Type to search

জাতীয়

আত্মরক্ষায় শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠা করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ যুদ্ধ নয়, শান্তি চায়। একই সঙ্গে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখে সামনে এগিয়ে যেতে চায়। তিনি বলেন, যদি কখনও আক্রান্ত হই সেটা মোকাবিলা করার মতো শক্তি যেন আমরা অর্জন করতে পারি। সেভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে চাই এবং তৈরি থাকতে চাই। বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষায় শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনী প্রতিষ্ঠায়ও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

বুধবার সকালে পটুয়াখালীর লেবুখালীতে শেখ হাসিনা সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তিনটি ব্রিগেড ও পাঁচটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও টেলিকনফারেন্সের (ভিটিসি) মাধ্যমে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে  অংশগ্রহণ করেন। মনোমুগ্ধকর কুচকাওয়াজের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়। সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধের ভয়াবহতা নিজের চোখে দেখেছেন উল্লেখ করে বলেন, আমরাও সেই ভুক্তভোগী। কাজেই আর সেই ধ্বংসযজ্ঞে আমরা যুক্ত হতে চাই না। শান্তির পথ বেয়ে প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা শান্তি চাই, বন্ধুত্ব চাই। কোনো ধরনের বৈরিতা বা যুদ্ধ চাই না। তিনি বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে তখনই সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা চেয়েছি সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি সদস্যের জীবনমান উন্নত হোক এবং সারা দেশের মানুষেরই জীবনমান উন্নত হোক। আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে নিয়ে আমরা বাংলাদেশকে আর্থ-সামাজিকভাবে উন্নত করতে চাই।

সেনা সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পবিত্র সংবিধান এবং দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য আপনাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে অভ্যন্তরীণ কিংবা বাহ্যিক যেকোনো হুমকি মোকাবিলায় সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে। আপনারা সেনাবাহিনীর ভেতরের মূল চালিকাশক্তিগুলো অর্থাৎ ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের প্রতি আস্থা, পারস্পরিক বিশ্বাস, সহমর্মিতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, কর্তব্যপরায়ণতা, দায়িত্ববোধ এবং সর্বোপরি শৃঙ্খলা বজায় রেখে স্বীয় কর্তব্য যথাযথভাবে নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে যাবেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের মানুষের ভরসা ও বিশ্বাসের প্রতীক। সেভাবেই মানুষের আস্থা অর্জন করে আপনাদের এগিয়ে যেতে হবে। সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে দেশের জন্য কাজ করার লক্ষ্যে সর্বপ্রথম ‘পেশাদারিত্ব এবং প্রশিক্ষণ’ প্রয়োজন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জনগণের, সেনাবাহিনীও জনগণের বাহিনী। এদেশের উন্নতি হলে সেনা সদস্যদের পরিবারেরও উন্নতি হবে। সে কথা মাথায় রেখেই সরকার বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। পটুয়াখালীর লেবুখালীতে সপ্তম পদাতিক ডিভিশনের সদর দফতর প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পদ্মার এ পারে সশস্ত্র বাহিনীর কোনো ব্রিগেড ছিল না। যে কারণে আমরা এখানে সপ্তম পদাতিক ডিভিশন প্রতিষ্ঠা করেছি। তিনটি ব্রিগেড সদর ও পাঁচটি ইউনিটের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে যাবে। বর্তমান সরকারের সময় সেনাবাহিনীতে অনেক আধুনিক যানবাহন, হেলিকপ্টার, সমরাস্ত্র ও সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে। এভাবেই দ্রুত ও সমন্বিত আধুনিকায়নের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে বিশ্বের দরবারে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনীতে রূপান্তর করার পদক্ষেপও সরকার নিয়েছে।

