যুক্তরাষ্ট্র থেকে কী কী পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ, কী কী রপ্তানি করে

পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ৯ এপ্রিল থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মোট ৬০টি দেশের ওপর কার্যকর হয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক।
গত ২ এপ্রিল মার্কিন বাজারে বিভিন্নদেশের পণ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি।
শুল্ক ঘোষণার সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, যারা আমেরিকান পণ্যের ওপর অসম শুল্ক আরোপ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের ওপর এই পাল্টা শুল্ক আরোপ করছে।
তবে তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক অন্যদের আরোপিত শুল্কের ‘প্রায় অর্ধেক’।
এই ধারাবাহিকতায় ‘বাংলাদেশের বাজারে মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক অনেক বেশি’ যুক্তি দেখিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশি পণ্যেও ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য, বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যে ৭৪ শতাংশ শুল্ক রয়েছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের উল্লেখ করা এই শুল্ক হারের বিষয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন অর্থনীতিবিদরা।
এদিকে, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে আগে থেকেই যেহেতু গড়ে শুল্ক ছিল ১৫ শতাংশ।সুতরাং, নতুন ও পুরাতন মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে আজ থেকে গড়ে ৫২ শতাংশ শুল্ক আরোপ হতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় কী কী যায়
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো’র (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমানের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
তবে এগুলোর মাঝে বেশিরভাগই পোশাক। অন্যান্য পণ্যের মাঝে আছে লেদারের ব্যাগ, পাটজাত পণ্য, জুতা, সাইকেল, কৃষি ও খাদ্যপণ্য, প্লাস্টিক পণ্য ইত্যাদি।
বাংলাদেশে কুচিয়া বা ইল তেমন জনপ্রিয় না। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা ব্যাপক। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই গত কয়েক মাসে এক মিলিয়ন ডলারের বেশি ইল মাছ রপ্তানি হয়েছে।
আগে প্রকৃতি থেকে ধরে কুচিয়া বিদেশে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু বিশ্বব্যাপী অনেক চাহিদার কারণে বাংলাদেশে এখন কৃত্রিমভাব ইলের পোনা উৎপাদন করে চাষাবাদ করা হয়।
অন্যান্য নানা পদের মাছসহ প্রচুর পরিমাণে চিংড়ি ও কাঁকড়াও রপ্তানি করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে।
কৃষি ও খাদ্যপণের মাঝে রয়েছে ‒ মাখন, মধু, কুমড়া, মটরশুঁটি, বাদাম, চা, মশলা, ময়দা, ভুট্টা, সরিষা, ঔষধি উদ্ভিদ, নারিকেল, আখের চিনি, পাস্তা, আলু, টমেটো, তামাক ইত্যাদি।
এর বাইরে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় ক্যালসিয়াম কার্বনেট, সোডিয়াম সালফেট, বোরিক এসিড, সুগন্ধি, সাবান, শ্যাম্পু, মোমবাতি, কাগজসহ অনেককিছু পাঠানো হয়।
বিভিন্ন প্লাস্টিক জাতীয় পণ্য ‒ বোতল, ফ্লাস্ক, সাইকেল, দরজা, র্যাক ইত্যাদিও রপ্তানি হয়।
এছাড়া, বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে পোশাক রপ্তানি করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। মূলত বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিজাত পণ্যের ৮০ শতাংশের বেশি-ই হলো তৈরি পোশাক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ও অর্থনীতি বিষয়ক বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে, এমন একটি সরকারি সংস্থা হলো ‘ইউনাইটেড স্টেটস সেন্সাস ব্যুরো’।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারিতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৯০৪ দশমিক চার মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে। তবে ফেব্রুয়ারিতে তা কমে হয়েছে ৭৮৯ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, চলতি বছরের শুরুর দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় এক হাজার ৬৯৪ মিলিয়ন ডলার পণ্য রপ্তানি হয়েছে।
আমেরিকা থেকে বাংলাদেশ কী কী আনে
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ পণ্য রপ্তানি হয়েছে, সেই তুলনায় আমদানির পরিমাণ খুবই কম। ‘ইউনাইটেড স্টেটস সেন্সাস ব্যুরো’ বলছে, জানুয়ারিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ ২০৩ দশমিক চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ পণ্য আমদানি করেছে এবং ফেব্রুয়ারিতে এনেছে মাত্র ৮৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এই দুই মাসের হিসাবে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের কাছে মোট ২৯০ দশমিক চার মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করতে পেরেছে। সেক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে শুধুমাত্র জানুয়ারি মাসেই এই দুই দেশের মাঝে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৭০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
