Type to search

Lead Story আন্তর্জাতিক

মরক্কোয় শক্তিশালী ভূমিকম্প: সাহায্যের জন্য আর্তনাদ

ছয় দশকের বেশি সময়ের মধ্যে মরক্কোয় আঘাত হেনেছে সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্প। ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ২ হাজারের বেশি মানুষ। এই দুর্যোগে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা রোববার খাদ্য ও পানির জন্য হন্যে হয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন। কেউ কেউ তাদের হারানো স্বজনদের খুঁজছেন।

রয়টার্স জানিয়েছে, গত শুক্রবার গভীর রাতে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর অনেকেই খোলা জায়গায় দ্বিতীয় রাত কাটিয়েছেন। ত্রাণ কর্মীরা হাই এটলাসের সবচেয়ে খারাপভাবে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রামগুলোতে পৌঁছানোর জন্য লড়াই করেছেন। কারণ এলাকাগুলো অতিরিক্ত দুর্গম ছিল উদ্ধার কাজের জন্য।

মারাকেশ থেকে প্রায় ৪০ কিমি দক্ষিণে ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছাকাছি একটি গ্রাম মৌলে ব্রাহিম। গ্রামটির বাসিন্দারা বর্ণনা করেছেন কীভাবে তারা তাদের খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদের উদ্ধার করেছেন।

৩৬ বছর বয়সী ইয়াসিন নওমঘর বলেন, ‘আমরা আমাদের বাড়ি হারিয়েছি এবং আমরা স্বজনদেরও হারিয়েছি। বাইরে দুই দিনের মতো ঘুমিয়েছি। খাবার নেই, পানি নেই, বিদ্যুৎও নেই। এখন পর্যন্ত সামান্য সরকারি সাহায্য পেয়েছি। আমরা চাই সরকার আমাদের সাহায্য করুক।’

তার গ্রামে কিছু সাহায্যের প্রচেষ্টা চলছিল। বাসিন্দারা বলেছেন, অন্যত্র বসবাসকারী বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের কাছ থেকে খাদ্য অনুদান আসছে। রোববার সকালে মসজিদে পনির, রুটি ও গরম পানীয় বিতরণ করা হয়।

একটি পুরাতন ফুটবল পিচে অস্থায়ী তাঁবু তৈরি করা হয়েছে। বাসিন্দারা কম্বল মুড়ি দিয়ে বাইরেই রাত কাটিয়েছেন অনেকে। সরকার শনিবার বলেছে, অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দলগুলোকে শক্তিশালী করা, খাবার পানি সরবরাহ এবং খাদ্য, তাঁবু এবং কম্বল বিতরণসহ দুর্যোগ মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

সাহায্যের জন্য স্পেনকে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানিয়েছে মরক্কো। তারা অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠাবে বলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন। ফ্রান্স বলেছে, তারা সাহায্য করতে প্রস্তুত এবং মরক্কোর কাছ থেকে এই ধরনের অনুরোধের জন্য অপেক্ষা করছে।

সহায়তা প্রদানকারী অন্যান্য দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে তুরস্ক। দেশটিতেও ফেব্রুয়ারিতে আঘাত হানা ভূমিকম্পে ৫০ হাজারের বেশি লোক মারা গেছে।

মরক্কোর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী নিহতের সংখ্যা ২ হাজার ১২ জন এবং আর্র ২ হাজার ৫৯ জন আহত। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০৪ জনের অবস্থা গুরুতর।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এই দুর্যোগে তিন লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজের গ্লোবাল ডিরেক্টর অব অপারেশনস ক্যারোলিন হল্ট বলেছেন, ‘জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে দুর্যোগ পরবর্তী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

ঘটনায় তিন দিনের শোক ঘোষণা করেছে মরক্কো এবং রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদ রোববার সারা দেশের মসজিদে নিহতদের জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল মারাকেশের প্রায় ৭২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মরোক্কানদের প্রিয় একটি শহর। বিদেশি পর্যটকদের জন্য শহরটির মধ্যযুগীয় মসজিদ, প্রাসাদ এবং অন্যান্য স্থাপনা আকর্ষণীয়।

মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ অনুসারে, ১৯৬০ সালের পর থেকে এটি মরক্কোর সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্প। ১৯৬০ সালের ভূমিকম্পে আনুমানিক কমপক্ষে ১২ হাজার লোক প্রাণ হারায়।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সভা ৯ অক্টোবর থেকে মারাকেশে অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার পরিকল্পিত বৈঠক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে আইএমএফের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘এই সময়ে আমাদের একমাত্র ফোকাস মরক্কোর জনগণ এবং কর্তৃপক্ষের দিকে যারা এই ট্র্যাজেডি মোকাবিলা করছে।’

এবিসিবি/এমআই

Translate »