Type to search

অপরাধ

ক্যারমের আড়ালে মিনি ক্যাসিনো!

বাইরে ক্যারম বোর্ড আর ভেতরে ক্যাসিনোর আদলে চলতো জুয়া খেলা। এই জুয়ারীদের বেশিরভাগই আবার স্থানীয় নিম্ন আয়ের মানুষ। সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকায় অংশ নেয়া যেতো খেলায়। স্থানীয়দের অনেকে যা আয় করতো তার সঙ্গে আরও টাকা ধার-দেনা করে অংশ নিতো জুয়ার আসরে। এভাবে ঋণ করে জুয়া খেলতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছে অনেকেই। জুয়ার পাশাপাশি মাদকের আসরও বসতো এই মিনি ক্যাসিনোতে।

সারাদেশে চলমান ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মধ্যে ঢাকার আশুলিয়ায় এমনই একটি মিনি ক্যাসিনোর সন্ধান পেয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত শনিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত আশুলিয়ার কাইচাবাড়ি এলাকার ওই মিনি ক্যাসিনোতে (জুয়ার আসর) অভিযান চালিয়ে ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-৪ এর একটি দল। এসময় তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যও জব্দ করা হয়। গতকাল রোববার দুপুরে মিরপুর পাইকপাড়ায় র‌্যাব-৪ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক।

র‌্যাব জানায়, জুয়ারী চক্রের গ্রেফতার ২১ সদস্য হলো- বিল্লাল, জুয়েল, মইদুল ইসলাম, সবুজ মিয়া, শরিফ, লিটন, রবিউল মোল্ল্যা, আবু তালেব, দিয়াজুল ইসলাম, শিপন, আব্দুল আলিম, আজাদুল ইসলাম, সোহেল মোল্ল্যা, আসাদুল ইসলাম, এখলাছ, মঈন মিয়া, মাসুদ রানা, হাবিবুর রহমান, রুবেল মিয়া, ফজলে রাব্বি ও রনি ভূঁইয়া।

এ সময় জুয়ার আসর থেকে প্লেয়িং কার্ডসহ একটি ক্যাসিনো বোর্ড, ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১২ ক্যান বিদেশি বিয়ার, ২২টি মোবাইল ফোন ও নগদ ৩৮ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। র‌্যাব-৪ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. সাজেদুল ইসলাম সজলের নেতৃত্বে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনিছুর রহমান অভিযান পরিচালনা করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, গত দেড় বছর ধরে এই মিনি ক্যাসিনো চলছিল। প্রতি রাতে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকার জুয়া খেলা হতো। জনপ্রতি সর্বনিম্ন ১০০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত খেলতো। রাত যত গভীর হতো ক্যাসিনো আর আসর ততোই জমে উঠত। প্রতিদিন ৩০০ জনের বেশির জুয়াড়ি আসতো। এ বিষয়ে তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান চালিয়ে ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়। শুধু আশুলিয়া নয়, মিরপুরসহ অনেক জায়গায় এমন আরও ক্যাসিনোর সন্ধান পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, আশুলিয়ার ক্যাসিনো ব্যবসার মালিকানায় প্লাবন হোসাইন ও ওমর ফারুক নামে দুজনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। যদিও তাদেরকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে কাদের ছত্রছায়ায় চলতো সেটা এখই বলা মুশকিল। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই সেখানে জুয়া খেলা হয়। কারণ বাইরে ক্যারাম বোর্ড প্রদর্শন করে আড়ালে মিনি ক্যাসিনো কিংবা জুয়ার আসর পরিচালনা করতো তারা।

ক্যাসিনোর বোর্ড আমদানি প্রসঙ্গে র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, মালয়েশিয়া থেকে এই বোর্ড আমদানি করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তবে দেখে মনে হচ্ছে- বোর্ডটি সম্প্রতি আমদানি করা হয়নি। এর আগেও অনেক বড় বড় ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে র‌্যাব। সেখানে সমাজের খুব বড় বড় তথাকথিত গ্যাংস্টারকে আটক করা হয়েছে। তারা কে কীভাবে এই ক্যাসিনো বোর্ড আমদানি করেছে সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যারাই এই বোর্ড আমদানি করুক না কেন খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া গ্রেফতাররা প্রাথমিকভাবে জুয়া খেলায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের বিরুদ্ধে জুয়া আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

Translate »