পশ্চিমবঙ্গে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যা, আর জি কর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষর পদত্যাগ
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার আরজিকর হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ। আজ ১২ আগস্ট-ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে পোস্টগ্র্যাজুয়েট এক নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার প্রতিবাদে উত্তাল কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। বিভিন্ন হাসপাতালে চলছে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি।
চিকিৎসক-মেডিকেল শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আজ সোমবার পদত্যাগ করেছেন আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ। পদত্যাগের পর তিনি বলেছেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করলাম। আন্দোলনকারীদের কাছে আবেদন, এবার আপনারা কাজে যোগ দিন।’
সন্দীপ ঘোষ এ কথাও বলেছেন, ‘আমার মুখে কথা বসিয়ে কিছু বিরুদ্ধ গোষ্ঠী রাজনৈতিক খেলায় মেতেছে। আমি সরকারি কর্মী। সরকারকে সমর্থন করা আমার ধর্ম।’
তবে কলকাতা পুলিশ এখনো নিশ্চিত নয়, ওই ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে শুধু সঞ্জয় রায় জড়িত ছিলেন কি না। এর পেছনে আরও কেউ জড়িত কি না, কলকাতা পুলিশ তা নিয়ে তদন্ত করছে।
কলকাতা পুলিশ ও গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেইনি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন ওই পোস্টগ্র্যাজুয়েট ছাত্রী। দিবাগত রাত দুইটায় বাইরে থেকে খাবার এনে নৈশভোজ সারেন আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে। এরপর তিনি জরুরি বিভাগ ভবনের চারতলার একটি সেমিনার কক্ষে বিশ্রাম নিতে যান। পরদিন শুক্রবার সকাল আটটা নাগাদ তাঁর নিথর দেহ দেখতে পান হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীর বাড়িতে ফোনে খবর দিয়ে জানিয়ে দেয়, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ছুটে আসেন হাসপাতালের জুনিয়র-সিনিয়র চিকিৎসকেরা। তাঁরা অর্ধনগ্ন মরদেহ দেখে অভিযোগ করেন, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। শুরু হয় চিকিৎসকদের আন্দোলন।
পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সোদপুরে বাড়ি ওই ছাত্রীর। মা–বাবার একমাত্র সন্তান ওই চিকিৎসক। তিনি এমবিবিএস পাস করার পর আর জি কর মেডিকেল কলেজে চেস্ট মেডিসিন বিভাগে পোস্টগ্র্যাজুয়েট করছিলেন। ছিলেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
ছাত্রীর মা–বাবা বলেছেন, ‘একমাত্র মেয়েকে হারিয়ে আমাদের সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেল। আমরা শূন্য হয়ে গেলাম। এই শোক আমরা রাখব কোথায়?’
ওই ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনার প্রভাব পড়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতেও। এই দাবিতে সোচ্চার হয় বিজেপি, কংগ্রেস, বাম দলসহ রাজ্যের অন্যান্য দল। মুখ্যমন্ত্রী মমতাও জানিয়ে দেন, ঘটনার সিবিআই তদন্ত করলে তাঁর আপত্তি নেই। অথচ এই রাজ্যে হাইকোর্ট থেকে যত সিবিআই তদন্তের আদেশ হয়, তার বিরোধিতা করে আসছেন মমতা।