হিন্দুদের নিরাপত্তাহীনতার মাঝে ভারতকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনার প্রেক্ষাপটে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা নিরাপত্তা নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ব্যক্ত করেছেন।
তারা বলেছেন, এসব ঘটনায় হিন্দুদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে শংকা তৈরি হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কুমিল্লার ঘটনা এবং তার জের ধরে সহিংসতার ঘটনাগুলোর সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
হিন্দুদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও প্রতিনিধিদের সাথে পূজার শুভেচ্ছা জানানোর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা প্রতিবেশী ভারতের উদ্দেশেও হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, তাদেরও সচেতন থাকতে হবে। “সেখানেও (ভারতে) এমন কিছু যেন না করা হয়-যার প্রভাব আমাদের দেশে এসে পড়ে। আর আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত আসে,” শেখ হাসিনা বলেন।
হিন্দু নেতাদের উদ্বেগ
প্রতিবছরের মত এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূর্গাপূজা উপলক্ষে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা বা প্রতিনিধিদের সাথে বৃহস্পতিবার এই শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
তবে এবার প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন।
পূজার অষ্টমীতে কুমিল্লায় একটি পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়া যায় এবং এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় পূজামণ্ডপে হামলা হয়।
সেই প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রীর সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের বক্তব্য ছিল মূলত তাদের নিরাপত্তার প্রশ্নে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত বলেছেন, পূজামণ্ডপে সহিংসতার ঘটনাগুলোর কারণে সারাদেশে হিন্দুদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, সেই পরিস্থিতি তারা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে।
“সংঘবদ্ধ আক্রমণ হয়েছে, সেজন্য আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আস্থার সংকট হচ্ছে এবং ভীতি তৈরি হয়েছে” বলেন মিলন কান্তি দত্ত।
ভারতের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
বিশ্বে জঙ্গি তৎপরতার কথা তুলে ধরে তিনি প্রতিবেশি দেশকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, প্রতিবেশি দেশেও এমন কিছু যাতে না করা হয়, যার প্রভাব এখানে পড়ে।
“সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় তারও একটা প্রভাব এসে পড়ছে। সেব্যাপারে আমাদের নিজেদের দেশ শুধু নয়, আমাদের প্রতিবেশি দেশকেও সজাগ থাকতে হবে” বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভারতের উদ্দেশে তিনি আরও বলেছেন, “প্রতিবেশি ভারত আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় সহযোগিতা করেছে। তাদের কথা আমরা সব সময় কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি।”
“সেখানেও (ভারতে) এমন কিছু যেন না করা হয়-যার প্রভাব আমাদের দেশে এসে পড়ে। আর আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত আসে। সে ব্যাপারে তাদেরকেও একটু সচেতন থাকতে হবে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে হাজীগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি জায়গায় পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটে বুধবার।
কুমিল্লা নিয়ে তদন্ত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও প্রাধান্য পেয়েছে এই পরিস্থিতি।
তিনি জড়িতদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা তুলে ধরেন।
“কুমিল্লায় যে ঘটনা ঘটেছে, ইতিমধ্যেই তা তদন্ত হচ্ছে। ব্যাপকভাবে তদন্ত হচ্ছে এবং অনেক তথ্য আমরা পাচ্ছি” বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি উল্লেখ করেন, “যারা এধরনের ঘটনা ঘটাবে, তাদের আমরা খুজে বের করবই।”
তিনি আরও বলেন, “সে যেই হোক না কেন-যে ধর্মেরই হোক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি
রাজনৈতিক অঙ্গনেও এই ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতারা বিভিন্ন রকম বক্তব্য দিয়েছেন।
সরকারের অনেকেই ঘটনার জন্য বিএনপির দিকে আঙুল তুলেছেন।
আবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সহ বিভিন্ন ইস্যু থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে সরকারের ইঙ্গিতে এসব ঘটনা ঘটতে পারে।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ সালের পর থেকে বিএনপি জামায়াত ধর্মের নামে বিভক্তি শুরু করেছে।
সর্বোচ্চ সতর্কতা
এদিকে, পূজা উদযাপন পরিষদ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা গত ২৪ ঘন্টায় আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা করে তাদের উদ্বেগ তুলে ধরেছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মি: খান বৃহস্পতিবার মন্ত্রী পরিষদ বিভাগের সচিবসহ কয়েকজন সচিব এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধানদের সাথে বৈঠক করেছেন।
তিনি বলেছেন, সহিংসতা এবং ফেসবুক সহ সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং তারা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
“যারা এধরনের অপচেষ্টা করবেন বা করে যাচ্ছেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনে আওতায় আনা হবে” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা বলেছেন, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও তারা যে প্রতিশ্রুতি পেলেন, তাতে ঘটনাগুলোর ষুষ্ঠু তদন্ত এবং দ্রুত বিচার হবে সেটা তারা আশা করছেন।-বিবিসি বাংলা
এবিসিবি/এমআই