লেবুখালী সেনানিবাসের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি বলেন, নবগঠিত সেনানিবাসের উন্নয়নকাজ পরিকল্পতভাবে ও দ্রুততার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। এই অভাবনীয় অগ্রগতি ডিভিশনের প্রতিটি সদস্যের ত্যাগ, কঠোর পরিশ্রম ও আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রতিফলন হবে। সুদূরপ্রসারী নগর পরিকল্পনার আলোকে প্রাকৃতিক শোভাকে নষ্ট না করে পরিবেশবান্ধব সেনানিবাস গঠনের পরিকল্পনার জন্য তিনি সেনাবাহিনী প্রধান ও এই ডিভিশনের জিওসিসহ সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এ এলাকায় সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন প্রাণ সৃষ্টি হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এই করোনাকালে সেনাবাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে ও জনগণের সেবা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে উজ্জ্বল করেছে। সেসঙ্গে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও সশস্ত্র বাহিনী বিশাল ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নেও সশস্ত্র বাহিনীর বিশাল ভূমিকার স্বীকৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশেষ করে হাওরাঞ্চলে মিঠামইন-ইটনা-অষ্টগ্রামে সড়ক নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে সব কাজে তারা সহযোগিতা করে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু ও যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতু সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও সেনাবাহিনীর বিশাল ভূমিকার উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লা, বগুড়া ও সৈয়দপুর সেনানিবাসে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সাভার এবং সিলেট সেনানিবাসে একটি করে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়েছে। সিএমএইচগুলোর উন্নয়নের পাশাপাশি পাঁচটি আর্মি মেডিকেল কলেজ এবং তিনটি নার্সিং কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। রামু ও সিলেট সেনানিবাসে পর্যাপ্ত সুবিধাসম্বলিত দুটি সিএমএইচের নির্মাণকাজ চলছে।

সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সাঁজোয়া এবং আর্টিলারি কোরের জন্য আধুনিক গান ও মিসাইল ক্রয় করা হচ্ছে। পদাতিক বাহিনীর জন্য অত্যাধুনিক ইনফ্যান্ট্রি গেজেট ক্রয় করা হয়েছে। আমাদের মিলিটারি একাডেমির ভিত্তিটা জাতির পিতা করে গিয়েছিলেন, আজকে তা বিশ্বে প্রথম সারির প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এটি যে একদিন বিশ্বমানের প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে সেটা সে সময়ই জাতির পিতার তাঁর বক্তৃতায়ও আশাবাদ ব্যক্ত করে যান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মধ্যে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও করোনাভাইরাসের কারণে সেটা কিছুটা স্থবির হয়ে গেছে। তারপরও আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য আমরা সর্বদা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমরা সফল হব।

বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা লাভ করেছে তা ধরে রেখে আরও এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমাদের দেশের চলমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে, যাতে করে দেশকে আমরা উন্নত করতে পারি এবং ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ উন্নত হবে।’ শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে আমাদের এবং আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সুন্দর জীবন পাবে এবং ভালোভাবে যেন বাঁচতে পারে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

দেশের ৯৭ শতাংশ মানুষ এখন বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে এবং ‘মুজিব বর্ষে’ দেশের শতভাগ ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বালাতে তার সরকারের সঙ্কল্প পুনর্ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘দেশের কোনো ঘর আর অন্ধকারে থাকবে না, কেউ গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেকটি মানুষকে আমরা ঘর করে দেব।’ সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনীর সদস্যদের হাত ধরেই আমরা ভূমিহীন মানুষের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প শুরু করি এবং সেভাবেই জাতির পিতার স্বপ্ন ‘দেশে কেউ গৃহহীন থাকবে না’- সে স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে চাই। ‘দেশ ও জাতির প্রতি আপনাদের যে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ এবং দেশমাতৃকার প্রতি ভালোবাসা নিয়েই আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন, সেটাই আমরা চাই। বাংলাদেশ জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠবে।’

তিনি করোনাভাইরাসের সেকেন্ড ওয়েভ সম্পর্কে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘শীতকাল আসছে- হয়তো করেনাভাইরাসের আরেকটা ধাক্কা আসতে পারে। তার জন্য সদাপ্রস্তুত থেকে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে করোনা থেকে সুরক্ষিত থেকে আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যাবেন।

অনুষ্ঠানে সদর দফতর ৭ স্বতন্ত্র এডিএ ব্রিগেড (চট্টগ্রাম), সদর দফতর প্যারা-কমান্ডো ব্রিগেড (সিলেট), সদর দফতর ২৮ পদাতিক ব্রিগেড, ৪৯ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি, ৬৬ ইস্ট বেঙ্গল, ৪৩ বীর, ৪০ এসটি ব্যাটালিয়ন এবং ১২ সিগন্যাল ব্যাটালিয়নের আনুষ্ঠানিকভাবে পতাকা উত্তোলন করা হয়। অনুষ্ঠান শেষে সেনাবাহিনী প্রধান শেখ হাসিনা সেনানিবাসে নবনির্মিত বিভিন্ন স্থাপনা উদ্বোধন করেন। সেনাপ্রধান ছাড়াও সেনানিবাসের জিওসিসহ ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তারা পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার লেবুখালীতে পায়রা নদীর তীরে প্রায় ১৫৩২ একর জমির ওপর দক্ষিণবঙ্গের একমাত্র সেবানিবাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

Translate »