স্বস্তিতে রাজধানী ছাড়ছে মানুষ

প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে মানুষ ছুটছে নানা গন্তব্যে। বাস, ট্রেন, লঞ্চ সব যানেই মানুষের উপচে পড়া ভিড়। রাস্তায় ঢল নেমেছে ঘরমুখী মানুষের। এতে ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঢাকা। তবে অতীতের মতো এবার পথে পথে ভোগান্তি অভিযোগ শোনা যায়নি। যাত্রায় স্বস্তির কথা জানিয়েছেন অধিকাংশ যাত্রী। নদীপথে রাজধানীর একমাত্র লঞ্চ টার্মিনাল সদরঘাট ফিরে পেয়েছে তার হারানো গৌরব। সেখানে হাজারো মানুষ ভিড় করেছে লঞ্চ যাত্রার উদ্দেশ্যে।
যাত্রীবোঝাই ট্রেন ছাড়ছে ঢাকা থেকে: গতকাল শনিবার কমলাপুর রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীর চাপ রয়েছে তবে ট্রেনের সূচি ঠিক থাকায় সবাই নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছেন। সময়মতো ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেনগুলো। যাত্রী ভোগান্তি নেই। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন বলেন, ঈদ যাত্রায় আন্তঃনগর, মেইল, কমিউটার মিলে প্রতিদিন ৭০ হাজারের বেশি যাত্রী পরিবহন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ঈদ যাত্রায় প্রতিদিন ৭১টি ট্রেন চলাচল করছে। কমলাপুর স্টেশনে টিকিট ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। যাত্রী নিরাপত্তায় আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত আমরা কয়েক জনকে পেয়েছি যারা জাল টিকিট নিয়ে আসছেন। তাদের আটক করা হয়েছে। এজন্য আমরা যাত্রীদের অনুরোধ করছি ট্রেনের সরকারি অ্যাপ ছাড়া অন্য কোনো স্থান থেকে অনলাইনে টিকিট নেবেন না। যাত্রা পথে জানালার কাচে মোবাইলে কথা না বলা, কারো দেওয়া কিছু না খাওয়ার বিষয়ে সকলকে সচেতন হবে হবে
চির চেনা রূপে সদরঘাট: পদ্মা সেতুর কল্যাণে সারা বছর যাত্রী কম থাকলেও ঈদ আসার সঙ্গে সঙ্গেই চিরচেনা রূপে ফিরেছে রাজধানীর প্রধান ও একমাত্র নৌবন্দর সদরঘাট। লঞ্চ টার্মিনালে দেখা গেছে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। পুরো টার্মিনাল এলাকা জুড়েই ঘরমুখী মানুষের ভিড়। দক্ষিণাঞ্চলের দিকে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো ছিল যাত্রীতে পূর্ণ। লঞ্চগুলোর ডেকও ছিল যাত্রীতে ভরপুর। যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়ে কোলাহলপূর্ণ হয়ে উঠেছে পুরো টার্মিনাল এলাকা। নৌপথে ঘরমুখী মানুষের চাপে গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত রাস্তায় ছিল তীব্র যানজট। এজন্য ঘরে ফিরতে আগেভাগেই অনেককে টার্মিনালে এসে টিকিট কেটে লঞ্চে উঠতে দেখা গেছে। সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাওয়া সব লঞ্চে একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক ও পলিথিন বহন না করতে এবং খাবারের উচ্ছিষ্ট ও আবর্জনা নদীতে না ফেলতে নির্দেশনা দিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত (মোবাইল কোর্ট)।
এবার আরামদায়ক যাত্রা পাচ্ছি :স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে শেষ সময়ে এসে মানুষ ভিড় করছেন বাসস্ট্যান্ডে। দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতে টিকিট কাটতে ব্যস্ত যাত্রীরা। তবে এবার সড়কে যানজট না থাকায় যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করছেন। গতকাল শনিবার নারায়ণগঞ্জের শিমরাইল মোড় ও সাইনবোর্ডে এমন দৃশ্য দেখা যায়। শারমিন আক্তার নামে এক যাত্রী বলেন, নোয়াখালী গিয়ে শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে ঈদ উদযাপন করব। রাস্তাঘাট ফাঁকা আছে। তাই এবার আর টেনশন নেই।
কাউন্টারে নেই বাড়তি চাপ: শেষ দিকে এসে যানবাহন বা টিকিট কাউন্টারগুলোতে নেই বাড়তি চাপ। সাধারণ সময়ের মতোই যাত্রী নিয়ে ছাড়ছে বাস। রাস্তা ফাঁকা থাকায় কোথাও যানজটের সমস্যাও নেই বলে জানিয়েছেন বাস কাউন্টারের কর্মীরা। গতকাল রাজধানীর সায়েদাবাদ টার্মিনাল এলাকায় বাস কাউন্টার ও আশপাশের এলাকা ঘুরে সাধারণ সময়ের মতোই যাত্রীদের উপস্থিতি দেখা যায়। কোথাও ভিড় দেখা যায়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল যাত্রায় মহাসড়কে যানজট না থাকায় সায়েদাবাদ থেকে প্রায় প্রতিটি বাস নির্দিষ্ট সময় ছেড়ে যাচ্ছে। অপরদিকে বিগত দিনগুলোতে গাবতলীতে আশানুরূপ চাপ না থাকলেও গতকাল সকাল থেকে যাত্রীর উপস্থিত বেড়েছে বলে জানিয়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
ফাঁকা ঢাকায় স্বস্তির যাত্রা: চিরচেনা সেই রাজধানী এখন অনেকটা ফাঁকা। রাস্তায় বের হলে গণপরিবহনের দীর্ঘ সারির দেখা নেই। নেই কোনো যানজট। কমেছে মানুষের আনাগোনা। এছাড়া রাজধানীর অভ্যন্তরে চলাচলকারী অধিকাংশ গণপরিবহনে আসন ফাঁকা থাকতেও দেখা গেছে। তবে যানজটহীন ফাঁকা রাজধানীতে স্বাচ্ছন্দ্যে গাড়ি চলাচল করতে পারায় পরিবহন শ্রমিকেরা কিছুটা খুশি প্রকাশ করলেও যাত্রী সংকটে হতাশার কথা জানাচ্ছেন তারা।
সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালানোর আহ্বান: সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলম গতকাল এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন,বিভিন্ন জনমুখী উদ্যোগ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে জনগণ এবার স্বস্তিতে ঈদ যাত্রা করতে পারছে। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে বিবৃতিতে তিনি দুর্ঘটনা এড়াতে চালকদের সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালানোর আহ্বান জানান। অপর দিকে পৃথক বিবৃতিতে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি হাজি মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার পণ্যবাহী ট্রাকে যাত্রী বহন না করার অনুরোধ জানান।
যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় পার হলো ৯১৬৩টি মোটরসাইকেল: ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে পরিবহনের চাপ নেই। বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার (২৮ মার্চ) রাত ১২টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ৪৮ হাজার ৩৩৫টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পদ্মা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় সোয়া ৪ কোটি টাকা টোল আদায়: পদ্মা সেতুতে গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ কোটি ২৫ লাখ ৪১ হাজার ৩০০ টাকা আদায় হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টা থেকে গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত এ পরিমাণ টোল আদায় করা হয়।
-ইত্তেফাক