Type to search

Lead Story বাংলাদেশ রাজনীতি

আয়-ব্যায়ে ফুলে ফেঁপে উঠছে আওয়ামী লীগ

আয়-ব্যায়ে ফুলে ফেঁপে উঠছে আওয়মী লীগ

ঢাকা : দেশের বড় দুই রাজনৈতিক (আওয়ামী লীগ-বিএনপি) দলের মধ্যে বাৎসরিক আয়-ব্যয়ে এ বছর এগিয়ে আছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগের আয় ও ব্যয় ১০ গুণ বেশি। তবে এ বছর দুটি দলেরই আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি। অন্যদিকে ব্যয়ের চেয়ে আয় বেড়েছে জাতীয় পার্টির। নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দলগুলোর দেয়া আয়-ব্যয়ের তথ্য থেকে জানা যায়, ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩৩ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩১ টাকা। এ বছর দলটির আয় কমেছে ৫১ শতাংশ এবং ব্যয় বেড়েছে ২১ শতাংশ।

অন্যদিকে ২০২০ সালে বিএনপির আয় হয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার ১৪৯ টাকা বিপরীতে ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৫১৩। গতবারের মতো এই বছরও দলটির আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়েছে।

ব্যয়ের চেয়ে আয় বেড়েছে জাতীয় পার্টির (জাপা)। ১৮ জুলাই নির্বাচন কমিশনে (ইসি) ২০২০ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে দলটি। দলটির অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, এ বছর আমাদের ব্যয়ের চেয়ে আয় বেশি। ২০২০ সালে দলটির আয় হয়েছে ১ কোটি ২৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৭৭ টাকা আর ব্যয় হয়েছে ৭৬ লাখ ৪ হাজার ১২০ টাকা। জমা রয়েছে ৫১ লাখ ৬৮ হাজার ৭৫৭ টাকা।

রোববার নির্বাচন কমিশনে ২০২০ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। জমা দেয়া বার্ষিক আয়-ব্যয় ও লেনদেন প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেন দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া ও উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান।

ইসি সচিবের কাছে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়ার পর আবদুস সোবহান গোলাপ জানান, ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩৩ টাকা। যা ২০১৯ সালের আয়ের চেয়ে ১০ কোটি ৬৮ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা কম। ২০১৯ সালের চেয়ে আয় কমেছে ৫১ শতাংশ। ২০১৯ সালে দলটি আয় করেছিল ২১ কোটি ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৩০ টাকা।

আয় কম হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, ২০২০ সালে মনোনয়নপত্র বিক্রি বাবদ অর্থ আগের বছরের তুলনায় কম হয়েছে। আয়ের প্রধান খাতগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের চাঁদা, মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের দেয়া অনুদান প্রভৃতি। তিনি বলেন, ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩১ টাকা। যা ২০১৯ সালের ব্যয়ের চেয়ে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৬ টাকা বেশি। ২০১৯ সালের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে ২১ শতাংশ। ২০১৯ সালে দলটির ব্যয় হয়েছিল ৮ কোটি ২১ লাখ ১ হাজার ৫৭৫ টাকা।

ব্যয় সম্পর্কে গোলাপ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, বিভিন্ন পর্যায়ে দলীয় প্রার্থীদের অনুদান, পত্রিকা-প্রকাশনা ও সংশ্লিষ্ট খরচ বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে দলটির ব্যয় বেড়েছে। ব্যয়ের প্রধান খাতের মধ্যে রয়েছেÑ অফিস রক্ষণাবেক্ষণ ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, সংগঠন পরিচালনা ব্যয় ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম পরিচালনা ব্যয়। বর্তমানে দলটির তহবিলে ৫০ কোটি ৭৩ লাখ ৩৭ হাজার ১৯৪ টাকা জমা রয়েছে বলেও জানান তিনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের বছর ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছিল ২৪ কোটি ২৩ লাখ ৪২ হাজার ৭০৭ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ৫৫৭ টাকা। গতবারের মতো এই বছরও দলটির আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়েছে।

এর আগে গত ২৬ আগস্ট নির্বাচন কমিশনে ২০২০ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। গতবারের মতো এই বছরও দলটির আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স ইসি সচিবের কাছে দলের ২০২০ সালের আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেন।

এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, ২০২০ সালে বিএনপির আয় হয়েছে ১ কোটি ২২ লাখ ৫৩ হাজার ১৪৯ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১ কোটি ৭৪ লাখ ৫২ হাজার ৫১৩। ব্যয় বেশি হয়েছে ৫১ লাখ ৯৯ লাখ ৩৬৪ টাকা। যা বিএনপির তহবিল থেকে খরচ করা হয়েছে।

২০১৯ সালে বিএনপির আয় ছিল ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ৭১০ টাকা। আর ব্যয় ছিল ২ কোটি ৬৬ লাখ ৮৬ হাজার ১৩৭ টাকা। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়েছিল ১ কোটি ৭৯ লাখ ৩৩ হাজার ৪২৭ টাকা।

২০১৮ সালে দলটির আয় হয়েছিল ৯ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার ৩৮০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ৩ কোটি ৭৩ লাখ ২৯ হাজার ১৪৩ টাকা। তখন দলের ৬ কোটি ১৩ লাখ ২৭ হাজার ২৩৭ টাকা উদ্বৃত্ত ছিল।

ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর কোন খাত থেকে কত টাকা আয় হয়েছে, কত টাকা ব্যয় হয়েছে, বিল-ভাউচারসহ তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য কমিশনের নির্ধারিত একটি ছকে জমা দিতে হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ১৯৭২-এর ৯০-এইচ (১) (সি) ধারা অনুযায়ী নিবন্ধিত কোনো দল পরপর তিন বছর আর্থিক প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট দলের নিবন্ধন বাতিলের ক্ষমতা রয়েছে ইসির। বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৩৯টি।

৩১ জুলাইয়ের মধ্যে হিসাব জমা দেয়ার জন্য গত ৭ জুন নির্দেশনা দিয়েছিল ইসি। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে অনেক দলই গুছিয়ে উঠতে না পারায় ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়।

টিএস

Translate »