সিনহা হত্যা মামলায় অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দিলেন এস আই লিয়াকত
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার ঘটনায় অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন অন্যতম প্রধান আসামি লিয়াকত আলী। লিয়াকত টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া ইনচার্জ এবং টেকনাফ থানার পরিদর্শক। তৃতীয় দফায় ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের ২ দিন পর রবিবার (৩০ আগস্ট) কক্সবাজারে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট তামান্ন ফারাহ’র আদালতে এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন লিয়াকত আলী।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাবের সিনিয়র এএসপি খাইরুল ইসলাম জানান, লিয়াকত আলী আমাদের কাছে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে অনেক তথ্য-উপাত্ত দিয়েছেন। আশা করছি, আদালতেও সত্য ঘটনাটাই তিনি উপস্থাপন করেছেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে- আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে লিয়াকত স্বীকার করে নিয়েছেন তার গুলিতে সাবেক মেজর সিনহা নিহত হয়েছেন। বিচারকের খাস কামরায় সাড়ে ৪ ঘন্টার জবানবন্দিতে লিয়াকত আলী সেই রাতের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। বলেছেন সিনহা মো: রাশেদ হত্যার আগে এবং পরের সব ঘটনা। তিনি জানিয়েছেন কিভাবে গুলি করেছেন, এই ঘটনার পরিকল্পনার সঙ্গে আর কে কে জড়িত।
রবিবার (৩০ আগস্ট) দুপুর পৌনে ১২টায় কড়া নিরাপত্তায় লিয়াকতকে আদালতে নিয়ে আসে র্যাব। এই সময়ে আদালত প্রাঙ্গনেওকড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জবানবন্দি দেওয়ার জন্য লিয়াকত আলীকে সরাসরি নেওয়া হয় বিচারক তামান্না ফারাহ’র খাস কামরায়। সেখানে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিচারক একটানা জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
র্যাব সূত্র জানায়, গত শুক্রবার (২৮ আগস্ট) তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করা হয় ওসি প্রদীপ, এসআই লিয়াকত ও এএসআই নন্দ দুলাল এর। রিমান্ডে নেওয়ার ২ দিন পরই লিয়াকত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেন। আজ সোমবার (৩১ আগস্ট) রিমান্ডের শেষ দিনে ওসি প্রদীপ এবং নন্দ দুলালকে আদালতে তোলা হবে। সূত্র জানায়- আসামি এএসআই নন্দ দুলালও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়েছেন। তবে বরখস্তকৃত ওসি প্রদীপ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে সম্মত কি-না তা জানা যায়নি।
এর আগে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএনের ৩ পুলিশ সদস্য পৃথকভাবে গত গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার আদালতে ১৬৪ ধারা মতে জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ৩ পুলিশ সদস্য এখন জেল হাজতে রয়েছেন।
আরো ৭ দিন সময় চেয়েছে তদন্ত কমিটি: অবসরপ্রাপ্ত সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার তদন্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির প্রতিবেদন ৩১ আগস্ট দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না। তদন্ত কমিটির প্রধান ও চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান- ‘সিনহা হত্যা মামলার তদন্তের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। কিন্তু মামলার অন্যতম আসামি সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা সম্ভব হচ্ছে না।’
তিনি বলেন- সাবেক ওসি প্রদীপ এখন মামলার তদন্তকারী সংস্থা র্যাবের হেফাজতে। তৃতীয় দফায় তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন এই আসামি। এই রিমান্ড শেষ হবে আজ ৩১ আগস্ট। দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানোর পর আজ ৩১ আগস্টের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কমিটিকে যে সময় বেঁধে দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সেই সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল সম্ভব হচ্ছে না।
তদন্ত কমিটির প্রধান মিজান জানান- ‘এই সময়ে বিষয়ে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কে অবহিত করেছি। আমরা আরো ৭ দিন সময় চেয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে রোববার (৩০ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু জানানো হয়নি। হয়ত আজ মধ্যে কোন সিদ্ধান্ত পেয়ে যাব।’
তিনি বলেন- ‘তদন্ত কমিটি পুরোপুরি নিরপেক্ষ থেকে এ হত্যা মামলার তদন্ত কাজ শেষ করে এনেছে। ৬৮ জনের সাক্ষাতকার নেওয়ার পরিকল্পনা করেছি আমরা। এরমধ্যে ৬৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ ১ সপ্তাহ আগে শেষ করেছি। যে তথ্যগুলো তারা দিয়েছে সেগুলো বিশ্লেষণ করেছি। শেষ পর্যায়ে প্রতিবেদন তৈরির কাজও।’
তিনি আরও বলেন- ‘সাবেক ওসি প্রদীপ এই মামলার অন্যতম আসামি। মামলার ঘটনা তদন্তে যে তথ্য পাওয়া গেছে তাতে এই ঘটনায় তার জড়িত থাকার প্রমাণ হাতে এসেছে। সুতরাং জিজ্ঞাসাবাদ না করে তাকে প্রতিবেদন দেওয়া সঠিক হবে না। তাই অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। আশা করি ১ সেপ্টেম্বর ওসি প্রদীপকে জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে। তার কাছ থেকে যে তথ্য পাওয়া যাবে তা বিশ্লেষণ করতে এক ২ দিন সময় লাগবে। সরকার যদি আমাদেরকে আর ২-৩ দিনও সময় দেয়, রিপোর্ট জমা দিতে পারব আমরা।’
গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চকপোস্টে গুলিতে নিহত হন সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনার পর পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় ২টি ও রামু থানায় ৩টি মামলা করে। গত ৫ আগস্ট কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা মামলা করেন মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। এ মামলায় ৯ জনকে আসামি করা হয় এবং মামলাগুলো তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে র্যাবকে। র্যাব এই মামলায় এই পর্যন্ত ১৩ জনকে আটক করা হয়েছে।