Type to search

আন্তর্জাতিক

পাকিস্তানিদের কী মার্কিন-ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করা উচিত

গাজায় ইসরায়েলি হামলার জেরে বিশ্বব্যাপী ইসরায়েলি ও মার্কিন পণ্য বয়কটের নীরব জোয়ার বইছে। বিশেষ করে মুসলিম প্রধান দেশগুলোতে। নন-মুসলিমরাও মানবতার স্বার্থে ফিলিস্তিনিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। দেশে দেশে করেছে প্রতিবাদ র‌্যালি।

চলমান প্রতিবাদে অংশ নিতে পাকিস্তানিদেরও মার্কিন ও ইসরায়েলি পণ্য বয়কট করা উচিত কিনা এ নিয়ে দেশটির সংবাদ মাধ্যম জিও টিভিতে প্রতিবেদন লিখেছেন সাংবাদিক আফরিন মির্জা।

২৫ বছর বয়সী উসওয়াহ জাহিদ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেসব বিদেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে ইসরায়েল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক রয়েছে তাদের থেকে কখনই কিছু কিনবেন না, তারা যতই ছাড় দেক না কেন। জাহিদ এখন এক মাস ধরে ওয়েস্টার্ন ফুড আউটলেট বর্জন করছেন। তা ছাড়া, তিনি স্কিনকেয়ার, মেকআপ ও অন্যান্য পণ্য কেনা থেকে বিরত রয়েছেন। বিশেষ করে যেসব পণ্য ইসরায়েলকে পৃষ্ঠপোষকতা করে।

গাজায় ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলার পর প্রতিবাদের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে দাঁড়িয়েছে ‘বয়কট’। যার লক্ষ্য ইসরায়েলের মালিকানাধীন ও ইসরায়েলকে সমর্থনকারী সংস্থাগুলোকে পঙ্গু করে দেওয়া। এইভাবে হামলা বন্ধ করতে বাধ্য করা।

গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে পাকিস্তানসহ কয়েক হাজার মানুষ বিভিন্ন দেশে বয়কট আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। পাকিস্তানে কী বয়কট পরিবর্তনের জন্য কার্যকর অনুঘটক হতে পারে, নাকি তারা দেশটির অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে?

বিডিএস আন্দোলন

এই ধরনের প্রচারণার সবচেয়ে সংগঠিত ও ব্যাপক কার্যকরী পদক্ষেপ হলো বয়কট, ডিভেস্টমেন্ট, স্যাংসন (বিডিএস) আন্দোলন যা ২০০৫ সালে ফিলিস্তিনের ১৭০টি সংগঠনের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল।

আন্দোলনটি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে অনুপ্রাণিত। আন্তর্জাতিক আইন যেন মেনে চলে ইসরায়েল তার জন্য চাপ প্রয়োগের উদ্দেশে এই পদক্ষেপ।

এই পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসরায়েলি সরকার বর্জন, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক ও একাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সমর্থনকারী ইসরায়েলি এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা বর্জন, সমর্থনকারী সমস্ত কোম্পানি থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার; বাণিজ্য চুক্তি বন্ধ ও ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য সরকারগুলোকে চাপ দেওয়া ইত্যাদি রয়েছে।

আন্দোলনের ওয়েবসাইটে সংস্থাগুলোর একটি তালিকা রয়েছে যেখানে লোকেদের বয়কট করার আহ্বান জানানো হয়।

বিডিএস আন্দোলন তার ওয়েবসাইটে ইসরায়েলের জন্য তিনটি দাবি তালিকাভুক্ত করেছে – গাজা, পূর্ব জেরুজালেম ও সিরিয়ার গোলান মালভূমিসহ সমস্ত আরব ভূমি দখল ও উপনিবেশের অবসান ঘটানো এবং বর্ণবিদ্বেষী ৭০০ কিলোমিটারের বেশি প্রাচীর ভেঙে ফেলা। ব্যাংক, ইসরায়েলের আরব-ফিলিস্তিনি নাগরিকদের পূর্ণ সমতার মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি ও জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের তাদের বাড়ি ও সম্পত্তিতে ফিরে যাওয়ার অধিকার রক্ষা এবং প্রচার করা।

পাকিস্তানে বয়কট আন্দোলন

পাকিস্তান বিশ্বের ২৭টি দেশের মধ্যে একটি যাদের ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নেই। দেশটি ইসরায়েলকে স্বীকৃতিও দেয় নি। ৭ অক্টোবরের ঘটনার পর দেশটির সামাজিক মাধ্যমে ইসরায়েলকে সমর্থনকারী নির্দিষ্ট কোম্পানির পণ্য বয়কটের আহ্বানের রব উঠে।

ম্যাকডোনাল্ডস নিয়ে একটি পোস্ট রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়। ইসরায়েলে কোম্পানির ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো সেনাদের বিনামূল্যে খাবার ঘোষণা করেছে। ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক নিন্দার জন্ম দেয়।

ম্যাকডোনাল্ডস পাকিস্তান ইধি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ১০ মিলিয়ন রুপি অনুদান ঘোষণা করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। আরও বলেছে, এটি সম্পূর্ণ পাকিস্তানী মালিকানাধীন। কোম্পানিটি পাকিস্তানের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও স্থানীয় ব্যবসার উন্নয়নে নিষ্ঠার সঙ্গে অবদানের রেখে আসছে।’

সোশ্যাল মিডিয়ায় এটাও দাবি করা হয়েছিল যে পাকিস্তানের ওয়ালমার্ট নামে পরিচিত ইমতিয়াজ সুপার স্টোর থেকে কিছু বিদেশি ব্র্যান্ড সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে, কয়েকটি দোকানে গিয়ে দেখা গেছে কিছুই সরানো হয়নি। সেখানে কর্মরত ব্যক্তিরা নিশ্চিত করেছেন যে কোনও পণ্যই কখনও সরানো হয়নি। তবে গত কয়েক সপ্তাহে স্থানীয়ভাবে তৈরি পণ্যের বিক্রি বেড়েছে।

সুপারমার্কেটের ম্যানেজারিয়াল স্টাফদের একটি সূত্র বলেছে, সুপারস্টোরের নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে ও এগুলো বাতিল করা হলে তাদের আর্থিকভাবে ক্ষতি হতে পারে। তাই কোনো পণ্যই সরানো হয়নি।

এবিসিবি/এমআই

Translate »