Type to search

জাতীয় বাংলাদেশ

কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ আন্দোলনে আহতদের

আগারগাঁও জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে এখনো অবস্থান করছেন ১০৩ জন চোখে গুলিবিদ্ধ আহত। তাদের কারো এক চোখে গুলি, কারো দুই চোখেই একাধিক গুলি নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন হাসপাতালের বিছানায়।  অভিযোগ, ‘আমাদের চিকিৎসা আশানুরূপ হচ্ছে না’। আমরা কি তাহলে এই ‘২৪-এর আন্দোলনে শরিক হয়ে ভুল করেছি’!

তারা বলেন, উপদেষ্টাদের প্রথম কাজ হওয়া উচিত ছিল আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা, তাদের পুনর্বাসন করা। কিন্তু এখনো একাধিক শহিদ পরিবার ও আহতরা দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। স্বজনরা কেন দ্বারে দ্বারে ঘুরবে? শহিদদের পরিবারকে রাষ্ট্রের খুঁজে বের করতে হবে। দেশে এত পয়সাওয়ালা লোক, তারা তো আলাদাভাবেও আহতদের কারো কারো দায়িত্ব নিয়ে চিকিৎসা-পুনর্বাসন করতে পারত। অথচ কেউ আমাদের দিকে দেখছে না, আমরা মাসের পর মাস পরিবার-পরিজন ছেড়ে, হাসপাতালে ধুঁকে ধুঁকে মরছি। আমাদের কথা অন্তর দিয়ে কেউ ভাবছে না। তাহলে কি আমরা এক দফা আন্দোলনে যুক্ত হয়ে ভুল করলাম; এমন তো কথা ছিল না!

গত সপ্তাহে জানুয়ারির শেষের দিকে সুচিকিত্সাসহ আরও কিছু দাবি নিয়ে আগারগাঁও জাতীয় চক্ষু হাসপাতাল ও পঙ্গু হাসপাতালের সামনের সড়কে নেমে পড়েন জুলাই আন্দোলনে আহতরা। পরে তারা রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নিলে উপদেষ্টাদের আশ্বাসে আবারও সড়ক ছেড়ে দেন। তাদের দাবির মধ্যে ছিল— ‘২৪-এর যোদ্ধাদের মধ্যে আহত এবং শহিদদের হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ বিচার করতে হবে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারীদের সরকারের বিভিন্ন পদ থেকে অপসারণপূর্বক গ্রেফতার করতে হবে। আগতদের ক্যাটাগরি ঠিকভাবে প্রণয়ন করতে হবে। আহতদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। আহত এবং শহিদদের রাষ্ট্রীয় সম্মাননাসহ প্রয়োজনীয় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসার সর্বোচ্চ সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আহত এবং শহিদদের আর্থিক অনুদানের পরিমাণ বাড়ানোসহ নিরাপত্তার বিষয়টি সুসংহত করতে হবে।

আমাদের এই দাবিগুলো পূরণ না হলে— ‘কী করব, আমরা তা এখনো ভেবে দেখিনি। তবে ভালো কিছু হবে না। আমরা সবাই খুব খারাপ আছি’।

চতুর্থ তলায় ৩৩ নম্বর বিছানায় আছে ১৩ বছরের তানিম বায়েজিদ। মুন্সীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এই কিশোর এক চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না। তানিমের মা তাহমিনা বলেন, ‘আমার এই অবুঝ বাচ্চাটার কী হবে, ওর জন্য কি কিছুই করার নাই? এই বাচ্চার সারাটা জীবন কীভাবে কাটবে? এমন প্রশ্ন রাখেন।’

আছে ১১ বছরের তামিম মাহমুদ। চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিলেট গোবিন্দগঞ্জ তাদের বাড়ি। বাইরের কোলাহল দেখতে গিয়ে গুলি লাগে তামিমের চোখে। আছে ১২ বছরের সাকিবুল হাসান। সাকিবুলের চোখে গুলি লাগে বাইরে আন্দোলন দেখতে গিয়ে। ১৯ জুলাই থেকে কয়েক দফা অস্ত্রোপ্রচার হয়েছে চোখে। কিন্তু তাতেও চোখের আলো ফেরেনি। এক চোখ হারিয়ে তামিম ও তার মা দুজনেই বিষণ্ন সময় পার করছেন। তার মা জানান, এত কম বয়সে এতবড় ক্ষতি হয়ে গেল, ডাক্তার বলেছে, অন্য চোখেও সমস্যা হতে পারে। তাহলে আমার ছেলের কীভাবে সারাটা জীবন কাটবে।

১৫ বছরের আব্দুর রহিম, ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী। অভাবের কারণে কাজ করত থাইগ্লাসের দোকানে। ১৯ জুলাই বসুন্ধরার নর্দা এলাকায় গুলি লাগে। রহিম ডান চোখে কিছুই দেখছে না। চিকিৎসক জানিয়েছে ডান চোখে আর আলো ফিরবে না।

আছে ১৮ বছরের বাক্প্রতিবন্ধী সেলিম মিয়া। তার চোখে দুইবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এই বাকপ্রতিবন্ধী কিশোর জোগালির কাজ করত। এই কিশোরের পায়ে. হতে, বুকে মিলে শরীরে তার ৫০-৬০ টার মতো ছররা গুলি এখনো বিঁধে আছে। মা সেলিনা বেগম বলেন, কথা বলতে পারে না, গায়ে তার অনেক যন্ত্রণা হয়। এক চোখে সে আর কিছু দেখতে পারবে না—চিকিত্সক বলেছেন।

ভোলার বিল্লাল হোসেন ডান চোখে ২০ শতাংশ দেখতে পান আর বাম চোখ পুরোপুরি মৃত। আসছে সোমবার তার বাম চোখে পাথরের চোখ লাগিয়ে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক বলে জানান। বিল্লাল হোসেন বরিশাল শহরে অটোরিকশা চালাতেন। ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তার দুই চোখে ছররাগুলি লাগে। একটা গুলি ডান চোখের মণির পাশ ঘেঁষে চলে যায়। কিন্তু বাম চোখে দুইটা গুলি লাগে। ফলে বাম চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়।

-ইত্তেফাক

Translate »