Type to search

অপরাধ

বিষ নিয়ে বিষ্ময়ে বাংলাদেশ

সাপ বিষ সাপের বিষ-abcb news

সাপের খামার কিংবা সাপের বিষ উৎপাদন দেশে অবৈধ ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। ফলে বৈধভাবে কোথাও নেই সাপের খামার বা সাপের বিষ উৎপাদন কেন্দ্র। তারপরও যেভাবে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণে কথিত সাপের বিষ উদ্ধার হচ্ছে তা রীতিমতো বিস্ময়কর বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এমন অবস্থার মাঝেই শুক্রবার বিকালে আবারও রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকায় র‌্যাবের অভিযানে ১২ পাউন্ড ওজনের ‘সন্দেহজনক সাপের বিষ’ উদ্ধারসহ পাঁচজনকে গ্রেফতারের খবর জানিয়েছে র‌্যাব। উদ্ধারকৃত কথিত ওই সাপের বিষের আনুমানিক মূল্য বলা হয়েছে ৮৫ কোটি টাকা।

এর দুই সপ্তাহ আগে ২৪ ডিসেম্বর ঢাকার দক্ষিণখান থানা এলাকা থেকে ৮ কেজি ৯৬ গ্রাম ওজনের ৭৫ কোটি টাকা মূল্যের কথিত সাপের বিষসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-২।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সাপের বিষ উৎপাদন অত্যন্ত জটিল ও স্পর্শকাতর একটি প্রক্রিয়া। যা হরহামেশা চাইলেই উৎপাদন বা বাজারজাত সম্ভব নয়। যদিও উদ্ধারকৃত সাপের বিষের উৎস প্রসঙ্গে বলা হয়ে থাকে বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। সেগুলো বিদেশেই পাচারের চেষ্টা চলছিল বলেও জানানো হয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার হয়েছে বা হচ্ছে।

তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে- এত বিপুল পরিমাণ সাপের বিষের প্রকৃত উৎস কিংবা গন্তব্য কোথায়? এ ছাড়াও আদৌ এগুলো সাপের বিষ নাকি অন্য কিছু? সাপের বিষ দেশে ঢুকল কীভাবে? দেশে প্রবেশের পর সেগুলো দেশীয় চক্রের হাতে যাচ্ছে কীভাবে? নেপথ্যের চক্র কে বা কারা? দেশীয় নাকি দেশি-বিদেশি মিলে আন্তর্জাতিক চক্র? এমন সব প্রশ্ন থাকলেও স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের কাছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের ভেনম রিসার্চ সেন্টারের গবেষক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. অনিরুদ্ধ জয় বলেন, দেশে বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাপের বিষের তেমন বাণিজ্যিক বাজার বা শিল্প গড়ে ওঠেনি। যেসব দেশ সাপের বিষ উৎপাদন করে থাকে তারা মূলত নিজ দেশের সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার জন্য অ্যান্টি ভেনম তৈরির কাজে এটি ব্যবহার করে থাকে। এ ছাড়া কিছু পরিমাণ সাপের বিষ ব্যবহৃত হয় চিকিৎসা ব্যবস্থার আরও কিছু ক্ষেত্রে। সেটিও ব্যাপকহারে নয়।

অধ্যাপক অনিরুদ্ধ জয় বলেন, সাপের বিষ কি না তা পরীক্ষার জন্য দেশে যথাযথ ল্যাব সবখানে নেই। তা ছাড়াও কোন প্রজাতির সাপের বিষ, আদৌ বিষ কি না কিংবা কতটুকু পরিমাণ বিষ এসব মিলে বিশেষজ্ঞ মতামতের বিষয় আছে। ফলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আগে এ বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত বলা সম্ভব নয়।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেছেন, অভিযানে সাপের বিষ হিসেবে যা জব্দ করা হয় সেগুলোর ক্ষেত্রে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও চোরাচালান আইনে থানায় মামলা করে থাকে র‌্যাব। মামলার সঙ্গে এটাও বলা থাকে যে, সাপের বিষ হিসেবে যা উদ্ধার হয়েছে সেগুলো রাসায়নিক ল্যাবে যথাযথ পরীক্ষা করে আদালতে অভিযোগপত্র দিতে হবে। ফলে সাপের বিষ তাৎক্ষণিক আটকের পরই সেটি অরিজিনাল নাকি অন্য কিছু সেটা প্রমাণসাপেক্ষ বিষয়। এ ক্ষেত্রে জব্দকৃত উপাদানের নানা আলামত এবং জড়িতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে সাপের বিষ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।

খিলগাঁওয়ে ৮৫ কোটি টাকার সাপের বিষ আটক : শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর রামপুরা থানার চৌধুরীপাড়ার লোহারগেট এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ১২ পাউন্ড ওজনের ৮৫ কোটি টাকা মূল্যের সাপের বিষ (তরল ও পাউডার) উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১২ ব্যাটালিয়ন।

অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া র‌্যাব-১২ ব্যাটালিয়নের উপঅধিনায়ক মেজর মো. মশিউর রহমান জানান, সাপের বিষ উদ্ধারকালে আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলো- শফিকুল ইসলাম, জহিরুল হক, মজিবুর রহমান, দুলাল ও মোকলেসুর রহমান। এরা সাপের বিষের বাহক। অভিযানকালে তাদের কাছ থেকে কয়েকটি কাচের পাত্রে রাখা ওই বিষ ছাড়াও একটি ম্যানুয়ালসহ আরও কিছু সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।

আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্তের বরাত দিয়ে মেজর মশিউর বলেন, উদ্ধারকৃত সাপের বিষ ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে আনা হয়। এখান থেকে অন্য কোনো দেশে পাচার করা হতো। মূলত বাংলাদেশকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। সাপের বিষের অনেক মূল্য হওয়ায় অধিক মুনাফার লোভে চক্রগুলো এ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। ২৫ নভেম্বর গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৯ কোটি টাকা মূল্যের সাপের বিষসহ পাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশের অপরাধী তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

সিআইডির হাতে সাপের বিষসহ গ্রেফতার হওয়া দুই বাংলাদেশিকে জিজ্ঞাসাবাদে ব্যাপক তথ্য মেলে। তবে এ সাপের বিষ পাচারের রুট হিসেবে বাংলাদেশ ব্যবহৃত হচ্ছে বলে মনে করছে পুলিশের অপরাধী তদন্ত বিভাগ।

২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুঁড়ি থেকে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা মূল্যের সাপের বিষ উদ্ধার করেছিল ভারতীয় পুলিশ। সে সময় বলা হয়েছিল, সাপের ওই বিষ বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য রাখা হয়েছিল।

Translate »