুষের পারিবারিক ভূমিকাকে অভিন্নভাবে দেখার’ প্রস্তাব ইসলামী সমাজব্যবস্থাকে বিকৃত করার অপপ্রয়াস ছাড়া কিছুই নয়।
হেফাজতের দাবি
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সব ধর্মের জন্য অভিন্ন পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন প্রণয়নের প্রস্তাব বাতিল চেয়েছে হেফাজতে ইসলাম। এ ছাড়া সংবিধানের মূলনীতিতে বহুত্ববাদ যুক্ত করার প্রস্তাবের প্রতিবাদ করেছে সংগঠনটি। এর পরিবর্তে পঞ্চদশ সংশোধনীর পূর্বের অবস্থায় থাকা ‘আল্লাহর উপর আস্থা এবং বিশ্বাস’ মূলনীতিতে প্রত্যাবর্তন চেয়েছে। দ্রুত এসব প্রস্তাব এবং নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়েছে তারা। দাবি আদায়ে আগামী ৩ মে তারা রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে।
গতকাল রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে হেফাজতে ইসলামের কার্যনির্বাহী পরিষদের জরুরি বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মাওলানা সাজেদুর রহমান। তিনি বলেন, ৩ মে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ হবে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ্ মুহিদুল্লাহ বাবুনগরী।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ও হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক তাদের দাবিগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মীয় বিধানের বিশেষ করে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন ও ইসলামী পারিবারিক আইনকে নারীর প্রতি বৈষম্যের কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। হেফাজতে ইসলাম এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছে। এ ছাড়া সংবিধান সংস্কার কমিশনের ‘বহুত্ববাদ’ যুক্ত করার প্রস্তাব বাতিল করতে হবে।
তিনি বলেন, ৩ মের মধ্যে সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত প্রস্তাবগুলো বাতিল করা না হলে মহাসমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। মহাসমাবেশ সফল করতে আগামী মঙ্গলবার থেকে ১ সপ্তাহ গণসংযোগ ও ২৫ এপ্রিল জুমার নামাজের পর প্রতিটি জেলা, উপজেলায় বিক্ষোভ হবে।
-দৈনিক সমকাল