ভারতে ক্ষমতাসীনদের প্রশ্রয়ে মুসলিম বিদ্বেষ বাড়ছে

রামনবমী উদযাপনে গত ৩০ মার্চ কয়েক হাজার হিন্দু ধর্মাবলম্বী উত্তর মুম্বাইয়ের রাস্তায় শোভাযাত্রা বের করে। দিনটি তাদের প্রভু রামের জন্মদিন বলে মনে করা হয়। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলা শোভাযাত্রাটি মুসলিমপাড়ার মধ্য দিয়ে যায়। ওই সময় হিন্দু শ্রেষ্ঠত্বের উস্কানিমূলক গান, জাফরান পতাকা নেড়ে উস্কানিমূলকভাবে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দেওয়া হয়। একই সঙ্গে নানাভাবে কটাক্ষ করা হয় মুসিলমদের। এতে প্রতিবাদ করলে শুরু হয় হামলা-ভাঙচুর। শুধু মুম্বাই নয়, পশ্চিমবঙ্গ, বিহারসহ অন্য রাজ্যেও ঘটেছে এমন ঘটনা। মুসলিমদের বিরুদ্ধে এমন নির্যাতন ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে হচ্ছে বলে মনে করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
মুম্বাইয়ের ওই মিছিলে ট্রাকে উচ্চ শব্দের স্পিকারে বাজানো হয় ‘ভারত কা বাচ্চা বাচ্চা, জয় শ্রীরাম বোলেগা’ অর্থাৎ ভারতের প্রতিটি শিশুকে প্রভু রামের জয় বলতে বাধ্য করা হবে। এই ধরনের নানা উস্কানিমূলক কথা বাজানোর সঙ্গে তরুণ থেকে বৃদ্ধ– নানা বয়সী মানুষ গলা মেলায় ও নেচেগেয়ে দিবসটি উদযাপন করে। এ সময় এক বয়স্ক মুসলিম নিরাপত্তা প্রহরী বলেন, তিনি এযাবৎকাল এমন শ্রেষ্ঠত্বের প্রদর্শন দেখেননি।
তিনি বলেন, এভাবে এক ধর্মের উৎসব উদযাপনে অন্য ধর্মকে অবজ্ঞা করা উচিত নয়। বিশেষ করে রমজান মাসে এসব দেখা অপমানজনক। মসজিদের পাশ দিয়ে বা মুসলিম এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এই ধরনের গান-স্লোগান আরও জোরে বাজানো হয়। একই সঙ্গে তারা আক্রমণাত্মকও হয়ে ওঠে।
তাঁর এই কথার সত্যতা মিলল ঘণ্টা দুয়েক পরই। মিছিলটি ধীর হয়ে গেল। সেই সঙ্গে বাড়িয়ে দেওয়া হলো স্পিকারের সাউন্ডের পরিমাণও। কারণ, একটি মসজিদে তখন মাগরিবের নামাজ আদায় করছিলেন মুসলিমরা। ওই সময় কয়েক মুসলিম উচ্চ শব্দের কারণে তাঁদের নামাজে ব্যাঘাত ঘটছে বলে আপত্তি জানালে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায় এবং পাথর ছোড়া হয়।
শোভাযাত্রাটি কট্টরপন্থি দুই হিন্দু সংগঠন, বজরং দল ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) আয়োজনে হয়েছিল। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ধর্মীয় উত্তেজনা উস্কে দেওয়ার সমন্বিত প্রচেষ্টা ছিল এটি।
এদিকে, মুসলিম পুরুষদের ধর্মান্তরিত করতে হিন্দু নারীদের বিয়ের জন্য প্ররোচিত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
গত ২৬ মার্চ মহারাষ্ট্রের জালনার এক মসজিদে চুপচাপ তেলাওয়াতকালে একজনের ওপর হামলা চালায় ৩ ব্যক্তি। এ সময় তাঁকে জয় শ্রীরাম বলতে বাধ্য করা হয়। বলতে না চাইলে তারা বুকে লাথি মারে, তাঁর দাড়ি চেছে দেয়। এখন তিনি হাসপাতালে।
এ ধরনের নির্যাতন অহরহই ঘটছে। গত ৩১ মার্চ বিহারের নালন্দার বিহারশরিফে রামনবমী সহিংসতার সময় হিন্দুত্ববাদীরা আজিজিয়া নামের একটি মাদ্রাসায় আগুন ধরিয়ে দেয়।
পশ্চিমবঙ্গের গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোডে হিন্দু মন্দিরের পাশে মুহম্মদ সাউদ নামের এক মুসলিম ব্যবসায়ীর চায়ের দোকানও ভাঙচুর করা হয় শোভাযাত্রা থেকে। রিষড়া, হাওড়ায়ও এমন ঘটনা ঘটেছে। শোভাযাত্রা আয়োজকদের অভিযোগ, মিছিলে পাথর ছুড়েছে মুসলিমরা। এর পরই শুরু হয় সংঘাত।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বলছে, ভারতের হিন্দু উৎসবগুলো বিজেপি ভোটারদের জড়ো করতে ব্যবহার করছে। ফলে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অংশগ্রহণকারীরা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় উৎসাহিত হচ্ছে। তারা মনে করে যাই করুক, তাদের কিছু হবে না।
এবিসিবি/এমআই