কোভিড-১৯: এখনই কাটছে না বিদেশ ফেরত প্রবাসী কর্মীদের অনিশ্চয়তা
করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) দ্বিতীয় তরঙ্গের কারণে মহামারী দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে প্রবাসী কর্মীদের করোনা সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। বিদেশে চাকরি হারিয়ে প্রতিদিনই দেশে ফিরছেন কর্মীরা। কোনো দেশে পাঠানো যাচ্ছে না নতুন করে কর্মী।
প্রবাসী কর্মসংস্থানে একটা অনিশ্চিত মহাসংকট সৃষ্টি হয়েছে। সরকার আশা করছে, মহামারীর উন্নতি না হলে পাঠানো সম্ভব হবে না বিদেশে নতুন করে কর্মী। উদ্ভূত সংকটে বিদেশফেরত কর্মীদের দেশে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে সরকার।
মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশি প্রবাসী দেশে ফিরেছেন ২ লাখ ২৫ হাজার। এছাড়া করোনা ভাইরাসের আগে প্রতিমাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কর্মী চাকরি নিয়ে বিদেশ যেতেন। এখন বিদেশ পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না কর্মীদের। ফলে গেল ৭ মাসে বিদেশ যাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ৪ লাখ কর্মী। আবার ছুটিতে দেশে এসেছিলেন যারা, তারাও অনেকে যেতে পারেননি।
এ অবস্থায় করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে। ইউরোপে ইতোমধ্যে ২য় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। রাতে কারফিউ এবং দিনে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে স্পেনে। ইউরোপের দেশগুলোর অবস্থাও একই। মধ্যপ্রাচ্যসহ বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শ্রমবাজারে দ্বিতীয় তরঙ্গ না এলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। শীত মৌসুম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের অবস্থা কোনদিকে যাচ্ছে, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) মহাপরিচালক মো. সামছুল আলম বলেন, ‘বিগত ৭ মাসে ২ লাখের বেশি প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরেছেন। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে দ্রুত সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এছাড়া ফিরে আসা কর্মীদের আবার পাঠানো সম্ভব না হলে দেশে পুনর্বাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।’
সরকার বিদেশ ফেরত প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকারের পর্যাপ্ত তহবিল আছে। এর বাইরে বিদেশ থেকে বিভিন্ন কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে সনদপত্র দেয়া হবে। এর মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীরা ভবিষ্যতে বিদেশে বেশি কাজের সুযোগ পাবেন।’
বিদেশে নতুন কোনো শ্রমবাজার খোঁজা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে বিএমইটি মহাপরিচালক জানান, ‘করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে নতুন বাজার খোঁজা সম্ভব হবে। বিশেষ করে খোলার চেষ্টা করা হচ্ছে মালয়েশিয়ার বাজার। সবকিছুই করোনা পরিস্থিতির উন্নতির ওপর নির্ভর করছে।’
জানতে চাইলে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট ইউনিট (রামরু) প্রধান অধ্যাপক তাসনীম সিদ্দিকী জানান, ‘বর্তমান মহামারীর কারণে আগামী বছরের রেমিটেন্সে প্রভাব পড়বে। বিদেশ থেকে ফিরে আসা প্রবাসী কর্মীদের অনেকের বেতন পাওনা রয়ে গেছে। সেগুলো আদায়ে সরকারের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন’। প্রবাসী কর্মীরা নানাভাবে বিদেশে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।’