অধিদপ্তরের নিয়োগ-বাণিজ্যের ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ করতেন মালেক! গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়
অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী গাড়িচালক আবদুল মালেক। অধিদপ্তরের অধীনে সারা দেশে নিয়োগ-বাণিজ্যের ৮০ ভাগই তিনি লেনদেন করতেন। ব্যাপক প্রভাব-প্রতিপত্তির কারণে স্বাস্থ্য খাতের অনেকে ছায়া ডিজি’ বলেও ডাকত তাকে। সাবেক এক মহাপরিচালকের মাধ্যমেই উত্থান তার।
কীভাবে আর কেন, কারা, একজন গাড়িচালকের হাতে ‘সোনার ডিম’ পাড়া হাঁসটি তুলে দিয়েছিল, সেই চমকপ্রদ তথ্য ক্রমে প্রকাশ্য হচ্ছে। শুধু ডিজি নয়, মন্ত্রণালয়ের একশ্রেণির কর্মকর্তার সাথে তার রয়েছে গভীর সম্পর্ক। রাজনৈতিক নেতাদের সাথে রয়েছে সখ্যতা। যে কারণে গাড়িচালক হলেও ক্ষমতার দাপট ছিল ব্যাপক তার।
মালেক সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখায় আরো ২০ জন এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। ব্যাপক পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ২ মামলায় গ্রেপ্তার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আলোচিত অফিস সহকারী আবজাল হোসেনও মালেক সিন্ডিকেটের সদস্য।
দীর্ঘকাল ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদোন্নতি, নিয়োগ, বদলি, কেনাকাটায় দুর্নীতির একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত একাধিক বহুতল বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মিলিয়ে মালেকের শতকোটি টাকার সম্পদেরও খোঁজ মিলেছে। ড্রাইভার হয়ে কীভাবে এই সম্পদের পাহাড় গড়লেন, তা রীতিমতো বিস্ময়কর।
এইচ এম এরশাদের আমলে মালেকের চাকরি হয়। তিনি জাতীয় পার্টির (জাপা) শ্রমিক সংগঠনের নেতা ছিলেন। বিএনপির আমলে শ্রমিক দলের নেতা হয়ে যান তিনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শ্রমিক লীগের পরিচয়ে সব জায়গায় দাপিয়ে বেড়াতেন তিনি। শীর্ষ দলীয় নেতাদের সাথেও সখ্যতা ছিল। গত সরকারের সময় তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডিজির ছত্রছায়ায় থেকে তবে তিনি বেশি টাকা বানিয়েছেন।
২০০৯-২০১০ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে অনেক সংখ্যক নিয়োগ দেওয়া হয়। ঐ সময় কয়েক শ মানুষের চাকরি দিয়েছেন তিনি। প্রতি জনের নিকট থেকে নিয়েছেন ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা। অবৈধ পথে আসা এই অর্থ দিয়ে বড় লোক হয়েছেন তিনি এবং ডিজিসহ আরো অসংখ্যক লোককে বড় লোক বানিয়ে দিয়েছেন। অবসরে যাওয়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা কাছে এর সত্যতা স্বীকার করেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন সাবেক পরিচালক জানান, অনিয়ম করে মালেক মেডিক্যালে ভর্তিও করিয়েছেন। অবশ্য টাকার ভাগ যেত মন্ত্রণালয় পর্যন্ত। এসব মালেক-আবজালরা যুগ যুগ ধরে আছেন। তাদের নেপথ্যে আছেন একজন বিতর্কিত ঠিকাদার। যার হাজার হাজার কোটি টাকা রয়েছে দেশে-বিদেশে। ঐ ঠিকাদার ও মালেক-আবজালদের মাধ্যমে স্বাস্থ্য শিক্ষা ব্যুরোতেও শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।
জানা গেছে, তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির নিয়োগ-বদলি বাণিজ্যের পাশাপাশি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগ-বদলিতেও মালেকের বেশ প্রভাব ছিল।একাধিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা মালেকের সিন্ডিকেটে অধিদপ্তরের অফিস সহকারীসহ ছিলেন। তাদের ব্যবহার করেই মূলত অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে নিজের স্বার্থ হাসিল করতেন তারা।
গত ২০ সেপ্টেম্বর দিনগত রাত সোয়া ৩টার দিকে ঢাকার তুরাগ থানাধীন দক্ষিণ কামারপাড়া বামনার টেকের ৪২ নম্বর হাজী কমপ্লেক্স ভবন থেকে জালনোট ও অস্ত্র-গুলিসহ আবদুল মালেক ওরফে ড্রাইভার মালেককে (৬৩) আটক করে র্যাব-১।