২০১২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেট্স ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) একটি গবেষণা প্রকল্প হিসাবে যাত্রা শুরু করা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘অবজারভেটরি অব ইকোনমিক কমপ্লেক্সিটি’ (ওইসি) বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে কাজ করে।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি পাঠিয়েছে তৈরি পোশাক। আর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বেশি এনেছে সয়াবিন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আনা এই সয়াবিনের মূল্য প্রায় ১০৬ মিলিয়ন ডলার।
এরপরই হলো‒ ৩৩ দশমিক এক মিলিয়ন ডলার মূল্যের স্ক্র্যাপ লোহা বা লোহার টুকরা এবং ২৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের চাল।
ট্রেডিং ইকোনমিক্স এর তথ্য অনুযায়ী‒ গত বছর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে ৬৫৮ দশমিক ২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের লোহা ও স্টিল রপ্তানি করেছে। দেশটি থেকে বাংলাদেশ আরও অনেক পণ্য আমদানি করলেও ওই বছর লোহা ও স্টিল-ই বেশি এনেছে।
এরপরের স্থানে আছে তৈলবীজ, তেলজাতীয় ফল, শস্য, বীজ ও ফল। ওই বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে সাড়ে তিনশো মিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের এসব পণ্য কিনেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। আর এর প্রধান কাঁচামাল তুলা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানিতে বাংলাদেশে শুল্কহার শূন্য।
ওই বছর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আড়াইশো মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি তুলা কিনেছে।
অন্যান্য পণ্যের মাঝে রয়েছে‒ জৈব রাসায়নিক, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস, পশুখাদ্য, খাদ্যের অবশিষ্টাংশ, যন্ত্রপাতি, পারমাণবিক চুল্লি, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, বিমান, জাহাজের কাঠামো, উড পাল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, পারফিউম, প্রসাধনী, হুইস্কি, গাড়ি, বাদাম, ডিম, মধু, সাবান, মোম, পাখির চামড়া ও পালক, মানুষের চুল ইত্যাদি।
এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে থেকে লবণ, সালফার, পাথর, সিমেন্ট, রেলওয়ের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, তামাক, বই, খেলনা, অ্যালুমিনিয়াম, সার, কফি, বাদ্যযন্ত্র, সিরামিকের তৈরি পণ্য, জিংক, কপারসহ আরও নানা ধরনের পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ।
আমদানি কতটা বাড়ানো সম্ভব?
বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি-রপ্তানির হিসাব করলে দেখা যায় যে দুই দেশের মাঝে বাণিজ্য ঘাটতি অনেক। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার জন্যই বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৬০টি দেশের পণ্যে উচ্চহারের শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্তবর্তীকালীন সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন ইতোমধ্যে বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা বাড়তি শুল্ক কমাতে এই বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে ১৯০টি পণ্যের শুল্কহার শূন্য রেখেছে। এবার আরও ১০০ পণ্যকে এই তালিকায় যুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেছেন, এই চিঠির ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করি। আমাদের লক্ষ্য বাণিজ্য ঘাটতি কমানো। এখন কী কী পণ্য দিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পারি, সেটাই আমরা দেখছি।
কিন্তু আরও একশো পণ্যকে শুল্কমুক্ত করে এই এই বাণিজ্য ঘাটতি কমানো আসলেই সম্ভব?
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, এভাবে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব না।
বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বেশ ‘তড়িঘড়ি করে’ ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেটি না করে আরও কিছু অগ্রগতি দেখে ‘সময় নিয়ে’ চিঠি পাঠানো যেত বলে মত তার।
কারণ হিসাবে তিনি বিবিসিকে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, বাংলাদেশের মূল রপ্তানি পণ্য – তৈরি পোশাক, চামড়ার তৈরি জুতা, টেক্সটাইল– স্বাভাবিক শুল্কেই রাখা হয়েছে।
‘আমরা আশঙ্কা করেছিলাম, সকল পণ্যেই বোধহয় শুল্ক আরোপ করতে যাচ্ছে। কিন্তু আজকে যুক্তরাষ্ট্র যে প্রোডাক্ট লিস্ট দিয়েছে, তাতে দেখা গেছে যে ওগুলোকে বাড়তি শুল্কের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। এই প্রোডাক্ট লিস্ট এতদিন পাওয়া যাচ্ছিলো না,’ বলছিলেন তিনি।
পণ্যভেদে আগে এগুলোয় ৯, ১০, ১১ শতাংশ…এরকম শুল্ক ছিল। এখনও সেটিই প্রযোজ্য হবে।
এরকম একটি প্রেক্ষাপটে স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশ “কেন একটি উন্নত দেশকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিবে? প্রশ্ন করেন এই অর্থনীতিবিদ এবং বলেন, ‘এটি আমার বোধগম্য না।’
প্রচলিত বাণিজ্য কাঠামোয় উন্নত দেশগুলো শুল্ক সুবিধা দেয়। সেখানে আমরা আগ বাড়িয়ে উন্নত দেশকে শুল্ক সুবিধা দিতে যাচ্ছি, তাদের আরোপিত উচ্চ শুল্কের বিনিময়ে।
এই পুরো বিষয়টি বাণিজ্যনীতি ও প্রচলিত বাণিজ্য কাঠামোর সাথে সাংঘর্ষিক। তাই, বাংলাদেশের তরফ থেকে ওইরকম প্রস্তাব দেওয়া ‘ঠিক হয়নি’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
সমস্যা কোথায়? সমাধান কী?
