Type to search

রাজনীতি

‘মামলামুক্ত’ তারেক রহমান

হত্যা মামলা থেকে দায়মুক্তির উদ্দেশ্যে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে করা মামলা থেকে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ৮ জনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মো. আবু তাহের এই রায় ঘোষণা করেন। ফলে বিচারিক আদালতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপি’র আইনজীবীরা। এক্ষেত্রে দেশে ফিরতেও তার আর কোনো বাধা নেই বলে জানিয়েছেন বিএনপি’র আইনজীবী এডভোকেট বোরহান উদ্দিন।

ঘুষ গ্রহণের মামলা থেকে খালাস পাওয়া অন্য ৬ জন হলেন- বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, তার দুই ছেলে সাফিয়াত সোবহান ও সাদাত সোবহান, তারেক রহমানের সাবেক একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) মিয়া নুরুদ্দিন অপু, আবু সুফিয়ান ও কাজী সলিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল। রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন আবু সুফিয়ান ও কাজী সলিমুল হক। আইনজীবী আমিনুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করার জন্য তারেক রহমান, লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অন্যদের বিরুদ্ধে এই মিথ্যা মামলা করেছিল দুদক। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। এর ফলে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালত থেকে মামলামুক্ত হলেন। আর সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর সব আদালত থেকেই মামলা মুক্ত হলেন। তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই।

নথিপত্রের তথ্য অনুযায়ী, বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক হুমায়ুন কবির হত্যার ঘটনায় ২০০৬ সালের ৪ঠা জুলাই মামলা হয়। এই হত্যাকাণ্ড ধামাচাপা দিতে ২১ কোটি টাকা ঘুষ লেনদেনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ৪ঠা অক্টোবর মামলা করে দুদক। মামলায় ৮ আসামির বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ২৩শে এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয়। একই বছরের ১৪ই জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। গতকাল আদালত খালাস দিলেন সবাইকে।

বিএনপি’র আইনজীবী বোরহান উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, আসামিদের বিপক্ষে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি দুদক। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে আর কোনো মামলা নেই। দেশে ফিরে রাজনীতি করতে আর কোনো বাধা নেই। তবে ২০২৩ সালে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। উচ্চ আদালত থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় ওই মামলার দণ্ড চলমান বলে জানান বিএনপি’র সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক এভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। এই আইনজীবীর তথ্য মতে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতে আর কোনো মামলা নেই।

আলোচিত যত মামলা
অর্থ পাচার মামলা: ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার ৮৪৩ টাকা পাচারের অভিযোগে ২০০৯ সালের ২৬শে অক্টোবর তারেক রহমান ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ মো. মোতাহার হোসেন ২০১৩ সালের ১৭ই নভেম্বর এ মামলার রায় দেন। তাতে তারেককে বেকসুর খালাস দেন। রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে ২০১৬ সালের ২১শে জুলাই তারেকের খালাসের রায় বাতিল করে হাইকোর্ট। তারেককে ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর গত ১২ই নভেম্বর আপিল বিভাগ মামুনের আপিল গ্রহণ করেন। তাতে তিনি ও তারেক রহমান এই মামলায় অব্যাহতি পান।

২১শে আগস্ট  গ্রেনেড হামলা মামলা: বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২০০৮ সালে সিআইডি তদন্ত করে ২২ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দিলে তার ভিত্তিতে শুরু হয় বিচার। পরের বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর অধিকতর তদন্তে আসামির তালিকায় যোগ হন তারেক রহমানসহ ৩০ জন। এরপর ২০১৮ সালের ১০ই অক্টোবর বিচারিক আদালতের রায়ে জীবিত ৪৯ আসামির সবার দণ্ড হয়েছিল। তারেক রহমানকে দেয়া হয়েছিল যাবজ্জীবন সাজা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১লা ডিসেম্বর দেয়া রায়ে তারেকসহ সব আসামিকে খালাস দিয়েছে হাইকোর্ট।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলা: তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে ২০০৮ সালে করা এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে তারেক রহমানের ১০ বছর কারাদণ্ড হয়। দুদকের এই মামলায় ট্রাস্টের ২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি রায় দেয় ঢাকার একটি আদালত। ২০১৮ সালের ৩০শে অক্টোবর হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের ৫ বছরের সাজা ১০ বছর বাড়িয়ে রায় দেন। ২০১৯ সালের ১৪ই মার্চ এ রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়া পৃথক দুটি লিভ টু আপিল করেন। গত বছরের ১১ই নভেম্বর আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার লিভ টু আপিল মঞ্জুর এবং সাজার রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত করে আদেশ দেন। এর ধারাবাহিকতায় সাজার রায়ের বিরুদ্ধে পৃথক আপিল করেন খালেদা জিয়া। আপিলের ওপর ৭ই জানুয়ারি শুনানি শুরু হয়। গত ১৬ই জানুয়ারি এই মামলায় হাইকোর্টের দেয়া ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সবাইকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

নড়াইলের মানহানির মামলা: ২০১৪ সালে নড়াইলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মানহানির মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। মামলার বাদী মামলা চালাতে অস্বীকৃতি জানালে গত ৩১শে ডিসেম্বর দুপুরে নড়াইলের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-২ এর বিচারক মেহেদী হাসান মামলাটি খারিজ করে দেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ১৬ই ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এক সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্পর্কে দেয়া একটি বক্তব্যকে অবমাননাকর বলে আখ্যা দিয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একটি মানহানির মামলা করা হয়। শাহজাহান বিশ্বাস নামে এক মুক্তিযোদ্ধা ওই বছরের ২৪শে ডিসেম্বর এ মামলা করেন। মামলায় একই আদালত ২০২১ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে ২ বছর কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড প্রদান করেন। পরবর্তীতে বাদী উচ্চ আদালতে রিভিউ পিটিশন করলে বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে উক্ত আদালত সাজা প্রদানকারী আদালতকে মামলাটি পুনর্বিচারের আদেশ দেন। এ অবস্থায় বাদী মামলা পরিচালনায় অস্বীকৃতি জানালে মামলার ধার্য দিনে আদালত মামলা খারিজ করে দেন।

-মানবজমিন

Translate »