ঢাকায় ইতালি দূতাবাসে ভিসায় দুর্নীতি, স্টাফ আটক

ঘুষের বিনিময়ে ভিসা দেয়ার অভিযোগে বাংলাদেশে অবস্থিত ইতালির দূতাবাসের স্টাফকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন ব্রাসেলস সিগন্যাল জানায়, রোমে পাবলিক প্রসিকিউটরের অফিস এই কেলেঙ্কারি উদঘাটন করেছে। তাতে দেখা গেছে ঘুষের বিনিময়ে অবৈধ উপায়ে ভিসা দিয়ে পাচারের সঙ্গে যুক্ত এই দূতাবাসের স্টাফ। একজন স্টাফ সম্প্রতি ব্রাদার্স অব ইতালি (এফডিআই) পার্টির একজন এমপি ও ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য আঁদ্রে ডি গুসেপিকে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতে তিনি সফল হননি। এ থেকেই দুর্নীতির এ বিষয়টি সামনে চলে আসে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ওই স্টাফ ইতালিতে প্রতিজন অভিবাসীকে সফলভাবে প্রবেশ করাতে পারলে দুই মিলিয়ন ইউরো এবং আয়ের একটি পার্সেন্টেজ প্রস্তাব করেছিলেন। ওই ঘুষ গ্রহণ করার পরিবর্তে ডি গসেপি বিষয়টি দুর্নীতি বিষয়ক প্রসিকিউটরদের নজরে আনেন। অভিযোগ আছে, অবৈধভাবে কাজের জন্য ভিসা বিক্রির সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশের একজন উদ্যোক্তা ও রোমে রেস্তোরাঁর মালিক। বাংলাদেশ থেকে অভিবাসীদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নেয়ার সঙ্গে তার যোগসূত্র আছে। তার এই কাজের সঙ্গে যুক্ত ঢাকায় ইতালি কন্সুলার অফিসের তিনজন কর্মকর্তা। তারা ঘুষ দাবি করেন নগদ অর্থে, উচ্চ পর্যায়ের ইলেকট্রক্সি, বিলাসবহুল ঘড়ি এমনকি দুবাই সফরে সব রকম খরচ বহন করা থেকে শুরু করে বিমানের টিকেট, বন্ধুদের প্রিয় জিনিসের পাওনা পরিশোধে। প্রসিকিউটররা বলেন, সন্দেহজনক এসব ব্যক্তি ভিসার বিনিময়ে অভিবাসীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করেছে। তাদেরকে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। তারা আরো বলেন, যে কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভিসা দেয়া হচ্ছে তা নিশ্চিত না হয়েই বাংলাদেশি ভিসা গ্রহীতারা ১৫ হাজার ইউরো পর্যন্ত শোধ করেন। অনেক ক্ষেত্রে অস্তিত্ব নেই এমন কোম্পানির নাম ব্যবহার করে ভিসার জন্য আবেদন করা হয়। বিষয়টি রোমের অভিবাসন বিষয়ক ডেস্কে চেকের অভাবে সম্ভব হয়েছে বলে বলা হয়। কারণ, ভিসা আবেদন যাচাইয়ের জন্য সেখানে কম্পিউটার সিস্টেম প্রয়োজন হয় না। এ কারণে ভুয়া বা নকল ডকুমেন্ট প্রদর্শনের সুযোগ পায় অসাধু চক্র। এই প্রতারণা প্রাথমিকভাবে চালানো হয় ঢাকায় ইতালির দূতাবাসের মাধ্যমে। এ বিষয়টি তদন্ত করে রোমের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। তারা ভিসা ক্লিয়ারেন্স দেয়ার বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেন। তদন্তে আরো দেখা গেছে, এর সঙ্গে নেপলসেরও যোগসূত্র আছে বলে মনে করা হয়। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দুজন কন্সুলার স্টাফ আছেন। তার একজন হলেন বাংলাদেশে ইতালির দূতাবাসের ভিসা সেক্টরের সাবেক প্রধান এবং দূতাবাসের সাবেক একজন কর্মী। দ্বিতীয়জন ঢাকায় ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বে ছিলেন। এক পর্যায়ে তাকে তুরস্কে বদলি করা হয়েছে। এই দুই কর্মকর্তার ভিসা আবেদন নাড়াচাড়া করার সুযোগ ছিল। ১৯শে ফেব্রুয়ারি এই অভিযোগে কর্মকর্তা সহ মোট ৫ জনকে আটক করেছেন ইতালি কর্তৃপক্ষ। দু’জন সরকারি কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে তারা গৃহবন্দি। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে দুই বাংলাদেশিকে জেলে পাঠানো হয়েছে।