Type to search

রাজনীতি

ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে বললেন সাতক্ষীরায় কর্মী সম্মেলনে ডা. শফিকুল রহমান

বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামীতে আমরা একটি সম্প্রীতির বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই। সেই বাংলাদেশে মানুষে মানুষে থাকবে না কোন ভেদাভেদ। সকল ধর্ম বর্ণের মানুষ সমান সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। সমাজের প্রতিটি মানুষের অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে চাই। শনিবার বিকালে সাতক্ষীরা সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জেলা জামায়াতের বার্ষিক কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দীর্ঘ ১৭ বছর পর জামায়াত ইসলামীর রাজধানী নামে খ্যাত সাতক্ষীরার কর্মী সম্মেলন বিশাল জন সমুদ্রে পরিণত হয়। কর্মী সম্মেলন উপলক্ষে সাতক্ষীরা সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ দুপুরের আগেই কানাই কানাই পূর্ণ হয়ে যায়। শহরের প্রতিটি রাস্তায় মানুষের ভিড়ে যান চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।

সম্মেলনে প্রধান অতিথি ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, কয়েক হাজার ছাত্র জনতার রক্তের বিনিময়ে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। আমাদের সন্তানদের এই জীবনের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু বাংলাদেশের আকাশে কিছু শকুন ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। শকুনের দিকে তীর্যক দৃষ্টি রাখতে হবে। যেন কোন শকুন মাটিতে নামতে না পারে।
তিনি আরো বলেন, বিগত ১৭ বছরে সাতক্ষীরার মানুষ সব চেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। দেশের মধ্যে সাতক্ষীরার একজন সংসদ সদস্যের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তিনি এই জনপদের সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল। সাতক্ষীরার মানুষের উপর তারা জুলুম করেছে, খুন করেছে, অনেকের পঙ্গু বানিয়েছেন, ইজ্জতের উপর হাত দিয়েছে, সম্পদ লুটপাট করেছে। মানুষকে তারা তাদের দাশে পরিণত করেছে। সারাদেশে একই অবস্থা ছিলো। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিলো সাতক্ষীরায়।


শফিকুর রহমান বলেন, শিক্ষা পেয়ে সবাই যেন মানুষ হয়। শিক্ষা নিয়ে যেন কেউ ডাকাত না হয় এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা আমরা গড়ে তুলতে চাই।
জামায়াতের আমির বলেন, মা-বোনরা ঘরেও সুরক্ষিত থাকবে, কর্মস্থলেও সুরক্ষিত থাকবে। তাদের দিকে কেউ চোখ তুলে তাকাতে পারবে না। আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয় যে, আমরা ক্ষমতায় আসলে নারীদের ঘর থেকে বের হতে দেওয়া হবে না। কিন্তু কথা দিচ্ছি এমন হবে না।
তিনি বলেন, মহানবী (সা.) সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও নারীদের যুক্ত করেছেন। যুদ্ধ ক্ষেত্রে নারীদের যুক্ত করেছেন। তাই আমরা তাদের আটকে রাখার কে? তারা সামর্থ্য অনুযায়ী দেশের জন্য আত্মনিয়োগ করবে। তাদের পোশাক নিয়ে আমরা বাধ্য করব না। তারা ইচ্ছামতো পোশাক পরতে পারবে।
আমরা এমন একটি দেশ চাই যেখানে মসজিদ, মন্দির, মঠ, গির্জা কোনো কিছুই পাহারা দেওয়া লাগবে না উল্লেখ করে শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চমৎকার বাগান। এই বাগানে মাঝে মধ্যে হুতুমপেঁচা ঢুকে পড়ে। এদের সম্পর্ক সতর্ক থাকতে হবে।


একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীও ‘ভিআইপি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা তিন দিন পরিষ্কার না করলে আমরা ঘর থেকে বের হতে পারব না। তাই তাদেরও মর্যাদা দিতে হবে। সেই সম্প্রীতির বাংলাদেশ আমরা গড়তে চাই। আমরা জাতীয় স্বার্থে দল ও ধর্মের ঊর্ধ্বে থেকে কাজ করতে চাই। এই দেশকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ বানাতে চাই। কিন্তু আকাশে কালো শকুন ঘুরছে। এই শকুন মাঝে মাঝে ফুঁস করছে। তাই সতর্ক থাকতে হবে। যে যেভাবেই উসকানি দিক, আমরা ফাঁদে পা দেব না। তিনি বলেন, কোরআন, দ্বীন ও মজলুমের কথা বলতে গিয়ে সারা দেশে যত মানুষ প্রাণ দেননি, তার চেয়ে বেশি প্রাণ দিয়েছে সাতক্ষীরার মানুষ। তাই জামায়াতের কাছে সাতক্ষীরার অবস্থান অনন্য উচ্চতায়।


জামায়াতের আমির বলেন, আমাদের দেশে অফুরন্ত সম্পদ। কিন্তু তা কাজে আসছে না। যারাই ত্রাতার দায়িত্বে থাকে, তারাই পকেট ভরে। বিগত সরকার সাতক্ষীরার মানুষের ওপর জুলুম করেছে। খুন করেছে, গুম করেছে। জনগণের অধিকার দেয়নি। দেশকে যারা ভালোবাসে তারা দেশ থেকে পালিয়ে যায় না। জামায়াতের দুজন আমিরসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশকে খুনের বন্যায় ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। শত জুলুম অত্যাচারের পরও আমরা পালিয়ে যাইনি। দেশকে যারা ভালোবাসে তারা পালাতে পারে না। আমরা এই দেশকে গড়তে চাই। এই দেশের এক ইঞ্চি মাটিও আমরা ছাড়বে না।
সম্মেলনে জেলা জামায়াতের আমির শহিদুল ইসলাম মুকুলের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জতউল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মুহাদ্দিস রবিউল বাসার, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি গাজী নজরুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারি গাজী আজিজুর রহমান প্রমুখ। সূত্র- দৈনিক হৃদয় বার্তা

Translate »