Type to search

জাতীয় বাংলাদেশ

‘বাংলাদেশ-ভারত আর বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের মধ্যে কোনও তুলনাই হয় না’

ভারত সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন যদিও চীন বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গী, কিন্তু তাদের সঙ্গে অথবা অন্য যে কোনও দেশের সঙ্গে ঢাকার যা সম্পর্ক, তার সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের কোনও তুলনাই চলে না। ভারতের সঙ্গে তাদের ‘রক্তের সম্পর্ক’।

মি. মাহমুদ বলেছেন তার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কেরর বৈঠকে সীমান্ত হত্যা, তিস্তার জল বন্টন, মিয়ানমার পরিস্থিতির মতো বিষয়গুলি নিয়ে কথা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লিতে ফরেন করেস্পন্ডেন্টস ক্লাব অব সাউথ এশিয়াতে এক প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেন যে তার দেশে ভারত-বিরোধী একটা শ্রেণী তথাকথিত ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা চালায় মাঝে মাঝেই, কিন্তু এই ‘ক্যাম্পেইন’ ক্রমশ ম্রিয়মান হয়ে আসছে।

ভোটের সময়ে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াতে বিঘ্ন ঘটানোর যে চেষ্টা হয়েছিল, তা ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য ‘ভারত পাশে ছিল’, তাই সে দেশের জনগণ, সরকার আর নাগরিক সমাজকে ধন্যবাদ দেন হাছান মাহমুদ।

একটানা চতুর্থবার নির্বাচনে জেতার পর শেখ হাসিনাকে চীনা রাষ্ট্রদূতের অভিনন্দনএকটানা চতুর্থবার নির্বাচনে জেতার পর শেখ হাসিনাকে চীনা রাষ্ট্রদূতের অভিনন্দন

তিনি এও বলেছেন যে সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে প্রভুত উন্নতি করেছে, সেটাও সম্ভব হত না যদি ভারত সহায়তা না দিত বা তাদের সঙ্গে যদি সুসম্পর্ক না থাকত।

দুটো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের তুলনা

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের যে সম্পর্ক, তা কি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়?

এছাড়াও পশ্চিমা দেশগুলির চাপও তো আছে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ব্যাপারে। কীভাবে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়টির মোকাবেলা করবেন?

হাছান মাহমুদ উত্তর দেন, “ভারতের সঙ্গে আমাদের যা সম্পর্ক, তার সঙ্গে অন্য কোনও দেশের সঙ্গে সম্পর্কের কোনও তুলনাই চলে না। কারণ আমাদের মধ্যে রক্তের সম্পর্ক।”

“ভারতের মানুষ, ভারতের সৈন্যরা রক্ত দিয়েছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে ভারত তার সীমান্ত উন্মুক্ত করে দিয়ে ১০ মিলিয়ন মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে।”

“তাই ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্কের সঙ্গে অন্য কোনও দেশের সঙ্গে সম্পর্কের তুলনা করা যায় না,” বলেন মি. মাহমুদ।

আবার চীন যে বাংলাদেশর উন্নয়নের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী, সেটাও উল্লেখ করেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “চীন আমাদের উন্নয়নের সঙ্গী। তারা আমাদের পাশের দেশ না হলেও প্রতিবেশী।“

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ ‘ইন্ডিয়াআউট’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হ্যাশট্যাগ ‘ইন্ডিয়াআউট’

‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা কমে আসছে

এক সাংবাদিক মি. মাহমুদের কাছে জানতে চান ইন্ডিয়া আউট প্রচারণা সম্পর্কে।

জবাবে মি. মাহমুদ বলেন, “আমাদের দলের বদনাম আছে বাংলাদেশে যে আমরা ভারতপন্থী দল। কিন্তু এই ওষুধটা আর কাজ করে না। কিন্তু ভারত-বিরোধী লোকজন তো রয়েছে বাংলাদেশে।”

“আমরা আসলে বাংলাদেশপন্থী দল। ভারত বিরোধী অংশ তো আছে দেশে। তারা এই ইস্যুটাকে তোলে ভোটের সময়। এবং মাঝে মাঝে তারা ভারত বিরোধী মনোভাব চাগিয়ে তুলতে চায় একটা অংশের মানুষের মনে।”

“কিন্তু ভারত বিরোধী মনোভাব ক্রমশ কমে আসছে। একটা বিরাট সংখ্যক মানুষ বোঝেন যে বাংলাদেশের উন্নতির জন্য ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা উচিত। পুরো অঞ্চলের উন্নতির জন্যই প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা উচিত। সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ সেটাই বিশ্বাস করে,” বলছিলেন মি. মাহমুদ।

তার কাছে পাল্টা প্রশ্ন করা হয় যে বাংলাদেশের রাস্তায় ভারত-বিরোধী স্লোগান লেখা হচ্ছে, ভারতীয় সামগ্রী বিক্রি করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। আপনারা কী ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন?

