আলোচিত হেলেনার ৫ পোশাক কারখানা, ১৫টি ফ্ল্যাট

আওয়ামী লীগের মহিলা-বিষয়ক উপ-কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীরের ছিল নিজস্ব সাইবার টিম। বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণার জন্য এই সাইবার টিম কাজ করত ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ফেসবুকে তার বিরুদ্ধে নেতিবাচক মন্তব্য আসলে সাইবার টিম মন্তব্যকারীদের প্রতিহত করত। আবার ফেসবুকে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে কথোপকথন বা ছবি প্রচার করা হতো। নানা ছুতোই হেলেনা ও তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ঐসব ব্যক্তিদের সাথে সম্পর্ক করেন। ধীরে ধীরে সম্পর্ক গভীর করে তিনি তাদের ট্রাপে ফেলেছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, আমলাসহ একাধিক পেশাজীবীর লোকজন। নিজের মানসম্মানের ভয়ে এতো দিন কিছু বলতে পারেননি তারা কাউকে। বিষয়টি চেপে গেছেন তারা। হেলেনা আটকের পর বেশ কয়েক জন ভুক্তভোগী এ ব্যাপারে র্যাব সদর দপ্তরে অভিযোগ দিয়েছেন।
গত শনিবার র্যাব সদর দপ্তরে সঙ্গে কথা বলার সময় আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, ত্রাণ বিতরণের জন্য ‘পল্লী মাতা’ এবং চাকরির সুযোগ করে দেওয়ায় ‘মাদার তেরেসা’ নামের ২টি উপাধি নিয়ে প্রচারের জন্য সাইবার টিমকে কাজে লাগান হেলেনা।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের হেলেনার কাছ থেকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক (অপারেশন্স) শেখ শাহনুর রহমান বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাকে প্রশ্ন করেছেন। হেলেনা অনেক প্রশ্নের উত্তর হাসিমুখে দিয়েছেন তিনি। আবার তিনি অনেক প্রশ্নের উত্তর কৌশলে এড়িয়ে গেছেন। ব্যাংক হিসাবে কত টাকা আছে—এমন প্রশ্নের উত্তরে হেলেনা নীরব ছিলেন। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা ১৯টি চেকবইয়ের সূত্র ধরে পুলিশ ব্যাংক একাউন্টে কত টাকা জামা আছে—তা জানতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে অনুরোধ জানাবে।
এদিকে, র্যাবের মাঠ পর্যায়ের তদন্তকারী কর্মকর্তারা হেলেনা জাহাঙ্গীর ও তার স্বামীর মালিকানাধীন ৫টি গার্মেন্টস কারখানার সন্ধান পেয়েছেন। গার্মেন্টসগুলো হচ্ছে, মিরপুর-১১ নম্বর সেকশনে নিট কনসার্ন ইউনিট এবং হুমায়ারা স্টিকার, জেসি এমব্রডারি, জয় অটো গার্মেন্টস ও প্যাক কনসার্ন প্রতিষ্ঠান চারটি নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত। প্যাক কনসার্ন যৌথ মালিকানাধীন। এছাড়াও আরও ৮টি তৈরি পোশাক কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৩টির জন্য তিনি জমি অধিগ্রহণ করেছেন। চট্টগ্রামের মিরেরসরাইয়ে তার প্যাকেজিং কারখানা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন ছিল। তবে এসব তৈরি পোশাক কারখানা তার স্বামী জাহাঙ্গীর আলম দেখাশোনা করেন। জাহাঙ্গীর আলম ২৫ বছর আগে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। কিন্তু কীভাবে এসব সম্পদের মালিক হয়েছেন—সে ব্যাপারে হেলেনা র্যাবের কাছে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
র্যাবের মাঠ পর্যায়ের তদন্তকারী কর্মকর্তারা তার একক মালিকাধীন ১৫টি ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ৫তলা ভবনে পাঁচটি, গুলশান-২ নম্বরের ৮৬ নম্বর রোডে ৭/বি নম্বর বাড়িতে একটি, গুলশানের-২ নম্বরের ৩৬ নম্বর রোডে ৫ নম্বর বাড়িতে পাঁচটি, গুলশান এভিনিউয়ে একটি, গুলশান নিকেতনে একটি, মিরপুরের ১১ নম্বরের ৬ নম্বর রোডে একটি ও মিরপুরের কাজীপাড়ায় একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এছাড়া র্যাব গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় ১০০ একর জমির সন্ধান পেয়েছে। সেই জমি তিনি আরেক ব্যবসায়ীর সাথে যৌথ মালিকানাধীন হয়ে কিনেছেন। ঐ ব্যবসায়ী গুলশান ক্লাবের সাবেক নির্বাচিত এক বড় নেতার পুত্র। এছাড়াও হেলেনা জাহাঙ্গীর বিভিন্নস্থানে সুবিধা পাওয়ার জন্য নানারকম পরিচয় দিতেন। বিশেষ করে ফিল্ম ক্লাবে তার কর্মকাণ্ডে অনেকটা ত্যক্ত-বিরক্ত ঐ ক্লাবের সদস্যরা।