দেশব্যাপী রেল যোগাযোগ আরও সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার: প্রধানমন্ত্রী

স্বল্প মূল্যে পণ্য ও জন পরিবহন নিশ্চিত করতে সারাদেশে শক্তিশালী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে সরকার দেশব্যাপী রেল যোগাযোগ আরও সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রেলকে আরো শক্তিশালী করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। আমরা সারাদেশে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য রেলনেটওয়ার্ক সৃষ্টি করবো। যাতে অল্প খরচে পণ্য পরিবহন এবং জনগণের যাতায়াতের অনেক সুবিধা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যমুনা নদীর ওপরে বঙ্গবন্ধু সেতুর উজানে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পৃথক ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে এসব কথা বলেন।
তিনি রবিবার (২৯ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
সরকার প্রধান, ‘সারা বাংলাদেশে আমরা রেলের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাচ্ছি। একেবারে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী, বরিশাল হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নিয়ে যাব। তার সমীক্ষা শুরুর ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছি আমরা। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সেখান থেকে যাবে রেললাইন কক্সবাজার ও টেকনাফ পর্যন্ত।’
তিনি বলেন, সড়ক পথ, রেলপথ, আকাশ পথ এইসবগুলোর উন্নয়নেই ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি আমরা। তাতে আমাদের দেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে ও মজবুত হবে।’
‘তাছাড়া ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের সাথে যখন আমরা সংযুক্ত হয়ে যাব, এটাও আমাদের জন্য বিরাট কাজ হবে,’ তিনি যোগ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনক বলেছিলেন বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ বাংলাদেশ হবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন হবে। আর সেই সেতুবন্ধন করতে গেলে আমাদের ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে সংযোগ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, তিস্তা নদীর ওপর যে রেল সেতু সেখানে গাড়ি চলার ছিল না কোন সেতু। তিনি সরকারে আসার পর সেখানে পৃথক সড়ক, সেতু করে দেন। নইলে আগে রেলসেতুর ওপর দিয়েই পারাপার চলতো ঝুঁকিপূর্ণভাবে গাড়ি।
তিনি বলেন, ভৈরবে রেল লাইনের ওপর দিয়েই অপেক্ষমাণ থেকে একটা করে গাড়ি পার হত। সেখানেও পৃথক সড়ক সেতু করেছেন। কালুরঘাটেও রেল সেতুর পাশাপাশি পৃথক সড়ক সেতু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এভাবে সারা বাংলাদেশে রেল যোগাযোগকে উন্নত করা, আধুনিক করা এবং বহুমুখী করার, যাতে জনগণ আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়নে সকলকে আন্তরিকতার সাথে স্ব-স্ব দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পাবার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন। রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা স্বাগত বক্তৃতা করেন। মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
গণভবন প্রান্তে এবং মূল অনুষ্ঠানস্থলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী জাপানের জাইকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ আল্লাহর রহমতে প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি যখনই জাপান গিয়েছি তখন সবসময়ই জাপান সরকার পাশে দাঁড়িয়েছে আমাদের। এজন্য বিশেষভাবে জাপান সরকারকে আমি ধন্যবাদ জানাই।