Type to search

অর্থ ও বাণিজ্য বাংলাদেশ

মুহাম্মদ ইউনূস নিরপরাধ হলে আদালতে প্রমাণ করে দেখাক, বলছে গ্রামীণ ব্যাংক

মিথ্যা মামলা দিয়ে হেনস্তা করার যে অভিযোগ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস করেছেন, সেটি সত্য নয় বলে দাবি করেছে গ্রামীণ ব্যাংক। গণমাধ্যমে দেওয়া অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যের প্রতিবাদে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছে প্রতিষ্ঠানটি।

সেখানে গ্রামীণ ব্যাংক দাবি করেছে যে, সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তারা অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

“আমরা যে অভিযোগ দুদকের কাছে দিয়েছি, সেটির একটি শব্দও বানোয়াট নয়। সবকিছু দালিলিক প্রমাণের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছি,” সংবাদ সম্মেলনে বলেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান আইন উপদেষ্টা মাসুদ আখতার।

ঢাকার উচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে ওই সংবাদ সম্মেলনে মি. আখতার আরও বলেছেন যে, অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংক বা এর পরিচালনা পর্ষদের ব্যক্তিগত কোনও বিরোধ নেই।

‘সদস্যদের অভিশাপ’

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা অর্থ আত্মসাতের মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে গিয়ে রোববার আসামিদের কাঠগড়ায় দাঁড়ান অধ্যাপক ইউনূস। এই ঘটনাকে তিনি ‘অভিশপ্ত জীবনের অংশ’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

শুনানি শেষে রোববার তিনি বলেন, “এটা (কাঠগড়া) তো আর সম্মান দেওয়ার জন্য বানানো হয়নি। অপমানের চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বানানো হয়েছে।”

“আজ আমি অভিশপ্ত জীবনের শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছেছি। এই প্রথম আমাকে লোহার খাঁচায় দাঁড়াতে হলো,” আক্ষেপ করে বলেন অধ্যাপক ইউনূস।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ইউনূসের ওই মন্তব্যের বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিক্রিয়া জানতে চান সাংবাদিকরা।

“উনার অভিশাপটা কোথায় জানেন? এই যে গ্রামীণ ব্যাংকের এক কোটি পাঁচ লক্ষ সদস্য, তাদের সঙ্গে তিনি প্রতারণা করেছেন,” সাংবাদিকদের বলেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান আইন উপদেষ্টা মাসুদ আখতার।

“তাদের অর্থকে তিনি আত্মসাৎ করেছেন এবং ব্যক্তিগত অর্থ হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তাদের অভিশাপ তার উপর পড়েছে,” বলেন মি. আখতার।

এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের আগে এক নোবেল বিজয়ীর বিরুদ্ধে আরেক নোবেল বিজয়ীর মামলা করার নজির নেই বলে অধ্যাপক ইউনূস রোববার যে মন্তব্য করেছেন, সে ব্যাপারেও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক।

“আমাকে এমন একজন নোবেল বিজয়ী দেখান যিনি উনার মতো অর্থ এবং ক্ষমতালোভী। যিনি উনার মতো কর্মচারীদের উপর অত্যাচার করেছেন,” সাংবাদিকদের বলেন মি. আখতার।

এসব কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্যদের কাছে অধ্যাপক ইউনূসের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ বলেও মনে করেন তিনি।

“আমার বিশ্বাস উনি এগুলো স্বীকার করবেন এবং ক্ষমা চাইবেন,” সাংবাদিকদের বলেন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রধান আইন উপদেষ্টা মি. আখতার।

অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থআত্মসাতের অভিযোগ তুলেছে গ্রামীণ ব্যাংক
বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থআত্মসাতের অভিযোগ তুলেছে গ্রামীণ ব্যাংক

কী বলছেন অধ্যাপক ইউনূস?

