বেয়াড়া ছেলেদের নিয়ে বেকায়দায় দুই বেয়াই
পুরান ঢাকার প্রতাপশালী সংসদ সদস্য হাজী সেলিম শুধু ঢাকায় নয়, তার ব্যবসা বিস্তৃত করেছেন চট্টগ্রামেও। চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ শেয়ার কিনে নিয়ে বন্দর বহির্নোঙরে পণ্য খালাস কাজেও আধিপত্য বিস্তার করেছেন।
ফ্লিট ইন্টারন্যাশনাল নামে ওই প্রতিষ্ঠানের শেয়ার কেনা হয়েছে হাজী সেলিমের বড় ছেলে সোলায়মান সেলিমের নামে। হাজী সেলিমের অন্য দুটি প্রতিষ্ঠান এমএমআর (বাংলাদেশ) লিমিটেড এবং মদিনা নেভিগেশন লিমিটেড নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় একই ভবনে অবস্থিত।
হাজী সেলিমের বেয়াই নোয়াখালী সদর আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীও চট্টগ্রাম বন্দরের একজন বার্থ অপারেটর এবং টার্মিনাল অপারেটর। তার প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এঅ্যান্ডজে ট্রেডার্স। এই দুই সংসদ সদস্য এখন খুবই বেকায়দায় দুই বেয়াড়া পুত্রের কারণে।
একরামুল করিম চৌধুরীর মেয়ে জারিন চৌধুরীর সঙ্গে হাজী সেলিমের দ্বিতীয় ছেলে ইরফান সেলিমের বিয়ে হয় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। জারিনের ছোটভাই শাবাব। সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে শাবাব করিম চৌধুরীও ভগ্নিপতি ইরফান সেলিমের মতো বেপরোয়া গাড়ি চালানোয় অভ্যস্ত। দ্রুতগতিতে আতঙ্ক সৃষ্টি করে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে বিকৃত আনন্দ লাভ উভয়ের স্বভাব।
মূলত বাবার রাজনৈতিক অবস্থানের অপব্যবহার করে তারা দিন দিন হয়ে ওঠে বেপরোয়া। ২০১৮ সালের ১৯ জুন ঢাকার মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর শাবাব চৌধুরীর গাড়িতে পিষ্ট হয়ে নিহত হন সেলিম বেপারি (৪৫) নামে এক লোক। তার বাড়ি বরিশালে হলেও তিনি মহাখালী ডিওএইচএসের নাওয়ার প্রপার্টিজের গাড়িচালক ছিলেন।
শাবাব চৌধুরীর গাড়ি প্রথমে তাকে ধাক্কা দেয়। তিনি গাড়ির বাম্পার ধরে চিৎকার করতে থাকলে ব্যাক গিয়ারে এসে তাকে পিষ্ট করে দিয়ে গাড়ি নিয়ে দ্রুত চলে যায় শাবাব। ঘটনাস্থলেই নিহত হন হতভাগ্য ওই লোক। এ ঘটনাটি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে ফয়সালা করা হয়। হাজী সেলিম ও তার গুণধর ছেলে ইরফান সেলিম নিহতের পরিবারকে তুলে নিয়ে গিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে সমঝোতায় বাধ্য করে বলে জানা গেছে।
ইরফান সেলিমের শ্যালক শাবাব যে গাড়িটি চালাচ্ছিল তাতে লাগানো ছিল ‘সংসদ সদস্য’ স্টিকার। গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন সংসদ সদস্য একরামের স্ত্রী কামরুন্নাহার শিউলির নামে। যিনি নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। এই শাবাব চৌধুরী গত ১১ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগরীর হাইওয়ে প্লাজা মোড়ে লালখানবাজারে নিজেদের বাসার গলিতে ঢোকার মুখে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে ধাক্কা দেয় পুলিশের একটি মাইক্রোবাসকে। এতে পুলিশের চার সদস্য আহত হন। পুলিশ শাবাবকে গাড়িসহ আটক করে খুলশী থানায় নিয়ে যায়। ঢাকার প্রভাবশালী মহলের চাপে এখানেও পুলিশকে নমনীয় হতে হয়। ঘটনাটিকে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ বলে এর নিষ্পতির কথা জানিয়ে গাড়িসহ শাবাবকে মধ্যরাতে ছেড়ে দেওয়া হয় থানা থেকে।
একরামুল করিম চৌধুরীর পুরো পরিবার চট্টগ্রামে থাকে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুবাধে। তার বাবা হাজী মোহাম্মদ ইদ্রিস চট্টগ্রাম বন্দরের বার্থ অপারেটর ছিলেন। একরামুল করিমের বড়ভাই মো. ইব্রাহীম হাজী ইদ্রিস অ্যান্ড কোম্পানি নামে বার্থ অপারেটরের মালিক। নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ছোটভাইয়ের স্ত্রী কামরুন্নাহার শিউলির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরেছিলেন মো. ইব্রাহীম। আরেক ছোটভাই খলিলুর রহমান নাহিদ সিএমপির তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসী। নগরীর আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারকারী সিন্ডিকেটের সদস্য হিসেবে নাহিদ পরিচিত।
বহুল আলোচিত সংসদ সদস্য হাজী সেলিম চট্টগ্রাম বন্দরে তার প্রভাব-প্রতিপত্তি আরও বাড়িয়েছেন একরামুল করিমের সঙ্গে বেয়াই সম্পর্ক করে। সেলিমপুত্র ইরফান সেলিম ঢাকায় নৌবাহিনী কর্মকর্তাকে লাঞ্ছিত করে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে দুই বেয়াই একদম চুপচাপ। তাদের দেখা মিলছে না কোথাও। দুই বেয়াড়া পুত্রের কারণে এখন কোণঠাসা দুই বেয়াই। সাম্রাজ্য হারানোর আতঙ্কে এখন তারা নীরব দর্শক।