Type to search

Lead Story অপরাধ আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ রাজনীতি স্বাস্থ্য

পুতুলের অনিয়মের সত্যতা মিলছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক পরিচালকের পদ পেতে অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ অনুসন্ধানে নেমে এরই মধ্যে সত্যতাও পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। শুধু তাই নয়, এক অভিযোগের খোঁজে নেমে আরও অনিয়মের তথ্যও পেয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। দুদকের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র মানবজমিনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে বাংলাদেশের মনোনয়নের ভিত্তিতে পদায়নের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। আর এই কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুদকের সূত্র বলছে, বিভিন্ন দেশকে নানা প্রকল্পের সুবিধা দিয়ে সেসব দেশের ভোট আদায় করেছেন। যা ডব্লিউএইচও’র পদটি পেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।

দুদকের মহাপরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, একটি অনুসন্ধান করতে গিয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিষয়ে আরও অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। এ নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমরা স্বাস্থ্য সেবা বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছি। সেই চিঠির আলোকে তাদের জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের বিষয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্র আরও জানায়, ২০২৩ সালের ৩০শে অক্টোবর থেকে ২রা নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের নয়াদিল্লিতে ডব্লিউএইচও’র ৭৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে কোনো প্রক্রিয়া ও যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়াই সফরসঙ্গী করা হয় সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে। সেক্ষেত্রে প্রার্থী হিসেবে তার যোগ্যতাও ছিল না বলে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। দুদক বলছে, শুধুমাত্র পুতুলকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পদ পাইয়ে দিতেই ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় অর্থের ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। দুদক অনুসন্ধান দলের তথ্যমতে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে মনোনয়নকালে একজন কানাডিয়ান পাসপোর্টধারী নাগরিকও ছিলেন। যা এই পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধা রয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ‘সূচনা ফাউন্ডেশন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক উপঢৌকন আদায় ও অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগের আওতায় অটিস্টিক সেলকে ব্যবহার করে ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে নিজে লাভবান হয়েছেন। শুধু তাই নয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ওপর প্রভাব বিস্তার করে ওই ফাউন্ডেশনের নামে প্রাপ্য অর্থ করমুক্ত করান পুতুল। ফলে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি হয়েছে বলেও জানিয়েছে অনুসন্ধান সূত্র।

এসব অনিয়মের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের জন্য ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। গত ২২শে জানুয়ারি সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমীনের স্বাক্ষরে সেই চিঠি স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়। চিঠিতে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবকে জরুরি ভিত্তিতে উত্তর জানাতে বলা হয়। এ ছাড়া ওই চিঠিটি ডব্লিউএইচও’র অতিরিক্ত সচিবের কাছেও জরুরিভাবে পেশ করতে অনুরোধ করা হয়।

এদিকে গতকাল রোববার সংবাদ সম্মেলনকালে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেনের কাছে পুতুলের অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় পদ পাওয়ার অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান চলমান। অনুসন্ধান দল এরই মধ্যে বেশ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছে। যা নিয়ে তারা শিগগিরই একটি প্রতিবেদন দেবে। তারপরই কমিশনের আইন ও বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গত ১২ই জানুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে পূর্বাচলে ৬০ কাঠা প্লট বরাদ্দ নেয়ার প্রমাণ পাওয়ায় মামলা করে দুদক। মূল অভিযোগে রাজনৈতিক বিবেচনায় সরকারের বিশেষ ক্ষমতাবলে শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে নিজের ও ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, বোন শেখ রেহানা, বোনের ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপান্তির নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোড থেকে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের অভিযোগ ছিল। একই অভিযোগে ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাজউক থেকে প্লট গ্রহণের অভিযোগে পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে গত ১৪ই জানুয়ারি পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করে দুদক।

-মানবজমিন

Translate »