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে, ওই একই পণ্য অন্য দেশ থেকেও আমদানি করা হয়। যেমন– যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি উজবেকিস্তান থেকে তুলা, সৌদি আরব ও কাতার থেকে পেট্রোলিয়াম, দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো থেকে সয়াবিন আমদানি করা হয়।
সেক্ষেত্রে, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা – ডব্লিউটিও’র নিয়ম অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কোনও দেশের নির্দিষ্ট কোনও পণ্যের ওপর কোনও দেশ শুল্ক কমাতে পারে না। শুল্ক কমাতে হয় পণ্যের ওপর।
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, নির্দিষ্ট কোনও পণ্যে শুল্ক কমাতে হলে সমস্ত দেশগুলোর জন্যই তা সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। বলা হচ্ছে, মার্কিন পণ্যের জন্য কমাবে। মার্কিন পণ্য বলে কিছু নেই।
শুধুমাত্র একটি দেশের পণ্যের জন্য শুল্ক কমালে অন্য দেশগুলো ‘বৈষম্যমূলক শুল্ক আরোপের দায়ে’ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অভিযোগ জানাতে বা মামলা করতে পারে।
ডব্লিউটিও’র নিয়ম মেনে যদি নির্দিষ্ট কোনও পণ্যে সকলের জন্য শুল্ক কমানো হয়, তাহলেও ‘আদতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়বে কি না’, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি মনে করছে, কোনও পণ্যে শুল্ক ছাড় দিলে ‘সময় ও খরচ কম লাগার কারণে’ ওই পণ্যের বিকল্প বাজারগুলো থেকেই আমদানি বাড়বে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে নয়।
অথচ, যুক্তরাষ্ট্র আগেই জানিয়েছে যে বাণিজ্য ঘাটতি না কমালে শুল্ক বাড়তে পারে। তাহলে উপায় কী? বিশ্লেষকদের মতে, ঢালাওভাবে অনেক পণ্যের শুল্ক না কমিয়ে বরং এমনসব এক্সক্লুসিভ পণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া যেতে পারে, যেগুলোর বিকল্প বাজার নেই।
গাড়ি, মেশিনারিজ কিংবা উচ্চ মানের মোটর সাইকেল এক্ষেত্রে উদাহরণ হতে পারে। যদিও আর্থসামাজিক বাস্তবতার কারণে বাংলাদেশে এগুলোর আমদানি তুলনামূলকভাবে খুব কম।
ওই ধরনের এক্সক্লুসিভ ও জরুরি মার্কিন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়ার পরিবর্তে অন্য পণ্যে ছাড় দিয়ে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি না বেড়ে বরং রপ্তানি বাড়তে পারে।
আর তখন বাণিজ্য ঘাটতি আরও বেড়ে গিয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে।
তবে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর আরেকটি উপায়, দুই দেশের সরকারের মধ্যকার বাণিজ্য। বাংলাদেশ সরকার চাইলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কোনও পণ্য বেশি আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
কিন্তু সরকার বেসরকারি খাতকে বেশি দামে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি করতে চাপ দিতে পারে না।
ড. মোয়াজ্জেম বলেন, তবে হ্যাঁ, সরকার যদি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আনার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরকে ভর্তুকি দেয়, তাহলে এটা সম্ভব। কিন্তু আইনগতভাবে সেটিও সরকার বলতে পারে না। কারণ তখন অন্য দেশের রপ্তানিকারকরা সরকারকে প্রশ্ন করবে।
যদিও বাংলাদেশ সরকার এখন থেকে পণ্য আমদানিতে ‘ওপেন বিডিং-এ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওপেন বিডিং-এ কিনতে হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অন্যান্য দেশের তুলনায় মার্কিন বাজার থেকে পণ্য আমদানি ব্যয়বহুল হবে।’
সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট পণ্যে শুল্ক ছাড়েই সমাধান দেখছেন তিনি।
-দৈনিক যুগান্তর