Type to search

জাতীয় বাংলাদেশ

সীমান্তে দুর্নীতির কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না

সীমান্তে দুর্নীতির কারণে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলেছেন খোদ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। বলেছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির কারণে স্থল ও জলসীমাসহ  নানা রুট দিয়ে  রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। গতকাল দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন সদ্য সমাপ্ত ব্যাংকক সফর নিয়েও কথা বলেন উপদেষ্টা।

থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পংসার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার ব্যাংককে ছয় দেশের মধ্যে এক অনানুষ্ঠানিক পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান সোয়ে। গত দুই মাসে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে নতুন করে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, আমাদের নীতিগতভাবে অবস্থান  ছিল আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেবো না। তবে পরিস্থিতি কখনো কখনো এমন দাঁড়ায় যে, আমাদের আর কিছু করার থাকে না। সে রকম পরিস্থিতিতে আমরা ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে যে তাদের ঢুকতে দিয়েছি, তাও না। তারা বিভিন্ন পথে ঢুকেছেন।

সীমান্তে দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আর একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রচুর দুর্নীতি আছে সীমান্তে। এটা সত্যি। দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর রোহিঙ্গা ঢুকে যাচ্ছে। নৌকা নিয়ে ঢুকছে। তবে একটা সীমান্ত দিয়ে যে ঢুকছে, বিষয়টা এমন না। বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে  ঢুকছে- এটা আটকানো খুব কঠিন হচ্ছে। তবে আমি মনে করি না, আর একটি ঢল আসবে। যদিও অনেকে আশঙ্কা করছেন। এই আশঙ্কা আমাদেরও আছে। তবে সেই ঢলকে আটকানোর ব্যবস্থা করতে হবে, আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে সঙ্গে নিয়েই।

রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পুরো অঞ্চলে কীভাবে অশনি সংকেত সৃষ্টি করছে জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, এখন বয়স্ক যেসব রোহিঙ্গা আছেন, তারা হয়তো পরিস্থিতি মেনে নেবেন। তবে আগামী ৫ বছর পর যেসব তরুণ রোহিঙ্গার বয়স ২০ বছর হবে, তারা বেপরোয়া হয়ে উঠবেন।  তখন আমাদের সমস্যা বেশি হবে ঠিকই, তবে সেই সমস্যা প্রত্যেকেরই হবে। এর মধ্যেই নৌকায় করে রোহিঙ্গারা অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, মিয়ানমার সীমান্তবর্তী স্ক্যাম সেন্টারের অনেকগুলো চীন নষ্ট করে দিয়েছে। এখন স্ক্যাম সেন্টারগুলো আছে মূলত থাইল্যান্ড ও লাওসের সীমান্তে। এসব সেন্টারে অনেক বাঙালি আটকা পড়েছেন। সবাই যে পাচার হয়ে গেছেন, তা কিন্তু নয়। অনেকেই লোভে পড়ে সেখানে গেছেন।

বঙ্গোপসাগরে বড় বড় শক্তির নজর পড়েছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ওদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক কারণে বঙ্গোপসাগরের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। এ কারণেই আন্তর্জাতিকভাবে বঙ্গোপসাগর বড় বড় শক্তির নজরে পড়েছে। এটাকে এখন সহযোগিতা ও প্রতিযোগিতার কেন্দ্রবিন্দু করতে চায় সরকার। গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-বিআইআইএসএস-এ আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘বঙ্গোপসাগর অঞ্চলে পুনরায় সংযোগ’ শীর্ষক এ সেমিনার আয়োজন করে বিআইআইএসএস ও ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপিং ইকোনমিকস (আইডিই-জেট্রো)।

তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, বাংলাদেশ কখনোই চায় না বঙ্গোপসাগর প্রতিবেশীসহ পরাশক্তির দ্বন্দ্ব সংঘাতের কেন্দ্রে পরিণত হোক। এটা কখনোই হতে দেবে না বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের অধিকারসহ নিরাপদ প্রত্যাবাসন করতে না পারলে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ বঙ্গোপসাগর এলাকা গড়ে তোলার জন্য স্থিতিশীলতা দরকার। এজন্য রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সব অংশীজনকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানাই। তিনি আরও বলেন, জাপান এই অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে চায়। বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। এটা এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা রক্ষা, সমৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করবে।-

-মানবজমিন

Translate »