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ একটা মুক্ত সমাজ। বহুত্ববাদী দেশ, গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। যে কেউ যা খুশি বলতেই পারে।”

“তাই ভারত বিরোধী, চীন বিরোধী, যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী, ইউরোপ বিরোধী, পাকিস্তান বিরোধী – নানা স্লোগান লেখা হয় দেওয়ালে, পোস্টারে। কিন্তু এইসব ভারত বিরোধী স্লোগান আগের মতো কাজ করে না আর।“

বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররাবাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিচ্ছেন ভোটাররা

ভোটের সময়ে ‘পাশে থাকার’ জন্য ভারতকে ‘ধন্যবাদ’

মি. মাহমুদ তার প্রারম্ভিক মন্তব্য শুরুই করেছিলেন বাংলাদেশের নির্বাচনের প্রসঙ্গ দিয়ে।

সেকথা বলতে গিয়েই তিনি বলেন, “নির্বাচনের ঠিক পরেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছ থেকে অভিনন্দন বার্তা গিয়েছিল। এ ব্যাপারে ভারতের জনগণ, নাগরিক সমাজ আর সরকারকে আমরা ধন্যবাদ দেব বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পাশে থাকার জন্য, একটা অংশ গণতন্ত্রকে বিঘ্নিত করার যে চেষ্টা করেছিল, তার মোকাবেলা করার জন্য।“

মি. মাহমুদ ভারতকে শুধু যে সাম্প্রতিক নির্বাচনের প্রসঙ্গে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, তা নয়।

তিনি বলেছেন যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়কালে নানা ক্ষেত্রে যে প্রভূত উন্নতি হয়েছে, ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক সব থেকে ভাল হয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে ভারত পাশে দাঁড়িয়ে সহায়তা করায় আর ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের কারণে।

তিস্তা নদী, পশ্চিমবঙ্গেতিস্তা নদী, পশ্চিমবঙ্গে

‘তিস্তা নিয়েও কথা হয়েছে’

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তার বৈঠকে যে তিস্তা নদীর জল বন্টন নিয়ে কথা হয়েছে, সেটাও জানান হাছান মাহমুদ।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের তো কোনও আপত্তি নেই, রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আপত্তি উঠেছিল।”

“এখানে তো নির্বাচন আসছে, পরের মাসেই নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে, ভোট হবে এপ্রিল-মে মাসে। মি. জয়শঙ্করের সঙ্গে কথা হয়েছে যে বিষয়টি নিয়ে আমরা ভোটের পরে আলোচনা করব। আমরা নিশ্চিত যে একটা সমাধান বেরোবে।“

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের পাহারাভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফের পাহারা

সীমান্ত হত্যা

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে তার প্রারম্ভিক মন্তব্যের সময়েই বলেছিলেন দ্বিপাক্ষিক অনেক বিষয় নিয়েই তার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এস জয়শঙ্করের আলোচনা হয়েছে।

পরে তাকে প্রশ্ন করা হয় সীমান্ত হত্যা এবং সপ্তাহ দুয়েক আগে ভারতের সীমানার ভেতরে বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের (বিজিবি) এক সদস্যের হত্যার বিষয়ে।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলোচনায় এ বিষয়টি এসেছিল কি না, সেটাও জানতে চাওয়া হয়।

জবাবে মি. মাহমুদ বলেন,”হ্যা, বিষয়টা নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। মারণাস্ত্র নয়, এমন বন্দুক সীমান্ত রক্ষীদের ব্যবহার করতে পারার সম্ভাবনা কতটা তা নিয়ে আমাদের কথা হয়েছে।”

“ওই হত্যার পরে ভারত ক্ষমা চেয়েছে। আমরা খতিয়ে দেখছি বিষয়টি, আলোচনা করছি। ওই হত্যার ঘটনার তদন্তও তো হচ্ছে”, বলেন মি. মাহমুদ।

শুধু ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নিয়ে নয়, বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার সীমান্তের ঘটনাবলী নিয়েও যে তার সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে, সেটাও এক প্রশ্নের জবাবে জানান হাছান মাহমুদ।-বিবিসি

এবিসিবি/এমআই

Translate »