এইচএমপি ভাইরাসে বেশি ঝুঁকি দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্তদের
চীনসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে ‘হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস’ (এইচএমপিভি)-এর প্রাদুর্ভাব এবং এর তীব্রতা উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ১৪ বছরের কম বয়সি শিশু এবং ৬৫ বছর বা এর বেশি বয়সি ব্যক্তিদের মধ্যে এ রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে।
দেশে এইচএমপিভি আক্রান্ত একজনের মৃত্যু হওয়ায় ভাইরাসটি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। যদিও চিকিৎসকদের দাবিÑএইচএমপিভি নয়, অন্য রোগের কারণে ওই রোগী মারা গেছেন।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানান, এইচএমপিভি একধরনের ‘আরএনএ’ ভাইরাস, যা সাধারণত মানুষের শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। অন্যসব ফ্লু যেমন: ইনফ্লুয়েঞ্জা রেস্পিরেটরি সিনসাইশিয়ালের মতো একটি ভাইরাস। সাধারণত শীত ও বসন্তকালে এ রোগের সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। আক্রান্তদের সাধারণ ফ্লুর মতো লক্ষণ প্রকাশ পায়, যা ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে যেমন: বয়স্ক, ক্যানসার আক্রান্ত, একসঙ্গে একাধিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ আরাফাত বলেন, এইচএমপিভি আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারণত জ্বর, কাশি, নাক বন্ধ, গলাব্যথার লক্ষণ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসে। চামড়ায় র্যাশ এবং কখনো কখনো শ্বাসকষ্ট হতে পারে। শিশু, বয়স্ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়Ñএমন কোনো ওষুধ সেবনকারীদের (কেমোথেরাপি, স্টেরয়ড সেবনকারী) আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্ক বেশি থাকে। হাঁপানি বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ, গর্ভবতী নারী এবং দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য উচ্চঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।
অধ্যাপক ডা. আরাফাত আরও বলেন, ভাইরাসটি সাধারণত আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি ও কাশির ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। তাই কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজে এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব। যেমন: বাইরে গেলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করা, সাবান, পানি দিয়ে ঘনঘন হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিসু দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা, টিসু না থাকলে হাতের কনুই ভাঁজ করে সেখানে মুখ গুঁজে হাঁচি-কাশি দেওয়া। আক্রান্ত ব্যক্তির কাছ থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা এবং জনসমাগম বা ভিড় এড়িয়ে চলা।
বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শাহিনুল আলম বলেন, এইচএমপিভি নিয়ে অনেকে ভয় পান। মনে করেন, কোভিড চলে এসেছে কি না! কিন্তু ভাইরাসটি আগে থেকেই দেশে ছিল, এখনো আছে। কিছুটা হয়তো বেড়েছে। এর ভয়াবহতা ও মৃত্যুহার করোনাভাইরাসের চেয়ে কম। তাই আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকতে হবে। ভাইরাসটি শনাক্তকরণের পরীক্ষা ও আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউর সব রকমের প্রস্তুতি রয়েছে। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের সিজনাল ভ্যাকসিন বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ও নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন দেওয়া যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের কোনো সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। অন্যসব সাধারণ সর্দিজ্বরের মতো হওয়ায় আলাদা কোনো চিকিৎসার দরকারও নেই। শুধু লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা নিলেই আক্রান্তরা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। যেমন: জ্বর হলে প্যারাসিটামল, সর্দিকাশি হলে অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ সেবন করতে হয়। পাশাপাশি রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার (পানি, ফলের রস) ও পুষ্টিকর খাবার দেওয়া এবং রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম নিতে হবে।
-যুগান্তর