রাজধানীর শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী মহাসমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দাবি
সিলেটের এমসি কলেজে সংঘটিত ধর্ষণসহ সারা দেশে অব্যাহত ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বামধারার ছাত্র সংগঠনগুলো রাজধানীর শাহবাগের মহাসমাবেশ থেকে ৯ দফা দাবি জানিয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা এ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ারও ঘোষণা দেয়।
‘ধর্ষণ ও নির্যাতন বিরোধী বাংলাদেশ’ ব্যানারে শুক্রবার (৯ অক্টোবর) বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ধর্ষণবিরোধী সমাবেশ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি জানায় সংগঠনগুলো। পাশাপাশি আগামী ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত সমাবেশ থেকে নানা কর্মসূচিরও ঘোষণা দেয়া হয়।
মহাসমাবেশের শুরুতে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করে। এটি উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন সঞ্চালনা করেন।
মহাসমাবেশ থেকে ধর্ষণ ও নিপীড়ন বন্ধে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স ৯ দফা দাবি উত্থাপন করেন ।
৯ দফা দাবিগুলো হল- ১. সারাদেশে অব্যাহত ধর্ষণ-নারীর প্রতি সহিংসতার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ধর্ষণ, নিপীড়ন বন্ধ ও বিচারে ‘ব্যর্থ’ অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। ২. পাহাড়-সমতলে আদিবাসী নারীদের ওপর সামরিক-বেসামরিক সব ধরনের সামাজিক নিপীড়ন ও যৌন বন্ধ করতে হবে। ৩. হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে নারী নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর করতে হবে। সিডো সনদে সহি ও তার পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে হবে। নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক সব ধরনের আইন ও প্রথা বিলোপ করতে হবে। ৪. ধর্মীয়সহ সব সভা-সমাবেশে নারীবিরোধী বক্তব্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। সিনেমা, সাহিত্য, নাটক, বিজ্ঞাপনে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন বন্ধ করতে হবে। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে বিটিসিএলকে। সুস্থ ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে সরকারিভাবে। ৫. ভিকটিমকে তদন্তকালীন সময়ে মানসিক নিপীড়ন-হয়রানি বন্ধ করতে হবে। আইনগত ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ভিকটিমের। ৬. অপরাধ বিজ্ঞান ও জেন্ডার বিশেষজ্ঞদের নারী ও শিশু নিপীড়ন ও দমন ট্রাইব্যুনালে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ট্রাইব্যুনালের পদ সংখ্যা বাড়িয়ে অনিষ্পন্ন সব মামলা দ্রুত নিষ্পন্ন করতে হবে। ৭. ধর্ষণ মামলার ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-১৫৫ (৪) ধারা বিলোপ করতে হবে এবং মামলার ডিএন।এফলাফল আইনকে সাক্ষ্য প্রমাণের ক্ষেত্রে কার্যকর করতে হবে। ৮. পাঠ্যপুস্তকে নারীর প্রতি অবমাননা ও বৈষম্যমূলক যে কোনো প্রবন্ধ, পরিচ্ছেদ, নিবন্ধ, ছবি, নির্দেশনা ও শব্দ চয়ন পরিহার করতে হবে। ৯. গ্রামীণ সালিশের মাধ্যমে ধর্ষণের অভিযোগ গোপন কারী চেষ্টাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স জানান, সারাদেশে ধর্ষণের বিরুদ্ধে আমরা সাংস্কৃতিক জাগরণ তৈরি করব। এ দেশ থেকে ধর্ষণকে উচ্ছেদ করে ছাড়ব।
আগামী ১৬ অক্টোবরের মধ্যে আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হলে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ অভিমুখে ধর্ষণবিরোধী লংমার্চ করা হবে বলে ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অনিক রায় ধর্ষণবিরোধী লংমার্চ করা হবে হুশিয়ারি দেন।