শত কোটি টাকার দুর্নীতিসহ রোববার গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেগুলোর কোনও ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

“একটা বিশেষ গোষ্ঠী বাংলাদেশের, বিশেষ করে আমাদের সরকারের উপর ভর করেছে। তার সাথে আন্তর্জাতিকভাবেও একটা গোষ্ঠী জড়িত আছে,” সোমবার সাংবাদিকদের বলেন মি. মামুন।

“কারণ সারা পৃথিবীর নোবেল বিজয়ীদের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একজন নোবেল বিজয়ী থাকবেন, সেটি তারা মেনে নিতে পারেন না,” বলেন তিনি।

অধ্যাপক ইউনূসের সুনাম নষ্ট করার জন্য পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন আইনজীবী মি. মামুন।

“জোবরা গ্রামে গিয়ে তারা ফিল্মিং করতেছে, এটা করতেছে। এত গায়ে পড়ে লাগলেন কেন একজন ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে?” প্রশ্ন রাখেন মি. মামুন।

এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য একটি গোষ্ঠী আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

“যারা মেনে নিতে পারছেন না, তারাই ফাইন্যান্স করছেন…একদল লোক ড. ইউনূসকে ধ্বংস করতে চাচ্ছে,” সাংবাদিকদের বলেন অধ্যাপক ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

গত রোববার আদালতের শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন অধ্যাপক ইউনূস।

তিনি বলেন, “অভিযোগ থাকতে পারে, কিন্তু রূঢ় ভাষায় আক্রমণ করে অভিযোগ করল, যে অভিযোগের ভিত্তি নেই।”

শ্রম আইন লঙ্ঘনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছয় মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে
 লঙ্ঘনে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ছয় মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে

“ঘটনার মধ্যে কোনো সত্যতা তো নেই, যে জিনিস দিয়ে দিয়েছিলাম, সেটার জন্যই আমাকে অভিযুক্ত করা হলো যে অনেক টাকা মেরে দিয়েছি ইত্যাদি,” সাংবাদিকদের বলেন অধ্যাপক ইউনূস।

গ্রামীণ ব্যাংক অভিযোগ করেছে যে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালে অধ্যাপক ইউনূস অবৈধভাবে তার পরিবারকে নানান আর্থিক সুবিধা দিয়েছেন।

বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, “এ পর্যন্ত যত অভিযোগ এসেছে আমার বিরুদ্ধে এবং আমার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে, এটা আমার মনে কঠিনভাবে দাগ কেটেছে, কষ্ট লেগেছে। কারণ আমার পরিবারকে আক্রমণ করেছে।”

“আমাকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি হয়েছে। কোনো নিস্তার নেই, একটার পর একটা চলছে।”

এরপর অধ্যাপক ইউনূস ২০০৭ সালে বাংলাদেশে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

ঐ সময় তিনি যে রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটির নাম ছিল ‘নাগরিক শক্তি’।

অধ্যাপক ইউনূস যখন রাজনীতিতে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেন, তখন সেটির কড়া সমালোচনা করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনাকে উদ্ধৃত করে তখন বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছিল, যারা রাজনীতিতে নতুন আসে তারা ভয়ঙ্কর হয়। তাদের তৎপরতা সন্দেহ করার মতো।

“তারা জাতির ভালো করার পরিবর্তে আরো বেশি খারাপ করে,” বলেন শেখ হাসিনা।

অবশ্য অধ্যাপক ইউনূস কয়েক মাসের মধ্যেই রাজনীতি থেকে সরে আসেন।

তারপরও তখনকার ওই এক সিদ্ধান্তের জন্য অধ্যাপক ইউনূসের আজকের এই অবস্থা হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

অধ্যাপক ইউনূস নিজেও কাছে স্বীকার করেছেন যে, তার রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।

এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস দাবি করেছেন, তখন সেনা সমর্থিত সরকারের অনুরোধের পরও তিনি সরকার প্রধানের দায়িত্ব নেননি।

পরবর্তীতে সবার অনুরোধে রাজনৈতিক দল খোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই উদ্যোগটি শুরুর পর দশ সপ্তাহের মধ্যেই তিনি সেখান থেকে সরে আসেন।

“দশ সপ্তাহের সেই ঘটনার জন্য সারাজীবন আমাকে খেসারত দিতে হবে?” এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন রাখেন অধ্যাপক ইউনূস।-বিবিসি বাংলা

এবিসিবি/এমআই

Translate »