Type to search

Lead Story রাজনীতি

‘জনগণের সঙ্গে নয়, ভারতের সম্পর্ক ছিল হাসিনার সঙ্গে’

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনে বাংলাদেশে প্রভাব কমতে শুরু করেছে ভারতের। এর কারণ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, ‘ভারতের সম্পর্ক বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে ছিল না, ছিল শেখ হাসিনার সঙ্গে। সেটাই ব্যর্থ হয়েছে।’

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সংবাদমাধ্যম শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ান এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি একথা বলেন।
নিবন্ধে বলা হয়েছে, ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং সম্প্রতি যা বলেছেন তার পেছনে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সম্ভবত অবদান রেখেছে। প্রথমত, তিনি ঘরোয়া নির্বাচনী এলাকায় ভাষণ দিতে চেয়েছিলেন এবং ভারতীয় জনগণকে আশ্বস্ত করতে চেয়েছিলেন।
তিনি তার বক্তৃতায় যা উল্লেখ করেছেন তা থেকে এটি বেশ স্পষ্ট যে— ‘আমাদের অপ্রত্যাশিত (কিছু) মোকাবিলা করতে হবে।’ তার এই ‘অপ্রত্যাশিত’ শব্দটি থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি মূলত বাংলাদেশের সাম্প্রতি পট-পরিবর্তনকে বোঝাতে চেয়েছেন, যেটাকে ভারতের জন্য বড় ধাক্কা হিসাবে দেখা হচ্ছে। মূলত ভারতের গণমাধ্যম এবং ভারতের কিছু নীতিনির্ধারক গত ৫ আগস্টের পরে তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন।
নিবন্ধে লেখক বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি ভারতের অভ্যন্তরীণ নির্বাচনী ব্যবস্থাকে আশ্বস্ত করা দরকার ছিল— ‘দেখুন, এটি অপ্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু আমরা এটির দিকে নজর দিচ্ছি,’ বা ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি, আমরা জানি সেখানে কী ঘটছে’ ইত্যাদি। আমি নিশ্চিত, ভারতের বেশিরভাগ অংশ অবশ্যই এই ঘটনায় পুরোপুরি হতবাক হয়েছে, কারণ গত এক দশক বা তারও বেশি সময় ধরে ভারত বলে আসছিল— বাংলাদেশের সাথে তাদের সম্পর্ক সবচেয়ে ভালো।’’
দ্বিতীয় কারণটি হলো— আমরা এখন এমন একটি বহুমুখী বিশ্বে আছি যেখানে ভারত অন্যতম প্রধান শক্তি হিসাবে তার অবস্থান অর্জন করতে চায়। দেশটির অর্থনীতি আয়তনের দিক থেকে ইতোমধ্যেই যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে ছাড়িয়ে গেছে।
আর তাই সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ভারতও যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করতে চেয়েছিল। কারণ ভারতের সাধারণ বর্ণনায় (দাবি করা হয়েছে) বাংলাদেশে অভ্যুত্থানের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল, ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী একইসঙ্গে চীনকেও সতর্ক করতে চেয়েছেন।
তিনি তাদের বলার চেষ্টা করেছেন, বাংলাদেশে পরিবর্তন হলেও ভারত প্রস্তুত রয়েছে। নয়াদিল্লি যুক্তরাষ্ট্রকে বিশেষভাবে সতর্ক করেছে কারণ, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় ইস্যুসহ অনেক ক্ষেত্রে ভারত এই দেশের সাথে জড়িত।
কিন্তু একই সময়ে, ভারত ক্রমবর্ধমানভাবে দেখিয়ে চলেছে— তার পররাষ্ট্রনীতি হতে হবে দ্য ইন্ডিয়া ওয়ে (এস জয়শঙ্করের বইয়ের শিরোনাম অনুসারে)। ভারতে এ বিষয়ে কিছুটা ঐক্যমতও রয়েছে। যদিও নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছে ভারত। এছাড়া চীনের সাথেও ভারতের সম্পর্ক রয়েছে, বিশেষ করে যখন ব্রিকস, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা এবং মিয়ানমারের ইস্যু সামনে আসে। আমি মনে করি, ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর এই বিশেষ বক্তব্যের মাধ্যমে এটিকেও কোনওভাবে সম্বোধন করা হয়েছিল।
আর তৃতীয় কারণটি হলো— বাংলাদেশকে স্বাভাবিকভাবে না নেওয়া, যেমনটি ভারত নিয়েছিল আওয়ামী লীগের শাসনামলে। তাই, আমি মনে করি সেই বার্তাটি ভারতীয় শ্রেণিবিন্যাস এবং স্টেকহোল্ডারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এটা বেশ সোজা একটি কারণ। বিশেষ করে যখন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা তিস্তার পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা, সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করাসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যেই উল্লেখ করেছেন।
এর আগে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস) ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিয়ে বিশেষ বক্তব্যও দিয়েছেন। সুতরাং, আমি মনে করি ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী যা বলতে চেয়েছেন তা হলো, গত এক দশক বা তারও বেশি সময়ে আওয়ামী লীগ তাদের মাথাব্যথার কারণ ছিল না। এছাড়াও, বাংলাদেশের নতুন শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে কাজ করতে চায় ভারত।
এই তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হলেও বল এখন ভারতের কোর্টে। এখন তারা বাংলাদেশকে কীভাবে মোকাবিলা করবে সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু এই বিষয়ে কথা বলার জন্য সময়টা এখন খুব তাড়াতাড়িই মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশকে ভারত কীভাবে মোকাবিলা করবে বা কীভাবে যুক্ত থাকবে তা আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যাবে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘে অধিবেশনের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা এবং ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যদি বৈঠক হয়, তাহলে তা আমাদের ইঙ্গিত দিতে পারে কী ধরনের পরিবর্তন আসবে।তবে নয়াদিল্লি নিঃসন্দেহে নিশ্চিত যে, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকার থেকে ভিন্ন। সুতরাং, তাদের সঙ্গে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

-ইত্তেফাক

Translate »